ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন বছরে সাত চ্যালেঞ্জে সরকার

  • আপডেট সময় : ০৪:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ ইউনূস- ফাইল ছবি

বিশেষ সংবাদদাতা: মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন বছরের যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তার প্রশাসন। নতুন বছরের প্রাক্কালে সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার দেওয়া বক্তব্যেও সাধারণ মানুষের প্রতি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে তার বক্তব্যে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রয়েছে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন, নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি, পরিবার বা কোনও গোষ্ঠীর কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে না রাখারও অনুরোধ। এসব নির্দেশ, হুঁশিয়ারি ও অনুরোধ রক্ষা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে নতুন বছরের সাফল্য। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বর্তমান সরকারকে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম। চ্যালেঞ্জগুলো হলো-

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ: নতুন বছরের প্রথম চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন বছরে এগোতে হবে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ– জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্য-পণ্যের দাম নিয়ে আসা। একই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ছাড়া সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আসা কঠিন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনার প্রথম শর্ত বাজারে মনোপলি ব্যবসা পরিহার করতে হবে। সিন্ডিকেটের বৃত্ত ভেঙে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমানে বাজারে ডিম, মাংস ও সবজির দাম কমেছে ঠিক, কিন্তু এখানে সরকারের কোনও মেকানিজম নেই। বর্তমান বাজারে ডিম, মাংস ও সবজির দাম কমার ক্ষেত্রে সব মেকানিজম সৃষ্টিকর্তা, প্রকৃতি ও কৃষকের। তার প্রমাণ হিসেবে তারা বলেন, চালের উৎপাদন বেড়েছে তারপরেও দাম কমেনি, কারণ ধান ও চাল গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। মজুদ করা হচ্ছে। সরকারের কাছে মজুদ আইন থাকলেও তা দিয়ে এই মজুদদারি ঠেকাতে পারছে না সরকার। পাশাপাশি ভোজ্যতেল ও চিনির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এখানেও আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজির কারণে এ দুটি পণ্য বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রেখেছে। এখানে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন: সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন বছরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যাওয়া পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ মানুষের আস্থায় আনা সম্ভব হয়নি এখনও। পুলিশ বাহিনীও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শত চেষ্টা করেও সাবলীল হতে পারছেন না বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তারা মনে করেন, পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ মানুষের আস্থায় ফিরিয়ে আনা বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়াও সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল বা সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। শিগগিরই এসব কালো আইন বাতিল এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহুল আলোচিত পাঁচ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পয়লা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তার মধ্যে হত্যা মামলা ছাড়া বাকি প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার হওয়া সবাই মুক্তি পেয়েছেন। তারপরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের শতভাগ আস্থায় নেই।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: সরকারের তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা হচ্ছে বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতা গ্রহণের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়া সব দলের মধ্যে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার মনোভাব থাকলেও বর্তমানে সেই মনোভাবে চির ধরেছে বলে মনে করছেন অনেকে। আর এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামল দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান। বর্তমান সরকার শুরুর দিকে নির্বাচন সংক্রান্ত আলাপ বাদ দিয়ে নানামুখী সংস্কারের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের চির ধরা শুরু করে। পরবর্তীতে নতুন বছরের শেষে অথবা পরের ২০২৬-এর প্রথমার্ধে নির্বাচনের একটি রূপরেখা দেয় ড. ইউনূস। এতে অনেকটাই স্বস্তি ফেরে রাজনৈতিক মহলে। এটিকে ধরে রাখতে হবে। যা হচ্ছে নতুন বছরের আরেক চ্যালেঞ্জ।

প্রশাসনিক সংস্কার: নতুন বছরে সরকারের সামনে চতুর্থ চ্যালেঞ্জ প্রশাসনিক সংস্কার। যে যাই বলুক, বর্তমান সরকারের প্রশাসনে বড় ধরনের নড়বড়ে অবস্থা বিদ্যমান। সরকারের অনেক চেষ্টার পরেও তা নিরসন হচ্ছে না। প্রতিদিনই প্রশাসনের কোনও না কোনও ক্ষেত্রে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চলছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে আমলাদের কোনও ইতিবাচক ভূমিকা না থাকলেও সরকার পরিবর্তনের পরে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন তারাই। সামান্য সংখ্যক বাদ দিয়ে বাকিটা বঞ্চিত হওয়ার ধোঁয়া তুলে তারা কৌশলে আদায় করে নিয়েছেন পদোন্নতি, লোভনীয় পদায়ন, নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা। যা এখনও চলমান। তারা এখন সরকারের নেওয়া প্রশাসন সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কৌশলে বিষয়টি পরিষ্কার না করে তারা কমিশন প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার। সব মিলিয়ে প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি সরকারকে বিব্রত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ মাস পূর্ণ হচ্ছে। প্রশাসনে গতি বাড়লেও ফাইলের হয়রানি থামেনি। প্রশাসন, পুলিশ, মানবাধিকার, অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলাসহ নানা ক্ষেত্রে বেশকিছু সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পদে পদে জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রশাসনের প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করে বেশ কিছু সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং কয়েকজনকে সচিবের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসনে ফিরিয়ে এনে পদোন্নতি দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাতেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তবে বর্তমান সরকারের ভালো দিক হচ্ছে- গত ১ সেপ্টেম্বর সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া। জনপ্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিও দেওয়া হচ্ছে।

