ক্রীড়া ডেস্ক: মাঠের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখন বিবর্ণ। প্রায় একই অবস্থা তাদের অনেক সাফল্যের সাক্ষী ওল্ড ট্র্যাফোর্ড স্টেডিয়ামেরও। শতবর্ষে ক্ষয়ে গেছে অনেক কিছুই, ভাইরাল হয়েছে ছাদ ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ার দৃশ্য। নতুন শুরুর প্রত্যয়ে সব সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ইউনাইটেড। এর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে নতুন স্টেডিয়াম। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের কাছেই আইকনিক এক স্টেডিয়াম নিমার্ণের ঘোষণা দিয়েছেন ইউনাইটেডের মালিকদের একজন জিম র্যাটক্লিফ।
পাঁচ বছরের মধ্যে দুইশ কোটি পাউন্ড ব্যয়ে এক লাখ দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পনা ইউনাইটেডের। একশ কোটি পাউন্ড ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্লাবটি এই অর্থায়ন কীভাবে করবে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। র্যাটক্লিফ এই বিষয়ে কিছু বলেননি। ইউনাইটেডের প্রধান নির্বাহী ওমার বেরাডাও পরিষ্কার করেননি। মঙ্গলবার র্যাটক্লিফ নতুন স্টেডিয়াম নিমার্ণের ঘোষণার সময় বলেন, বিশ্বের সেরা ফুটবল স্টেডিয়াম বানাতে চান তারা।
“আমি মনে করি, ইংল্যান্ডের উত্তর অংশের একটি স্টেডিয়াম প্রাপ্য যেখানে ইংল্যান্ড খেলতে পারবে। যেখানে আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল আয়োজন করতে পারব। আমরা একটি আইকনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ করব।” ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ছেড়ে যাওয়া কারও কারও কাছে বিতকির্ত মনে হতে পারে। তবে এই মাঠে ইউনাইটেডকে নতুন উচ্চতায় নেওয়া কিংবদন্তি কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন তা মনে করেন না। “ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অবশ্যই মাঠে ও মাঠের বাইরে সবসময় সবকিছুতে সেরাটার তাড়না থাকা উচিত। এর মধ্যে স্টেডিয়ামও আছে, যেটায় আমরা খেলি।”
“ব্যক্তিগতভাবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আমার অনেক অনেক স্মৃতি। তবে আমাদের অবশ্যই সাহসী হতে হবে এবং নতুন বাড়ি বিনির্মাণের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, যেটা ভবিষ্যতের জন্য মানানসই এবং যেখানে ইতিহাস গড়া যাবে।” গ্রেটার ম্যানচেস্টারের মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যাম এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। সাবধানী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সাপোর্টার্স ট্রাস্ট। এক বিবৃতিতে তারা সামনে এনেছে তাদের কিছু জিজ্ঞাসা। “বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজনীয় এবং স্বাগত। তবে এর অর্থ এবং এর ফলশ্রুতিতে কী হবে, জানার জন্য তুমুল আগ্রহ নিয়ে ভক্তরা অপেক্ষা করবে।”
“এটা কি টিকেটের দাম বাড়াবে এবং স্থানীয় ভক্তদের জায়গা ছাড়তে বাধ্য করবে? এটা কি আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর হবে? এটা কি ঋণের বোঝা আরও বাড়াবে, যা গত দুই দশক ধরে ক্লাবকে টেনে ধরে রেখেছে? এটা কি খেলার দিকটায় বিনিয়োগ কমাবে, যখন এটা খুব বেশি প্রয়োজন?” নতুন স্টেডিয়ামের প্রকল্প নিয়ে অবশ্য ভীষণ আশাবাদী ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। তারা মনে করছে, এটা সফল হলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রতি বছর বাড়তি সাতশ ত্রিশ কোটি পাউন্ড যোগ করবে। নতুন ৯২ হাজার কাজের সুযোগ তৈরি হবে, নিমার্ণ করা হবে ১৭ হাজার নতুন বাড়ি। এই অঞ্চলে বাড়তি ১৮ লাখ দর্শনার্থী বাড়তে পারে প্রতি বছর। ১৯১০ সালে চালু হওয়া ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের একটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি নেতিবাচক কারণেই বেশি খবরে এসেছে।
গত মে মাসে ভারী বৃষ্টির সময় স্টেডিয়ামের ববি চার্লটন স্ট্যান্ডের ছাদ ফুটো হয়ে অঝোরে পানি ঝরতে দেখা যায়। অতিথি দলের ড্রেসিংরুমসহ আরও কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগে ২০২৩ সালে স্টেডিয়ামের ছাদের একটি অংশ ভেঙে পড়ে ভক্তদের উপর। এর বাইরে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টির পানি পড়ার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। ২০২৮ সালের ইউরোর ভেন্যুর তালিকায় নেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ইউরোপের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের এই প্রতিযোগিতা হবে যুক্তরাজ্য ও রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডে।