নিজস্ব প্রতিবেদক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ইনামুল হক মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ‘হৃদরোগে আক্রান্ত’ হলে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেওয়ার পর সাড়ে ৩টায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম।
ইনামুল হকের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তার স্ত্রী লাকী ইনামও একজন অভিনেত্রী, নির্দেশক। তাদের দুই মেয়ে হৃদি হক ও প্রৈতি হক। তার দুই জামাতা অভিনেতা লিটু আনাম ও সাজু খাদেম।
দুপুরের খাবারের পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেন লিটু আনাম ও অভিনেতা শহিদ আলমগীর।
শহিদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “খাবারের পর তিনি ইজি চেয়ারে বসে ছিলেন; একদম সুস্থ ছিলেন। লাকী ইনাম বাইরে বের হওয়ার সময় বিদায় নিতে গিয়ে টের পান, তার কোনো সাড়া শব্দ মিলছে না। আমি একই বিল্ডিংয়ে থাকি। খবর পেয়ে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।”
একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও শিক্ষক ড. ইনামুল হকে মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাট্যাঙ্গনে ইনামুল হকের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আহসান হাবিব নাসিম জানান, হাসপাতাল থেকে সেগুনবাগিচায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের গোসলের প্রক্রিয়া শেষে ইনামুল হকের মরদেহ বেইলি রোডের বাসায় নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে শহিদ বলেন, বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করার জন্য পারিবারিকভাবে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলার সদর উপজেলার মটবী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন ইনামুল হক। ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে নেন পিএইচডি ডিগ্রি।
তিনি দীর্ঘকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। নটর ডেম কলেজে পড়াকালীন ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তখন তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়ে তিনি মঞ্চে প্রথম অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’ নাটকে।
সেই দলের ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে তিনি নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। তিনি দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
মঞ্চনাটকের পাশাপাশি টিভি নাটকে অভিনয় ও নাট্যকার হিসেবেও দেখা গেছে ইনামুল হককে। তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক মুস্তফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। তার লেখা প্রথম নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’ নির্মাণ করেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
১৯৭০ সালের ১৪ ডিসেম্বর লাকী ইনামের সঙ্গে সংসারজীবন শুরু করেন ইনামুল হক। লাকী ইনাম বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।
নাট্যজন ইনামুল হক আর নেই
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