ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

নবজাতককে ঘিরে বেপরোয়া হিজড়ারা, বাসায় বাসায় হানা

  • আপডেট সময় : ১১:৩৭:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

হানগর প্রতিবেদন : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নবজাতকের জন্ম ঘিরে হিজড়াদের উপদ্রব বেড়েছে। কোনো বাড়িতে শিশু জন্ম হয়েছে খবর পেলেই হানা পড়ছে তাদের। দাবি করছে ইচ্ছামাফিক চাঁদা। না দিলেই তুলে নিয়ে যেতে চায় বাচ্চা। ঘটাচ্ছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
গত বুধবার এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকার পূর্ব রামপুরার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ওসমান গণি। সম্প্রতি তিনি দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন। আর এ খবর পেয়ে বাসায় আসে একদল হিজড়া। তারা এসেই চাঁদা দাবি করে ১০ হাজার টাকা। তবে করোনাকালে বেতন বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়া ওই শিক্ষক তাদের অন্যায় আবদার রাখতে পারেননি। ওসমান গণি যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িতেই বাস করেন ফরহাদ হোসেন। ঘটনার বৃত্তান্ত ফেসবুকে তুলে ধরেছেন ফরহাদ। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গণির বাসায় এসেই হিজড়ারা তুলকালাম শুরু করে। দাবি করে দশ হাজার টাকা চাঁদা। দিতে না পারায় এক পর্যায়ে বাচ্চা নিয়ে যেতে উদ্যত হয় তারা। তবে সেটিও করতে না পেরে যাওয়ার আগে বাড়ির মূল ফটকে ভাংচুর চালায়।’
হিজড়াদের এমন তুলকালামের খবর থানা পুলিশকে জানান বাড়ির মালিক। পরে পুলিশের পরামর্শে সাধারণ ডোয়েরি করেন ভুক্তভোগী পরিবার। বুধবার সন্ধ্যায় সাধারণ ডায়েরিটি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত আব্দুল কুদ্দুস ফকির। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘জিডি হলেও আদালতের নির্দেশনা পেলে কাজ করতে হয়। আদালত থেকে নির্দেশনা এলে এ নিয়ে আমরা এ বিষয়ে কাজ করবো।’
ঢাকায় নবজাতকের জন্ম ঘিরে হিজড়াদের নাচ গান গেয়ে টাকা আদায়ের সংস্কৃতির চল ছিল। তবে সেসময় ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে হিজড়াদের দাবিও থাকতো সামান্য। তবে গত কয়েক বছর ধরে তারা বাড়িঘরে হানা দিয়ে চাঁদা আদায় আর তা না পেলে ভাংচুরসহ অপ্রীতিকর নানা ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ আসে।
হিজড়াদের এমন অপ্রীতিকর আচরণের শিকার হচ্ছেন নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। চাঁদা না দিলে নানা হুমকিধামকি, গালিগালাজ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও বাজে আচরণের মুখোমুখি হতে হয়। অনেকে লোকলজ্জায় নীরবে টাকা দিয়ে রেহাই পেলেও বেশিরভাগ ঘটনায় প্রকাশ্যে আসে না। কেউ আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হলেও খুব বেশি প্রতিকার পান না বলেও অভিযোগ আছে।
যদিও সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে এমন অন্যায় আচারণ বন্ধে হিজড়াদের প্রতি কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও করোনা মহামারির মধ্যে হিজড়াদের বেপরোয়া আচরণ বেড়ে চলেছে বলেই খবর আসছে।
গত ১৬ জুন পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের একটি বাসায় নতুন বাচ্চা জন্মের খবর শুনে হানা দেয় একদল হিজড়া। তারা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নাচার কথা বললে করোনার কথা চিন্তা করে পরিবারটি বাচ্চা দেয়নি। এরপরই শিশুটির মায়ের সঙ্গে অশালীণ আচরণ শুরু করে তারা। একপর্যায়ে ১১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ৫ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পায় ভুক্তভোগী পরিবারটি। একইরকম তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ধানমন্ডির ঝিগাতলার বাসিন্দা নিখিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম বাচ্চা হওয়ায় যখন সবাই আনন্দে ভাসছি, তখন তিন দল হিজড়ারা আমাদের বাসায় ঢুকে রীতিমত ডাকাতি করেছে। তিনবার তাদের চাঁদা দিতে হয়েছে। ফ্রিজের মাছ মাংস নিয়ে গেছে এক গ্রুপ।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নবজাতককে ঘিরে বেপরোয়া হিজড়ারা, বাসায় বাসায় হানা

