ঢাকা ১১:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

নববর্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

  • আপডেট সময় : ১২:১১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা :বৈশাখের আমেজে নববর্ষকে ঘিরে দেশের অর্থনীতিকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সবাই। সূত্র জানায়, সারাদেশে নববর্ষ পালনের জন্য ব্যবসায়ীদের গত দুবছরের চেয়ে এ বছর ২০ শতাংশ বেশি প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু গত দুই বছরের সঙ্গে এ বছরেরও একটা লম্বা সময় মহামারির কবলে থাকায় সেই প্রস্তুতি পুরোপুরি কাজে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এবং বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরাও। তবে গত দুই মাস ধরে মহামারির প্রকোপ কমে আসায় আবারও ব্যবায়ীরা কিছু করার চেষ্টা করছেন। নববর্ষকে ঘিরে মাটির হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে পোশাক, মুড়িমুড়কি, নাড়ু, মিষ্টি, ইলিশের বাজারসহ সবখানেই সাজ সাজ রব পড়ে যায়। এসব আয়োজন ঘিরে চাঙা হয়ে ওঠে গ্রামীণ অর্থনীতি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুবছর ছিল সবই মলিন। এ বছর অনেকটাই বদলে গেছে বাংলার গত দুবছরের সেই চিরচেনা চিত্র। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’— এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিফলন ঘটে নববর্ষের এই উৎসবের। এতে নানা জিনিসের চাহিদা বাড়ে। এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে হয় বাণিজ্য। জাতীয় অর্থনীতিতে এর শতভাগই যুক্ত হয়। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিবছর বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার দেশীয় বাঁশ, বেত, কাঠের তৈরি জিনিস, মাটির তৈজসপত্র, মাটির খেলনা, প্লাস্টিকের খেলনা, বিভিন্ন ধরনের মুড়িমুড়কি, নাড়ু বিক্রি হয়। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ইলিশের বেচাকেনা হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার। নববর্ষের দিন মিষ্টি অপরিহার্য বিধায় মিষ্টির দোকানগুলোয় বিক্রির পরিমাণ প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার। বাংলা নববর্ষে কেবল পোশাকই বিক্রি হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার। সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে অর্থনীতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু গত দুবছর বাংলা নববর্ষকে ঘিরে থাকা অর্থনীতির পরিমাণ ছিল প্রায় শূন্য। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ে কয়েক গুণ। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণের অর্থের জোগান রাখে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও লেনদেন বাড়ে। করোনার আগের দুই বছর ধরে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সারাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। গত দুবছর কারোনা মহামারি মোকাবিলা করে এ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত দুবছর বর্ষবরণ উৎসব হয়নি। দোকানপাট বন্ধ ছিল। সেটি ছিল অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। এতে হয়তো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ক্ষতি সামলে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। তারা এখন ব্যবসার পাশাপাশি জীবন বাঁচানোর চেষ্টাও করছেন।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলা নববর্ষকেন্দ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মাঝারি উদ্যোক্তারা জড়িত। এসব ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তারা একটা ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। করোনার ক্ষতি কাটাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নির্বাচন করেই তাদের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সব বাধাই এক সময় কেটে যাবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সবাই একযোগে কাজ করছি।’ এ ক্ষতি আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘এবার ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নববর্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

আপডেট সময় : ১২:১১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

বিশেষ সংবাদদাতা :বৈশাখের আমেজে নববর্ষকে ঘিরে দেশের অর্থনীতিকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সবাই। সূত্র জানায়, সারাদেশে নববর্ষ পালনের জন্য ব্যবসায়ীদের গত দুবছরের চেয়ে এ বছর ২০ শতাংশ বেশি প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু গত দুই বছরের সঙ্গে এ বছরেরও একটা লম্বা সময় মহামারির কবলে থাকায় সেই প্রস্তুতি পুরোপুরি কাজে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এবং বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরাও। তবে গত দুই মাস ধরে মহামারির প্রকোপ কমে আসায় আবারও ব্যবায়ীরা কিছু করার চেষ্টা করছেন। নববর্ষকে ঘিরে মাটির হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে পোশাক, মুড়িমুড়কি, নাড়ু, মিষ্টি, ইলিশের বাজারসহ সবখানেই সাজ সাজ রব পড়ে যায়। এসব আয়োজন ঘিরে চাঙা হয়ে ওঠে গ্রামীণ অর্থনীতি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুবছর ছিল সবই মলিন। এ বছর অনেকটাই বদলে গেছে বাংলার গত দুবছরের সেই চিরচেনা চিত্র। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’— এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিফলন ঘটে নববর্ষের এই উৎসবের। এতে নানা জিনিসের চাহিদা বাড়ে। এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে হয় বাণিজ্য। জাতীয় অর্থনীতিতে এর শতভাগই যুক্ত হয়। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিবছর বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার দেশীয় বাঁশ, বেত, কাঠের তৈরি জিনিস, মাটির তৈজসপত্র, মাটির খেলনা, প্লাস্টিকের খেলনা, বিভিন্ন ধরনের মুড়িমুড়কি, নাড়ু বিক্রি হয়। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ইলিশের বেচাকেনা হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার। নববর্ষের দিন মিষ্টি অপরিহার্য বিধায় মিষ্টির দোকানগুলোয় বিক্রির পরিমাণ প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার। বাংলা নববর্ষে কেবল পোশাকই বিক্রি হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার। সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে অর্থনীতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু গত দুবছর বাংলা নববর্ষকে ঘিরে থাকা অর্থনীতির পরিমাণ ছিল প্রায় শূন্য। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ে কয়েক গুণ। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণের অর্থের জোগান রাখে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও লেনদেন বাড়ে। করোনার আগের দুই বছর ধরে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সারাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। গত দুবছর কারোনা মহামারি মোকাবিলা করে এ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত দুবছর বর্ষবরণ উৎসব হয়নি। দোকানপাট বন্ধ ছিল। সেটি ছিল অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। এতে হয়তো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ক্ষতি সামলে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। তারা এখন ব্যবসার পাশাপাশি জীবন বাঁচানোর চেষ্টাও করছেন।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলা নববর্ষকেন্দ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মাঝারি উদ্যোক্তারা জড়িত। এসব ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তারা একটা ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। করোনার ক্ষতি কাটাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নির্বাচন করেই তাদের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সব বাধাই এক সময় কেটে যাবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সবাই একযোগে কাজ করছি।’ এ ক্ষতি আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘এবার ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।’