মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে মাটি খুঁড়ে অষ্টকোণা আকৃতির পঞ্চম বৌদ্ধ স্তূপ পাওয়া গেছে। গত নভেম্বর থেকে এই স্থানে খনন কাজ শুরু হয়। ছয় মাস খনন করার পর এই প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার হয় বলে গবেষণা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে আবিস্কৃত প্রতœতাত্ত্বিক স্থানটি ঘুরে দেখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। পরে নাটেশ্বর গ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাটেশ্বরে ২০১৩ সালে প্রথম ৯০০ থেকে ১২’শ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ প্রাচীন মন্দির ও নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার হয়। এরপর ধাপে ধাপে খননে এলাকাটির মাটির নিচ থেকে প্রাচীন নগরীর রাস্তা, মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ও পিরামিড আকৃতির স্থাপনাসহ বহু প্রাচীন নিদর্শন বেরিয়ে এসেছে। নবম ধাপে এবারের খননে মাটির প্রায় ১৪ ফুট নিচ থেকে আবিষ্কার হল অষ্টকোণা আকৃতির স্তূপ ও ধর্মচক্র। দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ এই স্থাপনা বৌদ্ধ ধর্মের অষ্টাঙ্গিক মার্গক (গৌতম বুদ্ধ দ্বারা বর্ণিত দুঃখ নিরোধ মার্গ বা দুঃখ নিরসনের উপায়) নির্দেশ করে। এর আগের চারটিসহ এ নিয়ে নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত অষ্টকোণাকৃতির স্থাপনার সংখ্যা পাঁচে দাঁড়াল। নতুন এই আবিষ্কার দেখতে ইতোমধ্যে স্থানীয়রা ভিড় করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাঁচ মিটার মাটির নিচে প্রথমে আকর্ষণীয় এই পুরাকীর্তির প্রাচীন ইটের দেয়ালের কিছু অংশ বেরিয়ে আসে। এরপর সীমানা প্রাচীর; যার ভেতরেই রয়েছে স্তূপ হলঘর-ম-প। দেয়ালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কারুকার্য এখনও খুব মসৃণ রয়েছে। পাতলা আর লম্বা ইট নিয়ে খাঁজে খাঁজে সাজিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। বর্গাকার ভিত্তির ওপর খাড়াভাবে ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে গরুর গাড়ির চাকার মতো ‘ধর্মচক্র’।
এই ধর্মচক্র হিন্দু, জৈন ও বিশেষ করে বৌদ্ধধর্মে পরিচিত। এর অনেকগুলো স্পোক বা স্তর থাকে যেগুলো ‘ধর্মের প্রতীক’ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সচিব আবুল মনসুর বলেন, “আবিষ্কৃত প্রতœসম্পদগুলো ৭৮০ থেকে ১ হাজার ২২৩ খ্রিষ্টাব্দ সময়ের। প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে চলছে এই প্রতœতাত্ত্বিক নির্দশন আবিষ্কারের খননকাজ। ঐতিহাসিক এই নির্দশনগুলো সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ও এই প্রকল্পের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “প্রাচীন সভ্যতার জনপদ বিক্রমপুরের এই প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন বাংলাদেশের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এর ফলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচিত হচ্ছে।”
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব রতন চন্দ্র প-িত, টঙ্গীবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা তানজিন অন্তরা, প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায়, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হালদার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
নাটেশ্বরে মিললো পঞ্চম বৌদ্ধ স্তূপ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