ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও কমানো যাচ্ছে না তিতাসের সিস্টেম লস

  • আপডেট সময় : ০২:৩৩:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
  • ১৩১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জ্বালানি বিভাগের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও তিতাসের সিস্টেম লস কমানো যাচ্ছে না। বরং তা বেড়েছে। বিশেষত তিতাসের আওতাধীন এলাকায় অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের মাধ্যমে সিস্টেম লস কমানোর চেষ্টা চালানো হয়। সেজন্য গ্যাসের অবৈধ পাইপলাইন ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু গত অর্থবছরে তিতাসের আওতাধীন এলাকায় উল্লেখযোগ্য গ্যাস পাইপলাইন ও অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করা হলেও সিস্টেম লস কমেনি। বরং গত বছর তিতাসের সিস্টেম লস হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। তিতাস দাবি, অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ হলেও পুনরায় তা জোড়া লাগানো হয়। মূলত ওই কারণে মূলত তিতাসের গ্যাস চুরির বিষয়টি কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস ক্রয়-বিক্রয়ে যে পার্থক্য থাকে তা সিস্টেম লস হিসেবে কম-বেশি হয়ে থাকে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিতাসের সিস্টেম লস ছিল ২ শতাংশ। ওই অর্থবছরে তিতাস ৩০৮ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অপচয় করে। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তিতাসের সিস্টেম লস একই থাকলেও অর্থবছরের গ্যাসের অপচয় বেড়ে যায়। গত অর্থবছরে তিতাস অপচয় হিসেবে দেখায় ৩২৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে তিতাসের আওতাধীন এলাকায় যে পরিমাণ অবৈধ পাইপলাইন ও সংযোগ উচ্ছেদ করা হয়, তাতে ওই সময়ে তিতাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নেমে আসার কথা। কিন্তু গ্যাসের অপচয় রোধের চেয়ে সিস্টেম লসে গ্যাসের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।
সূত্র জানায়, সিস্টেম লসের বড় কারণ অবৈধ সংযোগ। ওসব অবৈধ সংযোগ এখন তিতাস গ্যাস ও জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অনেক এলাকায় বৈধ লাইনের পর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবৈধ লাইন ছড়িয়ে পড়েছে। কেবল নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ৬ থেকে ৭ কোটি ঘনফুট গ্যাসের বিল বকেয়া থাকছে। আর চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৫ লাখ ১ হাজার ৫৮টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তার মধ্যে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ওই সময়ে ৯২৬ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস লাইন অপসারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে তিতাসের ছিল ৮৪২ কিলোমিটার। এখনো নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে অনেক অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন থাকলেও তা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র আরো জানায়, গ্যাস ক্রয় ও বিক্রয়ের পর হিসাবে যে পরিমাণ গ্যাসের ঘাটতি থাকে তা সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়। ওই নিয়মে সংস্থাটি সিস্টেম লস দেখিয়ে আসছে। গত ৩ অর্থবছর আগে তিতাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে থাকলেও বর্তমানে তা ২ শতাংশের ওপরে। ওই সময়ে সিস্টেম লস বাবদ ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। আর ওই ৩ অর্থবছরে সংস্থাটির অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বেহাত হয়েছে। ওই গ্যাস কোথায় কীভাবে অপচয় হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব সংস্থাটির কাছে নেই। মূলত স্ক্যাডা সিস্টেম (সিস্টেম লস হিসাব করার পদ্ধতি) না থাকায় আসলে ঠিক কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার ও গ্রহণ করা হচ্ছে তার সঠিক নিরূপণ করার ব্যবস্থা তিতাসের নেই। যে কারণে অনুমান করেই সংস্থাটি বছরের পর বছর সিস্টেম লস দেখিয়ে আসছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে সিস্টেম লসের নামে মূলত তিতাসের কর্মকর্তারাই অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাদের যোগসাজশে মূলত বিপুল পরিমাণ গ্যাস বেহাত হয়ে যায়। কিন্তু তিতাস সংশ্লিষ্টদের দাবি, গ্যাস চুরি, অবৈধ সংযোগ ও তিতাসের আওতাধীন দুর্ঘটনায় গ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে। আর তিতাস গ্যাসে প্রতি বছর সিস্টেম লস জালিয়াতির মাধ্যমে গ্যাস বেহাত হওয়ার বিষয়টি জ্বালানি বিভাগও অবগত। ওই কারণেই জ্বালানি বিভাগ তৎপর হয়ে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও দেখা গেছে। গ্রাহক সংখ্যা ও বিতরণ এলাকা বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান তিতাস। সংস্থাটির আওতায় ২৮ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের কার্যক্রম বিস্তৃত। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে তিতাসের চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান জানান, প্রকৃতপক্ষে তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস কমাতে অবৈধ সংযোগ ও পাইপলাইন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগের তুলনায় সিস্টেম লস কমে আসার কথা। তবে যে পদ্ধতিতে তিতাসের সিস্টেম লসটা দেখানো হয় তা সঠিক নয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও কমানো যাচ্ছে না তিতাসের সিস্টেম লস

