সিলেট সংবাদদাতা : পানি কমার পর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এখনো সামাল দিতে পারেনি সিলেটবাসী। এর মাঝেই ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেটে ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি। আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাত চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এতে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামী কয়েক দিন সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটের দিকে পাহাড়ি ঢল নামবে। এতে আবারও পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। পাউবো সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও। এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মঙ্গলবার রাত থেকে নগরের বেশিরভাগ এলাকা আবারও জলমগ্ন হয়ে পরে। উপশহর, তালতালা, তেররতণসহ, মির্জাজাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পরেছে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পানি কমা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারি বর্ষণে আবারও সিলেটের সবকয়টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর একটি ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে পানি ঢুকে জামতলা এলাকার বাসিন্দা সাগর চৌধুরীর বাসায়। তিনি বলেন, বারবার এভাবে পানি ঢুকে পড়ছে। আমরা কি করবে, কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে বুধবার সকালে ঘর থেকে পানি নেমেছে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পরে নগরের উপশহর এলাকা। এই এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন বলেন, গতরাতে আতঙ্কে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত জেগে পানি পাহারা দিয়েছি। রাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো। তিনি বলেন, টানা ১০দিন পর মাত্র দুইদিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকবে না। আগামী তিন দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা অবধি সিলেট অঞ্চলে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি। সিলেট পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, “সিলেটে বৃষ্টি হলেও পানি বাড়ার শঙ্কা নেই। কিন্তু ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে। এতে ফের বন্যার অবনতি হওয়ার শঙ্কা আছে।” সিলেটের আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, “চলতি সপ্তাহে সিলেটে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।” কয়েকদিন ধরে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখনও অনেক এলাকা পানিবন্দি। গত কয়েক দিনে সুরমার পানি কমেছে, তবে চোখ রাঙাচ্ছে কুশিয়ারা নদী। সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান, সিলেট জেলায় বন্যায় চার লাখ ১৬ হাজার ৯৬৬টি পরিবারের ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬৫ জন মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ হাজার ৯৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।