ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল সেবা যে কারণে ব্যর্থ

  • আপডেট সময় : ০৯:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : নম্বর না বদলে অপারেটর বদল তথা এমএনপি সেবা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টি মোবাইল ব্যবহারকারীদের সেভাবে আকর্ষণ করতে পারেনি। ফলে এই সেবা চালুর শুরুর দিকে (২০১৮ সালের ১ অক্টোবর এমএনপি চালু হয়) মাসে ৫০ হাজার নম্বর পোর্টিং (অন্য অপারেটরে যাওয়া) হলেও বর্তমানে তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে। যদিও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা ছিল— সময় যত গড়াবে, পোর্টিং সংখ্যা শুরুর চেয়ে কয়েকগুণ বাড়বে।
জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে গ্রাহকরা এমএনপি সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এরমধ্যে প্রধান সমস্যা হলো— অপারেটর বদল হলে গ্রাহকের মোবাইলে কোনও ধরনের এসএমএস না আসা। ফলে গ্রাহক সেবা না পেয়ে বিব্রত হয়ে এমএনপি সেবা নিতে আগ্রহী হন না। হলেও নির্দিষ্ট সময় শেষে আগের অপারেটরে ফিরে যান। এছাড়া অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে— পোস্ট পেইড বিল বকেয়া থাকা, মোবাইলে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট নম্বরটি ৯০ দিন বন্ধ থাকলে, গ্রাহকের এমএনপি আবেদন প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। এধরনের বিভিন্ন সমস্যার কারণে গ্রাহক আশঙ্কাজনক হারে কমছে এমএনপি সেবায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকে ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরগুলোর সেবার মান (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) ভালো না হওয়ায় এমএনপি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। গ্রাহক কার কাছে যাবে, সব অপারেটরেরই এক সমস্যা— সেবার মান খারাপ। ভয়েস, ডেটা দুটোতেই। কলড্রপ, নেটওয়ার্ক না থাকা ইত্যাদি তো এখন খুবই কমন ঘটনা।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘গ্রামীণফোনের সেবার মান খারাপ। গ্রাহক তাহলে কোথায় যাবে, হয় রবিতে নয়তো বাংলালিংকে। কিন্তু তাদের অবস্থাতো আরও খারাপ। তাহলে মোবাইল ব্যবহারকারী কোন অপারেটর বেছে নেবেন। যেহেতু কারোরই সেবার মান ভালো নয়, ফলে গ্রাহক পুরনো অপারেটরেই থেকে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মোবাইল অপারেটর রবি বড় বিকল্প হতে পারতো, কিন্তু তাদের অবস্থা বর্তমানে আরও খারাপ। এসব কারণে এমএনপি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।’
তিনি মনে করেন, মূল সমস্যা মোবাইল সেবার মানে। আসলে অপারেটরগুলোর সেবার মান ভালো না হওয়ায় গ্রাহক কোথাও যেতে পারছেন না। নেটওয়ার্ক খারাপ থাকায় অপারেটর বেছে নিতে সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমএনপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডির প্রধান নির্বাহী কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘কিছু সমস্যা এই খাতে রয়েছে। সেসব উত্তরণের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ শিগগিরই সেসব সুরাহা হবে বেল তিনি মনে করেন। তবে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমএনপি সেবা চালুর শুরুর দিকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার নম্বর পোর্টিং হতো। বর্তমানে তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে। এটা উদ্বেগজনক। এই হার এখন ৫ ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। এই খাতে তাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। সমস্যার উত্তরণ না হলে তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
মোহাম্মদ জুলফিকার জানান, বিটিআরসি ইনফোজিলিয়নকে একটি সেন্ট্রাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে বলেছে। ৫ জুনের মধ্যে সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তৈরি করে দেবে ইনফোজিলিয়ন। আগামী ৭ জুন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিটিআরসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠক থেকেই এ খাতের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের হবে বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি এ বিষয়ে এরই মধ্যে ইনফোজিলিয়নের প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করেছে। সেই নির্দেশনা মেনেই কাজ হচ্ছে।’ তিনি যোগ করেন, এসএমএস (সাধারণ এসএমএস, ওটিপি, প্রমোশনাল ইত্যাদি) সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হলেই আগের চেয়ে বেশি নম্বর পোর্টিং হবে। তিনি আরও জানান, এমএনপি ইনকমপ্লিট একটি সেবা। প্রতিনিয়ত এখানে নতুন নতুন সেবা যুক্ত হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন সিস্টেম নিয়ে রেডি।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এই সেবার শুরুর দিকে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতো। সেই প্রতিবেদনে দেখা যেতো— কোন অপারেটর বেশি ছেড়েছে মোবাইল গ্রাহকরা। দীর্ঘদিন হলো বিটিআরসি এমএনপি নিয়ে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করে না। ফলে সর্বশেষ আপডেটও জানা যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএনপি ব্যর্থ হওয়ার পেছনে মোবাইল ফোন অপারেটরদেরও দায় কোনও অংশে কম নয়। মোবাইল অপারেটররা চায় না তার গ্রাহক চলে যাক। ফলে যেকোনও কৌশলেই হোক অপারেটরটি তার গ্রাহককে ধরে রাখতে চায়। এজন্য কোনও একটা কারণ দেখিয়ে গ্রাহকের আবেদন বাতিল করে দেয়, এমন অভিযোগ আছে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে। এই হার ৩০ শতাংশ বলে জানা গেছে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল সেবা যে কারণে ব্যর্থ

