বিশেষ প্রতিনিধি: আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩২। বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্রসংক্রান্তি গেল গতকাল রোববার। চৈত্র মাসের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি। আবার বাংলা বর্ষের শেষ দিনও ছিল কাল। আজ সোমবার পহেলা বৈশাখ-নতুন বাংলা বর্ষ। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে এ আহ্বান জানায় বাঙালি।
পহেলা বৈশাখ আমাদের সকল সঙ্কীর্ণতা, কূপমুণ্ডকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়। অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ।
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটিয়ে জাতি এবার নতুনভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে।
আজ ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী এবং দেশজুড়ে থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।
‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে শুরুর নাম ‘বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে পালন করবে। ছায়ানট রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা সকাল ৯টায়: নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা নামে আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সোমবার সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে। সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। শেষ প্রান্ত দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে আরো বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এবছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।
পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোন ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট, চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেট এবং বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ রমনা কালীমন্দিরসংলগ্ন গেট বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আরো বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষের সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে আজ সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড়সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড়সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠসংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশপাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।
নববর্ষ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ঢাকাকে ২১ ভাগ করে নিরাপত্তা: বাংলা নববর্ষ বরণে রাজধানীর রমনা বটমূল, চারুকলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পর্যাপ্তসংখ্যক ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ আলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকাল ৯টায় শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ওই শোভাযাত্রার নির্ধারিত রাস্তা ঢেকে দেওয়া হবে ‘নিরাপত্তার চাদরে’।
নববর্ষের আগের দিন রোববার রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে এসে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানগুলো কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরীকে ২১টি সেক্টরে ভাগ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইউনিফর্ম ও সাদা পেশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, অনুষ্ঠানস্থলে এবারো কোনো ধরনের মুখোশ পরা যাবে না, বহন করা যাবে না ব্যাগ; এ ছাড়া ধারাল বস্তু এবং দাহ্য পদার্থ সঙ্গে না রাখারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ফানুশ উড়ানো, আতশবাজি ফতানোতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেছেন, শব্দ দূষণ হয় এরকম কোনো বাঁশি বাজানো যাবে না। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করারও আহ্বান রেখেছেন সাজ্জাদ আলী।
‘আনন্দ শোভাযাত্রাটি’ চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়-টিএসসি-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-বাংলা একাডেমি-টিএসসি হয়ে ফের চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। শোভাযাত্রা শুরু হলে তাতে পাশ থেকে ‘প্রবেশ করা যাবে না’ বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
প্রস্তুতি যা যা: রমনা বটমূল ছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় সংসদভবন এলাকা, রবীন্দ্র সরোবর ও হাতিরঝিল এলাকায় বর্ষবরণের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়েছে।
এসব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানস্থলগুলো ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হবে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে মোট ২১টি স্থানে ব্যারিকেড ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ গেইটে ‘আর্চওয়ে ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর’ দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন সাজ্জাদ আলী। তিনি বলেছেন, অনুষ্ঠানস্থল ও শোভাযাত্রার রাস্তা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্টিল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ও ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি করা হবে। এ ছাড়া ইভটিজিং, ছিনতাই রোধে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকছে।
সাজ্জাদ আলী বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও সাইবার পেট্রোলিংসহ নববর্ষকেন্দ্রিক অপপ্রচার রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো অপতৎপরতা মনিটরিং করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে হকার প্রবেশ করে যাতে অনাকাঙ্খিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য বিশেষ টিম কাজ করবে।
এ ছাড়া বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, মেডিকেল টিম, নৌ পুলিশের ডুবুরি দল ও সিটি করপোরেশনের মোবাইল টয়লেট থাকছে। পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সেবা কেন্দ্র থাকবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ আলী বলেছেন, রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান সকাল সোয়া ছয়টায় শুরু হয়ে সকাল ৮টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে। ছায়ানটের শিল্পী কলাকুশলী, সাংবাদিক, পুরুষ ও নারী দর্শনার্থীরা পৃথক পৃথক গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং বের হবেন। সবাইকে তল্লাশির আওতায় আসতে হবে জানিয়ে, এই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ ও বের হওয়ার কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
১। রমনার অনুষ্ঠানে কেবল ৩টি গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে। সেগুলো হলো- অরুনাদয় গেট, রমনা রেস্তোরাঁ গেট ও শিশু পার্কের বিপরীতে অস্তাচল গেট।
২। রমনার অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হওয়ার জন্য উত্তরায়ন গেট ও বৈশাখী গেট ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া শ্যামোলিমা গেট, স্টার গেট এবং বৈশাখী ও অস্তাচল গেইটের মাঝামাঝি নতুন গেট প্রবেশ ও বের হওয়া, উভয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে। হর্টিকালচার গেট বন্ধ থাকবে।
৩। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য তিনটি গেট- বাংলা একডেমির বিপরীতে নতুন গেট, আইইবি গেট ও ছবির হাট গেট দিয়ে কেবল প্রবেশ করা যাবে এবং বের হওয়ার জন্য তিনটি গেট-শিখা চিরন্তন গেট, রমনা কালী মন্দির গেট ও তিন নেতার মাজার গেট ব্যবহার করা যাবে।
৪। টিএসএসির বিপরীত গেট বন্ধ থাকবে। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে। বিকাল ৫টার পর সকল গেট বের হওয়ার গেট হিসেবে ব্যবহার হবে।
সাজ্জাদ আলী বলেছেন বর্ষবরণ উদযাপনের দিন বেশ কিছু সড়কে যান যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে ডাইভারসন ব্যবস্থা থাকবে। নির্ধারিত স্থানে যানবাহন পার্কিং করতে হবে।
যে কোনো প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, ম্যাসেজ টু কমিশনার (০১৩২০-১০১০১০, ০১৩২০-০২০২০২) এই নাম্বারে ম্যাসেজ এবং পুলিশ কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলা নববর্ষের ইতিহাস: এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরোনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষ্যে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।
মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এসময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় , উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।