জ্বালানি নিরাপত্তা: বর্তমান সরকারের পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সরকারের বড় সিদ্ধান্ত- বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ হবে গণশুনানির মাধ্যমে, নির্বাহী আদেশে নয়। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। এর বাইরেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় নতুন কোনও চুক্তি হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা মেটাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য বন্ড ছাড়ার পাশাপাশি সরকার এখন আদানির বকেয়া পরিশোধ নিয়েও সজাগ বলে জানা জানা গেছে। সরকার ইতোমধ্যেই ভারতীয় কোম্পানি আদানির পাওনার বড় অংশের পরিশোধ করেছে। তবে সামনে গ্রীষ্ম মৌসুমে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়বে বিদ্যুতের। একই সঙ্গে চলবে সেচ মৌসুমও। দেশব্যাপী বিদ্যুতের সরবরাহ সমন্বয় করতে লোডশেডিং করতে হবে। তখনকার বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর নির্ভর করবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না দেওয়া।

ডলার সরবরাহ: বর্তমান সরকারের ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- বৈদেশিক বাণিজ্য ঠিক রাখতে ডলার সরবরাহ বাড়ানো এবং ডলারের দাম ঠিক রাখা। ডলারের সরবরাহ ও মূল্যমান ঠিক রাখার উপর নির্ভর করছে বৈদেশিক বাণিজ্যের সফলতা। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে যাওয়া গত বছর ব্যাপক প্রভাবিত করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালের পহেলা জুন থেকে এখনও পর্যন্ত, অর্থাৎ গত দেড় বছরে টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি। এর ফলে আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ ও দামের ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করেছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও ঠিক মতো ডলারের সরবরাহ না পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর সুযোগ নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে অশান্তি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এটি নিরসন প্রয়োজন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলারের বাড়তি দামের কারণে আমদানি, এবং তার ধারাবাহিকতায় দেশের ভেতর উৎপাদনও ব্যাহত করেছে। বেশি দামে পণ্য আমদানি করায় তা কেনার জন্য সাধারণ মানুষকেও গুনতে হয়েছে বেশি পরিমাণ টাকা। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন গত কয়েক বছর ধরে টাকার বিনিময়ে ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করে আসছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা সবসময়ই এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এসেছেন। টাকার বিনিময়ে ডলারের মূল্য যেন হঠাৎ করে বেড়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে বিনিময় মূল্য ‘ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা।

তাদের মতে, টাকার যেন অবমূল্যায়ন না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও বাজারে ডলার ছাড়ছে। কিন্তু দাম নির্ধারণ না করে বিষয়টি যদি ধীরে ধীরে, ছোট ছোট ধাপে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে এক সময় টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল হবে। তবে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সুযোগ দিতে হবে।

গত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গত জানুয়ারিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.২২ বিলিয়ন ডলার, যা ডিসেম্বরে ২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফের নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার যা নভেম্বরে ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নতি: সরকারের সপ্তম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নতি। বর্তমান সরকারকে যে কোনোভাবেই হোক বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে হবে। ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনের বিষয়টি বহির্বিশ্ব গভীরভাবে বাংলাদেশকে ফলো করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ধারণা ভারতকে চাপে রেখে আমেরিকার সুনজরে আসতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু সম্প্রতি বাইডেনের পরাজয়ের কারণে বাংলাদেশ নিজেই অনেকটা চাপে পড়েছে। যদিও বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নিজে। তিনি জানিয়েছেন, আমরা ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। ভারতের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে বন্যা মোকাবিলায় উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আলোচনা শুরু করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বহির্বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সরকারকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আর এর উপর নির্ভর করছে সম্পর্ক।

এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেছেন, যে কোনও সরকারকেই কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। এক্ষেত্রে এটি নতুন কিছু নয়। সুষ্ঠুভাবে সরকার পরিচালনার মধ্য দিয়ে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হলে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়েই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সক্ষম হয়ে উঠবে বলে আমি মনে করি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন বছরে সাত চ্যালেঞ্জে সরকার

