অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : গ্রাহকদের সুবিধার্থে নতুন ৩ সেবা চালু করেছে এনসিসি ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকটি শিগগিরই ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করবে। এনসিসি ব্যাংকের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ। মঙ্গলবার (১৭ মে) সকালে রাজধানীর মতিঝিল এনসিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার নাইমুল কবির, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আশেক রহমান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব আলম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহাত উল্লা খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির আনাম ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এনসিসি ব্যাংকের নতুন সেবাগুলো হলো: এনসিসি ব্যাংক এনআরবি হোম লোন, এনসিসি ওভারসীস এপ্লয়মেন্ট লোন এবং মাইক্রো এটিএম সেবা ।
মতবিনিময় সভায় এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, বর্ষপূর্তির এই মহেন্দ্রক্ষণে আমরা ৩টি নতুন সেবা চালু করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা বেগবান করছেন তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা ‘এনসিসি ব্যাংক এনআরবি গৃহ ঋণ এবং এনসিসি বৈদেশিক কর্মসংস্থান ঋণ’ নামে ২টি সেবা চালু করেছি। এ ছাড়া ‘মাইক্রো এটিএম’ নামে আমাদের গ্রাহকরা বিভিন্ন আউটলেটে পস মেশিন থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তিনি বলেন, এনসিসি ব্যাংকের দেশব্যাপী ১২৫টি পূর্ণাঙ্গ শাখা এবং ৬টি উপ-শাখায় মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহক সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। করোনার প্রভাব মোকাবিলা করেও ২০২১ সালে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭০০ কোটি টাকা অপারেটিং প্রফিট অর্জন করেছি। এবছরও সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো। আমরা আগামী দিনে দেশের শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে এনসিসি ব্যাংকে নিয়ে যাবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। শেয়ারবাজারে এনসিসি ব্যাংকের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম দিকে ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করি। এনসিসি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনসিসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড দেশের পুঁজিবাজারে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালকগণ ব্যাংকের উন্নয়নে তথা সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং স্টেকহোল্ডারদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হিসাব বছরে ১৬ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। যার মধ্যে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, আর ৪ শতাংশ বোনাস। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার দিক থেকে এনসিসি ব্যাংক স্বনামধন্য তিনটি ব্যাংকের মধ্যে একটি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। মামদুদুর রশীদ বলেন, ইতোমধ্যেই ব্যাংকিং সেবায় দেশের প্রথম ইনোভেশন সেন্টারের উদ্বোধন করেছি। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাগুলো দ্রুত গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ইনোভেশন সেন্টার একটি কার্যকরী ধারণা, যা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে পরিলক্ষিত হয়। এই ইনোভেশন সেন্টারটি এনসিসি ব্যাংকের মধ্যে উদ্ভাবনী সাংস্কৃতি চালু করতে অনুপ্রাণিত করবে। যা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তা প্রদানে সক্ষম হবে এবং গ্রাহকদের নিরাপদে ও দ্রুততম সময়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদানে ডিজিটাল আর্থিক পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরে আমরাই প্রথম ‘নবীন’র মতো উদ্ভাবনী স্টার্ট আপ সেবা গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা কোর ব্যাংকিং সলিউশনের (সিবিএস) উন্নতিসহ আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করছি। রেমিট্যান্স সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈধ পথে প্রবাসীদের অর্থ নিকটজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এনসিসি ব্যাংক নজির সৃষ্টি করেছে। রেমিটেন্স প্রবাহকে আরো জোরদার করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানি ট্রান্সফার কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হয়েছে। আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মানি ট্রান্সফার কোম্পানি মানিগ্রামের সুপার এজেন্ট। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা নিরাপদ, দ্রুততম ও সহজতম উপায়ে দেশে বসবাসরত আত্মীয়স্বজনের নিকট পৌঁছানোর লক্ষে এনসিসি ব্যাংক নিজস্ব ১২৫টি শাখা এবং ৬টি উপ-শাখার পাশাপাশি টিএমএসএসের ৯০০টি শাখা, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ২৫৬ শাখা, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ২৫০টি শাখা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর ৮৯টি শাখা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩৮৩টি শাখা তথা মোট ১ হাজার ৮৭৮টি শাখার মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ প্রদান করছি। তিনি আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতিটি ধাপে এনসিসি ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভারী শিল্প, গার্মেন্টস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতেই এনসিসি ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে। আমাদের রয়েছে শক্তিশালী কর্পোরেট গভর্ণেন্স। সুশাসন, নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় কমপ্লায়েন্সড ব্যাংকের পরিণত হয়েছি। এ ছাড়া আমরা আমাদের ব্যাংকিং সেবাকে পেপারলেস করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যা গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরো ত্বরান্বিত করবে।
আমরা শুধু মুনাফায় বিশ্বাসী না। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিগত বছরগুলোতে আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সিএসআর কার্যক্রম আরো বেশি সম্প্রসারিত করেছি। সারাদেশে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম বিতরণ করেছি। ব্যাংকের খেলাপি ও মন্দ ঋণের আকার কমিয়ে আনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমেও ব্যাংকের পাওনা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ঋণ প্রস্তাবনা এবং বৈদেশিক বাণিজ্য প্রক্রিয়াকাণের বিভিন্ন অসুবিধাসমূহ নিরসনের জন্য কাজ করা হয়েছে। ফলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার লক্ষে শিল্প ও কৃষি খাতের পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নে এনসিসি ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। শেয়ারহোল্ডাদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ লভ্যাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যয় সংকোচন এবং আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা বৃদ্ধির প্রয়াসে সারা বছর সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এনসিসি ব্যাংক।
নতুন ৩ সেবা চালু করেছে এনসিসি ব্যাংক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