নিজস্ব প্রতিবেদক : সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ‘সদা প্রস্তুত’ থাকার পাশপাশি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার ‘সমান অংশীদার’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে গতকাল রোববার বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের সমাপনীতে রাষ্ট্রপতি প্যারেড অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নবীন ক্যাডেটদের হাতে দায়িত্ব পড়ল, যে তোমরা দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। এ দায়িত্ব পালনে সব সময় সজাগ থাকতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে একমাত্র পেশাগত ব্রত।
“সাথে সাথে এদেশের সন্তান হিসেবে এদেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে। জনগণের সকল প্রয়োজনে তোমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে।”
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের যে কোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। কাজেই এই স্বাধীনতার চেতনাকে সবসময় সমুন্নত রাখতে হবে। এই আদর্শ নিয়েই নিজেদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।”
দেশ-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সব মহলে প্রশংসা অর্জন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যখন বিদেশে যাই, সবাই যখন প্রশংসা করে, গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়। এই সুনাম ধরে রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পররাষ্ট্রনীতি দিয়েছেন- ’সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়’- বাংলাদেশ সেই পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে।
“কিন্তু কখনো যদি আমরা কোনো বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হই, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতাও আমরা ইতোমধ্যে অর্জন করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি অত্যাধুনিক,আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। “আমাদের ক্যাডেটরা যাতে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা পায় এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, সেই ধরনের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা আমরা তৈরি করেছি এবং বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।ৃ জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল এই মিলিটারি একাডেমি এক সময় সারাবিশ্বের নজর কাড়বে। আজকে আমাদের মিলিটারি একাডেমি সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।”
কমিশনপ্রাপ্তির এই দিনটি যে নবীন ক্যাডেটদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। স্বশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে। অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল সরঞ্জাম ও যুদ্ধাস্ত্র যুক্ত করা হয়েছে।
“আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নতি হয়েছে। সেই সাথে সাথে আমরা এখানে আমাদের নারীদেরও সম্পৃক্ত করেছি। সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে প্রথম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে মহিলা অফিসার নিয়োগ হয় এবং ২০১৩ সালে মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন জন মহিলা অফিসার ‘কন্টিনজেন্ট কমান্ডার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে নিহত নিজের তিন ছোট ভাইয়ের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। “আমার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র টাইগার তথা প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন গর্বিত অফিসার হিসেবে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আমার আরেক ছোট ভাই শহীদ লেফট্যানেন্ট শেখ জামাল। সেও মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে আসে, এরপর ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডর্হার্স্ট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং সেনাবাহিনীর জুনিয়র টাইগার তথা দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিল। “আর সব থেকে ছোট ১০ বছরের রাসেল। তার জীবনেও একটা স্বপ্ন ছিল। বড় হলে মিলিটারি অফিসার হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।” সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নবীন সেনা কর্মকর্তাদের মানুষের কান্না-হাসির অংশীদার হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