আপডেট সময় : ০৪:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা: মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন বছরের যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তার প্রশাসন। নতুন বছরের প্রাক্কালে সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার দেওয়া বক্তব্যেও সাধারণ মানুষের প্রতি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে তার বক্তব্যে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রয়েছে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন, নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি, পরিবার বা কোনও গোষ্ঠীর কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে না রাখারও অনুরোধ। এসব নির্দেশ, হুঁশিয়ারি ও অনুরোধ রক্ষা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে নতুন বছরের সাফল্য। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বর্তমান সরকারকে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম। চ্যালেঞ্জগুলো হলো-

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ: নতুন বছরের প্রথম চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন বছরে এগোতে হবে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ– জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্য-পণ্যের দাম নিয়ে আসা। একই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ছাড়া সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আসা কঠিন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনার প্রথম শর্ত বাজারে মনোপলি ব্যবসা পরিহার করতে হবে। সিন্ডিকেটের বৃত্ত ভেঙে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমানে বাজারে ডিম, মাংস ও সবজির দাম কমেছে ঠিক, কিন্তু এখানে সরকারের কোনও মেকানিজম নেই। বর্তমান বাজারে ডিম, মাংস ও সবজির দাম কমার ক্ষেত্রে সব মেকানিজম সৃষ্টিকর্তা, প্রকৃতি ও কৃষকের। তার প্রমাণ হিসেবে তারা বলেন, চালের উৎপাদন বেড়েছে তারপরেও দাম কমেনি, কারণ ধান ও চাল গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। মজুদ করা হচ্ছে। সরকারের কাছে মজুদ আইন থাকলেও তা দিয়ে এই মজুদদারি ঠেকাতে পারছে না সরকার। পাশাপাশি ভোজ্যতেল ও চিনির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এখানেও আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজির কারণে এ দুটি পণ্য বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রেখেছে। এখানে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন: সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন বছরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যাওয়া পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ মানুষের আস্থায় আনা সম্ভব হয়নি এখনও। পুলিশ বাহিনীও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শত চেষ্টা করেও সাবলীল হতে পারছেন না বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তারা মনে করেন, পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ মানুষের আস্থায় ফিরিয়ে আনা বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়াও সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল বা সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। শিগগিরই এসব কালো আইন বাতিল এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহুল আলোচিত পাঁচ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পয়লা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তার মধ্যে হত্যা মামলা ছাড়া বাকি প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার হওয়া সবাই মুক্তি পেয়েছেন। তারপরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের শতভাগ আস্থায় নেই।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: সরকারের তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা হচ্ছে বর্তমান সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতা গ্রহণের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়া সব দলের মধ্যে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার মনোভাব থাকলেও বর্তমানে সেই মনোভাবে চির ধরেছে বলে মনে করছেন অনেকে। আর এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামল দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান। বর্তমান সরকার শুরুর দিকে নির্বাচন সংক্রান্ত আলাপ বাদ দিয়ে নানামুখী সংস্কারের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের চির ধরা শুরু করে। পরবর্তীতে নতুন বছরের শেষে অথবা পরের ২০২৬-এর প্রথমার্ধে নির্বাচনের একটি রূপরেখা দেয় ড. ইউনূস। এতে অনেকটাই স্বস্তি ফেরে রাজনৈতিক মহলে। এটিকে ধরে রাখতে হবে। যা হচ্ছে নতুন বছরের আরেক চ্যালেঞ্জ।

প্রশাসনিক সংস্কার: নতুন বছরে সরকারের সামনে চতুর্থ চ্যালেঞ্জ প্রশাসনিক সংস্কার। যে যাই বলুক, বর্তমান সরকারের প্রশাসনে বড় ধরনের নড়বড়ে অবস্থা বিদ্যমান। সরকারের অনেক চেষ্টার পরেও তা নিরসন হচ্ছে না। প্রতিদিনই প্রশাসনের কোনও না কোনও ক্ষেত্রে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চলছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে আমলাদের কোনও ইতিবাচক ভূমিকা না থাকলেও সরকার পরিবর্তনের পরে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন তারাই। সামান্য সংখ্যক বাদ দিয়ে বাকিটা বঞ্চিত হওয়ার ধোঁয়া তুলে তারা কৌশলে আদায় করে নিয়েছেন পদোন্নতি, লোভনীয় পদায়ন, নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা। যা এখনও চলমান। তারা এখন সরকারের নেওয়া প্রশাসন সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কৌশলে বিষয়টি পরিষ্কার না করে তারা কমিশন প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার। সব মিলিয়ে প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি সরকারকে বিব্রত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ মাস পূর্ণ হচ্ছে। প্রশাসনে গতি বাড়লেও ফাইলের হয়রানি থামেনি। প্রশাসন, পুলিশ, মানবাধিকার, অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলাসহ নানা ক্ষেত্রে বেশকিছু সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পদে পদে জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রশাসনের প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করে বেশ কিছু সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং কয়েকজনকে সচিবের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসনে ফিরিয়ে এনে পদোন্নতি দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাতেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তবে বর্তমান সরকারের ভালো দিক হচ্ছে- গত ১ সেপ্টেম্বর সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া। জনপ্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিও দেওয়া হচ্ছে।