আপডেট সময় : ০৯:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২

প্রযুক্তি ডেস্ক : নম্বর না বদলে অপারেটর বদল তথা এমএনপি সেবা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টি মোবাইল ব্যবহারকারীদের সেভাবে আকর্ষণ করতে পারেনি। ফলে এই সেবা চালুর শুরুর দিকে (২০১৮ সালের ১ অক্টোবর এমএনপি চালু হয়) মাসে ৫০ হাজার নম্বর পোর্টিং (অন্য অপারেটরে যাওয়া) হলেও বর্তমানে তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে। যদিও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা ছিল— সময় যত গড়াবে, পোর্টিং সংখ্যা শুরুর চেয়ে কয়েকগুণ বাড়বে।
জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে গ্রাহকরা এমএনপি সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এরমধ্যে প্রধান সমস্যা হলো— অপারেটর বদল হলে গ্রাহকের মোবাইলে কোনও ধরনের এসএমএস না আসা। ফলে গ্রাহক সেবা না পেয়ে বিব্রত হয়ে এমএনপি সেবা নিতে আগ্রহী হন না। হলেও নির্দিষ্ট সময় শেষে আগের অপারেটরে ফিরে যান। এছাড়া অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে— পোস্ট পেইড বিল বকেয়া থাকা, মোবাইলে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট নম্বরটি ৯০ দিন বন্ধ থাকলে, গ্রাহকের এমএনপি আবেদন প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। এধরনের বিভিন্ন সমস্যার কারণে গ্রাহক আশঙ্কাজনক হারে কমছে এমএনপি সেবায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকে ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরগুলোর সেবার মান (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) ভালো না হওয়ায় এমএনপি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। গ্রাহক কার কাছে যাবে, সব অপারেটরেরই এক সমস্যা— সেবার মান খারাপ। ভয়েস, ডেটা দুটোতেই। কলড্রপ, নেটওয়ার্ক না থাকা ইত্যাদি তো এখন খুবই কমন ঘটনা।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘গ্রামীণফোনের সেবার মান খারাপ। গ্রাহক তাহলে কোথায় যাবে, হয় রবিতে নয়তো বাংলালিংকে। কিন্তু তাদের অবস্থাতো আরও খারাপ। তাহলে মোবাইল ব্যবহারকারী কোন অপারেটর বেছে নেবেন। যেহেতু কারোরই সেবার মান ভালো নয়, ফলে গ্রাহক পুরনো অপারেটরেই থেকে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মোবাইল অপারেটর রবি বড় বিকল্প হতে পারতো, কিন্তু তাদের অবস্থা বর্তমানে আরও খারাপ। এসব কারণে এমএনপি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।’
তিনি মনে করেন, মূল সমস্যা মোবাইল সেবার মানে। আসলে অপারেটরগুলোর সেবার মান ভালো না হওয়ায় গ্রাহক কোথাও যেতে পারছেন না। নেটওয়ার্ক খারাপ থাকায় অপারেটর বেছে নিতে সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমএনপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডির প্রধান নির্বাহী কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘কিছু সমস্যা এই খাতে রয়েছে। সেসব উত্তরণের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ শিগগিরই সেসব সুরাহা হবে বেল তিনি মনে করেন। তবে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমএনপি সেবা চালুর শুরুর দিকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার নম্বর পোর্টিং হতো। বর্তমানে তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে। এটা উদ্বেগজনক। এই হার এখন ৫ ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। এই খাতে তাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। সমস্যার উত্তরণ না হলে তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
মোহাম্মদ জুলফিকার জানান, বিটিআরসি ইনফোজিলিয়নকে একটি সেন্ট্রাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে বলেছে। ৫ জুনের মধ্যে সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তৈরি করে দেবে ইনফোজিলিয়ন। আগামী ৭ জুন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিটিআরসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠক থেকেই এ খাতের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের হবে বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি এ বিষয়ে এরই মধ্যে ইনফোজিলিয়নের প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করেছে। সেই নির্দেশনা মেনেই কাজ হচ্ছে।’ তিনি যোগ করেন, এসএমএস (সাধারণ এসএমএস, ওটিপি, প্রমোশনাল ইত্যাদি) সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হলেই আগের চেয়ে বেশি নম্বর পোর্টিং হবে। তিনি আরও জানান, এমএনপি ইনকমপ্লিট একটি সেবা। প্রতিনিয়ত এখানে নতুন নতুন সেবা যুক্ত হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন সিস্টেম নিয়ে রেডি।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এই সেবার শুরুর দিকে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতো। সেই প্রতিবেদনে দেখা যেতো— কোন অপারেটর বেশি ছেড়েছে মোবাইল গ্রাহকরা। দীর্ঘদিন হলো বিটিআরসি এমএনপি নিয়ে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করে না। ফলে সর্বশেষ আপডেটও জানা যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএনপি ব্যর্থ হওয়ার পেছনে মোবাইল ফোন অপারেটরদেরও দায় কোনও অংশে কম নয়। মোবাইল অপারেটররা চায় না তার গ্রাহক চলে যাক। ফলে যেকোনও কৌশলেই হোক অপারেটরটি তার গ্রাহককে ধরে রাখতে চায়। এজন্য কোনও একটা কারণ দেখিয়ে গ্রাহকের আবেদন বাতিল করে দেয়, এমন অভিযোগ আছে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে। এই হার ৩০ শতাংশ বলে জানা গেছে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।