আপডেট সময় : ০২:৩৩:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : জ্বালানি বিভাগের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও তিতাসের সিস্টেম লস কমানো যাচ্ছে না। বরং তা বেড়েছে। বিশেষত তিতাসের আওতাধীন এলাকায় অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের মাধ্যমে সিস্টেম লস কমানোর চেষ্টা চালানো হয়। সেজন্য গ্যাসের অবৈধ পাইপলাইন ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু গত অর্থবছরে তিতাসের আওতাধীন এলাকায় উল্লেখযোগ্য গ্যাস পাইপলাইন ও অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করা হলেও সিস্টেম লস কমেনি। বরং গত বছর তিতাসের সিস্টেম লস হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। তিতাস দাবি, অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ হলেও পুনরায় তা জোড়া লাগানো হয়। মূলত ওই কারণে মূলত তিতাসের গ্যাস চুরির বিষয়টি কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস ক্রয়-বিক্রয়ে যে পার্থক্য থাকে তা সিস্টেম লস হিসেবে কম-বেশি হয়ে থাকে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিতাসের সিস্টেম লস ছিল ২ শতাংশ। ওই অর্থবছরে তিতাস ৩০৮ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অপচয় করে। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তিতাসের সিস্টেম লস একই থাকলেও অর্থবছরের গ্যাসের অপচয় বেড়ে যায়। গত অর্থবছরে তিতাস অপচয় হিসেবে দেখায় ৩২৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে তিতাসের আওতাধীন এলাকায় যে পরিমাণ অবৈধ পাইপলাইন ও সংযোগ উচ্ছেদ করা হয়, তাতে ওই সময়ে তিতাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নেমে আসার কথা। কিন্তু গ্যাসের অপচয় রোধের চেয়ে সিস্টেম লসে গ্যাসের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।
সূত্র জানায়, সিস্টেম লসের বড় কারণ অবৈধ সংযোগ। ওসব অবৈধ সংযোগ এখন তিতাস গ্যাস ও জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অনেক এলাকায় বৈধ লাইনের পর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবৈধ লাইন ছড়িয়ে পড়েছে। কেবল নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ৬ থেকে ৭ কোটি ঘনফুট গ্যাসের বিল বকেয়া থাকছে। আর চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৫ লাখ ১ হাজার ৫৮টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তার মধ্যে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ওই সময়ে ৯২৬ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস লাইন অপসারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে তিতাসের ছিল ৮৪২ কিলোমিটার। এখনো নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে অনেক অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন থাকলেও তা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র আরো জানায়, গ্যাস ক্রয় ও বিক্রয়ের পর হিসাবে যে পরিমাণ গ্যাসের ঘাটতি থাকে তা সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়। ওই নিয়মে সংস্থাটি সিস্টেম লস দেখিয়ে আসছে। গত ৩ অর্থবছর আগে তিতাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে থাকলেও বর্তমানে তা ২ শতাংশের ওপরে। ওই সময়ে সিস্টেম লস বাবদ ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। আর ওই ৩ অর্থবছরে সংস্থাটির অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বেহাত হয়েছে। ওই গ্যাস কোথায় কীভাবে অপচয় হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব সংস্থাটির কাছে নেই। মূলত স্ক্যাডা সিস্টেম (সিস্টেম লস হিসাব করার পদ্ধতি) না থাকায় আসলে ঠিক কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার ও গ্রহণ করা হচ্ছে তার সঠিক নিরূপণ করার ব্যবস্থা তিতাসের নেই। যে কারণে অনুমান করেই সংস্থাটি বছরের পর বছর সিস্টেম লস দেখিয়ে আসছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে সিস্টেম লসের নামে মূলত তিতাসের কর্মকর্তারাই অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাদের যোগসাজশে মূলত বিপুল পরিমাণ গ্যাস বেহাত হয়ে যায়। কিন্তু তিতাস সংশ্লিষ্টদের দাবি, গ্যাস চুরি, অবৈধ সংযোগ ও তিতাসের আওতাধীন দুর্ঘটনায় গ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে। আর তিতাস গ্যাসে প্রতি বছর সিস্টেম লস জালিয়াতির মাধ্যমে গ্যাস বেহাত হওয়ার বিষয়টি জ্বালানি বিভাগও অবগত। ওই কারণেই জ্বালানি বিভাগ তৎপর হয়ে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও দেখা গেছে। গ্রাহক সংখ্যা ও বিতরণ এলাকা বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান তিতাস। সংস্থাটির আওতায় ২৮ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের কার্যক্রম বিস্তৃত। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে তিতাসের চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান জানান, প্রকৃতপক্ষে তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস কমাতে অবৈধ সংযোগ ও পাইপলাইন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগের তুলনায় সিস্টেম লস কমে আসার কথা। তবে যে পদ্ধতিতে তিতাসের সিস্টেম লসটা দেখানো হয় তা সঠিক নয়।