জ্বালানি নিরাপত্তা: বর্তমান সরকারের পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সরকারের বড় সিদ্ধান্ত- বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ হবে গণশুনানির মাধ্যমে, নির্বাহী আদেশে নয়। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। এর বাইরেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় নতুন কোনও চুক্তি হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা মেটাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য বন্ড ছাড়ার পাশাপাশি সরকার এখন আদানির বকেয়া পরিশোধ নিয়েও সজাগ বলে জানা জানা গেছে। সরকার ইতোমধ্যেই ভারতীয় কোম্পানি আদানির পাওনার বড় অংশের পরিশোধ করেছে। তবে সামনে গ্রীষ্ম মৌসুমে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়বে বিদ্যুতের। একই সঙ্গে চলবে সেচ মৌসুমও। দেশব্যাপী বিদ্যুতের সরবরাহ সমন্বয় করতে লোডশেডিং করতে হবে। তখনকার বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর নির্ভর করবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না দেওয়া।

ডলার সরবরাহ: বর্তমান সরকারের ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- বৈদেশিক বাণিজ্য ঠিক রাখতে ডলার সরবরাহ বাড়ানো এবং ডলারের দাম ঠিক রাখা। ডলারের সরবরাহ ও মূল্যমান ঠিক রাখার উপর নির্ভর করছে বৈদেশিক বাণিজ্যের সফলতা। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে যাওয়া গত বছর ব্যাপক প্রভাবিত করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালের পহেলা জুন থেকে এখনও পর্যন্ত, অর্থাৎ গত দেড় বছরে টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি। এর ফলে আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ ও দামের ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করেছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও ঠিক মতো ডলারের সরবরাহ না পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর সুযোগ নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে অশান্তি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এটি নিরসন প্রয়োজন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলারের বাড়তি দামের কারণে আমদানি, এবং তার ধারাবাহিকতায় দেশের ভেতর উৎপাদনও ব্যাহত করেছে। বেশি দামে পণ্য আমদানি করায় তা কেনার জন্য সাধারণ মানুষকেও গুনতে হয়েছে বেশি পরিমাণ টাকা। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন গত কয়েক বছর ধরে টাকার বিনিময়ে ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করে আসছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা সবসময়ই এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এসেছেন। টাকার বিনিময়ে ডলারের মূল্য যেন হঠাৎ করে বেড়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে বিনিময় মূল্য ‘ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা।

তাদের মতে, টাকার যেন অবমূল্যায়ন না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও বাজারে ডলার ছাড়ছে। কিন্তু দাম নির্ধারণ না করে বিষয়টি যদি ধীরে ধীরে, ছোট ছোট ধাপে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে এক সময় টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল হবে। তবে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সুযোগ দিতে হবে।

গত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গত জানুয়ারিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.২২ বিলিয়ন ডলার, যা ডিসেম্বরে ২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফের নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার যা নভেম্বরে ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নতি: সরকারের সপ্তম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নতি। বর্তমান সরকারকে যে কোনোভাবেই হোক বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে হবে। ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনের বিষয়টি বহির্বিশ্ব গভীরভাবে বাংলাদেশকে ফলো করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ধারণা ভারতকে চাপে রেখে আমেরিকার সুনজরে আসতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু সম্প্রতি বাইডেনের পরাজয়ের কারণে বাংলাদেশ নিজেই অনেকটা চাপে পড়েছে। যদিও বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নিজে। তিনি জানিয়েছেন, আমরা ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। ভারতের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে বন্যা মোকাবিলায় উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আলোচনা শুরু করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বহির্বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সরকারকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আর এর উপর নির্ভর করছে সম্পর্ক।

এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেছেন, যে কোনও সরকারকেই কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। এক্ষেত্রে এটি নতুন কিছু নয়। সুষ্ঠুভাবে সরকার পরিচালনার মধ্য দিয়ে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হলে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়েই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সক্ষম হয়ে উঠবে বলে আমি মনে করি।