নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশন শুরুর দিন আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তারা বলছে, নতুন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘অবৈধ’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এ সংসদ এবং এ সরকারকে প্রতিরোধ করা হবে।
গতকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলপূর্ব সমাবেশ থেকে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, সব জেলা ও উপজেলা শহর এবং মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করা হবে। জনগণকে নিয়ে এই অবৈধ সরকারের সব কর্মকা-কে প্রতিরোধ করতে হবে। এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপি সরকারের পতন ঘটাতে চায়, এটা বিএনপির প্রতিশ্রুতি। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নয়, দুর্নীতি লুটপাট অব্যাহত রাখার জন্য সরকার এই নির্বাচন করেছে। তিনি বলেন, এরা জনগণের নয়, চীন-ভারত-রাশিয়ার সরকার। এই সরকারকে মানতে আমরা বাধ্য নই। সীমান্তে বিজিবি সদস্য মারা যায়, কোনো প্রতিবাদ নেই কেন প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিদেশি সার্টিফিকেট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। লুটপাটের জবাব জনগণ দেবে। রাজপথে থেকেই জনগণের ভোটাধিকার, স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপির নেতৃত্বে কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বিএনপি ভোট বর্জন করেছে, প্রতিহত করেনি। প্রতিহত করার আগেই মানে মানে কেটে পড়ুন। মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে লাভ নেই, সরকারের ধ্বংস অনিবার্য।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজানোর জন্য বিএনপি রাজপথে আছে। সরকার কালো পতাকার কালো আঁধারে নিশ্চিহ্ন হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। ৭ জানুয়ারি জনগণ সরকারকে বর্জন করেছে, তাদের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। একদলীয় শাসনের অবসান ঘটাতে বিএনপি সরকারের পরিবর্তন চায়। বাংলাদেশের মানুষ কখনো বিদেশি শাসকদের বশ্যতা স্বীকার করেনি। এখনও করবে না। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই সরকার নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, সংসদ ভেঙে না দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে সরকার, সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় পরিস্থিতিতেও সরকারের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে সরকার। এই সরকারের অধীনে আগামীতেও কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে উল্লেখ করেন ডা. জাহিদ।
রাজপথে সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজাবে বিএনপি: মঈন খান: রাজপথ থেকেই সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজানো হবে বলে হুংকার দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলের আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ হুংকার দেন। মঈন খান বলেন, সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজাতে রাজপথে নেমেছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কালো পতাকার কালো আধারে বিদায় নিতে বাধ্য হবে ক্ষমতাসীনরা। তিনি আরও বলেন, ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন করেছে সরকার। এর মধ্যদিয়ে জনগণের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। দিল্লির শাসনে বাংলাদেশ চলতে পারে না উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, উপনিবেশ কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সীমান্তে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত চায় বিএনপি: যশোরের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের হত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিল্লির উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা এসব হত্যাকা-কে আশকারা দিচ্ছে। গত শুক্রবার বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে বিজিবি সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। দলটি এ ঘটনাকে ‘হত্যাকা-’ বলে উল্লেখ করেছে।
গতকাল শনিবার দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি বলেছে, ‘সীমান্তে এই হত্যাকা- বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার একটি আধিপত্যবাদী বার্তা। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে। এত দিন সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে, এখন বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই।’
প্রসঙ্গত, ২২ জানুয়ারি যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফ গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন নিহত হন। বিজিবির এই সদস্যর নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএসএফের দেওয়া বক্তব্যকেও অগ্রহণযোগ্য বলেছে বিএনপি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম মনে করে, একটি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। দলটি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ‘ক্ষমতাসীনদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানানো হয়েছে।’ বিএনপি অভিযোগ করেছে, দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ। বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে। দলটি বলেছে, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাদের নীতিনির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি। সে জন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনি হত্যাকা-ে তারা কোন দায়বোধ করে না। ফেলানীসহ সীমান্তে হত্যার ঘটনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো বিচার বা প্রতিকার করেনি।
নতুন সংসদের শুরু থেকেই ‘প্রতিরোধে’র ডাক বিএনপির
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