আপডেট সময় : ১১:৩৭:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১

হানগর প্রতিবেদন : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নবজাতকের জন্ম ঘিরে হিজড়াদের উপদ্রব বেড়েছে। কোনো বাড়িতে শিশু জন্ম হয়েছে খবর পেলেই হানা পড়ছে তাদের। দাবি করছে ইচ্ছামাফিক চাঁদা। না দিলেই তুলে নিয়ে যেতে চায় বাচ্চা। ঘটাচ্ছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
গত বুধবার এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকার পূর্ব রামপুরার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ওসমান গণি। সম্প্রতি তিনি দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন। আর এ খবর পেয়ে বাসায় আসে একদল হিজড়া। তারা এসেই চাঁদা দাবি করে ১০ হাজার টাকা। তবে করোনাকালে বেতন বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে পড়া ওই শিক্ষক তাদের অন্যায় আবদার রাখতে পারেননি। ওসমান গণি যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িতেই বাস করেন ফরহাদ হোসেন। ঘটনার বৃত্তান্ত ফেসবুকে তুলে ধরেছেন ফরহাদ। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গণির বাসায় এসেই হিজড়ারা তুলকালাম শুরু করে। দাবি করে দশ হাজার টাকা চাঁদা। দিতে না পারায় এক পর্যায়ে বাচ্চা নিয়ে যেতে উদ্যত হয় তারা। তবে সেটিও করতে না পেরে যাওয়ার আগে বাড়ির মূল ফটকে ভাংচুর চালায়।’
হিজড়াদের এমন তুলকালামের খবর থানা পুলিশকে জানান বাড়ির মালিক। পরে পুলিশের পরামর্শে সাধারণ ডোয়েরি করেন ভুক্তভোগী পরিবার। বুধবার সন্ধ্যায় সাধারণ ডায়েরিটি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত আব্দুল কুদ্দুস ফকির। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘জিডি হলেও আদালতের নির্দেশনা পেলে কাজ করতে হয়। আদালত থেকে নির্দেশনা এলে এ নিয়ে আমরা এ বিষয়ে কাজ করবো।’
ঢাকায় নবজাতকের জন্ম ঘিরে হিজড়াদের নাচ গান গেয়ে টাকা আদায়ের সংস্কৃতির চল ছিল। তবে সেসময় ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে হিজড়াদের দাবিও থাকতো সামান্য। তবে গত কয়েক বছর ধরে তারা বাড়িঘরে হানা দিয়ে চাঁদা আদায় আর তা না পেলে ভাংচুরসহ অপ্রীতিকর নানা ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ আসে।
হিজড়াদের এমন অপ্রীতিকর আচরণের শিকার হচ্ছেন নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। চাঁদা না দিলে নানা হুমকিধামকি, গালিগালাজ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও বাজে আচরণের মুখোমুখি হতে হয়। অনেকে লোকলজ্জায় নীরবে টাকা দিয়ে রেহাই পেলেও বেশিরভাগ ঘটনায় প্রকাশ্যে আসে না। কেউ আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হলেও খুব বেশি প্রতিকার পান না বলেও অভিযোগ আছে।
যদিও সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে এমন অন্যায় আচারণ বন্ধে হিজড়াদের প্রতি কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও করোনা মহামারির মধ্যে হিজড়াদের বেপরোয়া আচরণ বেড়ে চলেছে বলেই খবর আসছে।
গত ১৬ জুন পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের একটি বাসায় নতুন বাচ্চা জন্মের খবর শুনে হানা দেয় একদল হিজড়া। তারা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নাচার কথা বললে করোনার কথা চিন্তা করে পরিবারটি বাচ্চা দেয়নি। এরপরই শিশুটির মায়ের সঙ্গে অশালীণ আচরণ শুরু করে তারা। একপর্যায়ে ১১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ৫ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পায় ভুক্তভোগী পরিবারটি। একইরকম তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ধানমন্ডির ঝিগাতলার বাসিন্দা নিখিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম বাচ্চা হওয়ায় যখন সবাই আনন্দে ভাসছি, তখন তিন দল হিজড়ারা আমাদের বাসায় ঢুকে রীতিমত ডাকাতি করেছে। তিনবার তাদের চাঁদা দিতে হয়েছে। ফ্রিজের মাছ মাংস নিয়ে গেছে এক গ্রুপ।’