ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : চলছে অ্যাডমিশন সিজন, দেশের বেশির ভাগ প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নতুন সেশনের ভর্তি–প্রক্রিয়া। কিছু দিন বাদে শুরু হবে নতুন বর্ষের ক্লাস। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় ছুটে আসে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। নতুন একটি পরিবেশ, নতুন ক্লাসরুম, নতুন শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিসে লাগে নতুনত্বের ছোঁয়া। সময়টা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। নতুন বন্ধু নির্বাচন এই ধাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বন্ধু কী, কারা বন্ধু হওয়ার যোগ্য কিংবা কে আপনার সবচেয়ে সেরা বন্ধু—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো একেকজন একেকভাবে দেবে, একেকজনের মতাদর্শ একেক রকম। আর এটাই স্বাভাবিক। ‘বন্ধুত্ব’ শব্দটির হয়তো ব্যাকরণিক পরিচয় পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু এই শব্দটির গভীরতা আঁচ করতে পারাটা বিশাল ব্যাপার বটে। কিছু বন্ধুকে ছাড়া হয়তো আপনি একদমই চলতে পারেন না, আবার কিছু বন্ধু সময়ের পরিক্রমায় হয়ে যায় দুচোখের বিষ। ছোটবেলা থেকে আমাদের শেখানো হয় ‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে’। উক্তিটি সত্যি, তবে আংশিক। আমি–আপনি চাইলেই কোনো মানুষের কোষ্ঠী বিবেচনা করে বন্ধু বানাতে পারি না; কিংবা কে গরিব, কে ধনী বিবেচনা করেও মিশি না। যাঁরা এসব বিবেচনা করে বন্ধু নির্বাচন করেন, তাঁরা আর যা–ই হোক, প্রকৃত বন্ধুত্বের স্বাদ উপভোগ করতে জানেন না। বন্ধুত্ব আসলে স্রষ্টা প্রদত্ত একটি উপহার, যা স্রষ্টাই নির্ধারণ করে দেন, সেখানে মানবের ইচ্ছা–অনিচ্ছা খুব কমই বিবেচ্য। তবে আর যা–ই হোক, পরিশেষে এটিই সত্যি, বন্ধু আমাদের জীবনের একটি অংশ, বন্ধু ছাড়া জীবন ‘বন্ধুর’ মতো অমসৃণ।
২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে আমার কাছে খুবই খারাপ লাগত, বাড়ি থেকে এত দূর এলাম। পরিচিত কেউ নেই। কাউকে চিনি না, সবাইকে দেখি যাঁর যাঁর মতো ব্যস্ত। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে, কারও হাতে একটুও সময় নেই অন্য কারও জন্য। এভাবেই চলতে থাকল, ক্লাস শুরু হয়ে গেল এরই মধ্যে। ক্লাস, পরীক্ষা, খাওয়া-দাওয়ার সময় বাদে নিজেকে খুবই একা লাগত, বারবার মনে হতো বাড়িতে চলে যাই। তারপর পরিচয় হলো রিপন, মুকুল, জেমি ও তুষারের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, তাদেরও একই অনুভূতি হচ্ছে। এটা ভেবে সান্ত¡না পেলাম—আমার মতো একই অনুভূতির কাউকে খুঁজে পেলাম। তারপর নিজেদের মধে৵ আলোচনা করলাম, কীভাবে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা যায়। এক বন্ধু পরামর্শ দিল, চলো কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি ক্লাস শেষে। সবাই মোটামুটি একমত, হ্যাঁ চলো ঘুরতে যাই।
সেদিন আমরা স্থানীয় একটি দর্শনীয় জায়গায় ঘুরতে যাই। যাওয়া–আসা, খাওয়াদাওয়া এবং দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থাকার কারণে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়। নিজেদের আরও ভালোভাবে বুঝতে পারলাম, ভালোভাবে চিনতে শুরু করলাম। পরে শুরু হলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, খাওয়াদাওয়া ও ঘোরাফেরা। আমাদের সঙ্গে আরও যোগ দিল রিয়া ও পলাশ। সব মিলিয়ে আমরা সাতজন। আমাদের মধে৵ কারও কোনো ভালো খবরে সবাই একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। ঠিক একইভাবে আমাদের কষ্টগুলোও সবাই নিজেদের মধে৵ শেয়ার করে নিই। একেকজন দেশের একেক জায়গা থেকে এসেছে, নিজেদের মধে৵ সাংস্কৃতিক বিনিময় ছাড়াও পড়াশোনা হয় সমানতালে। একজন হয়তো গণিতে ভালো, অন্যজন থিওরিতে, কিন্তু সাতজন মিলেই আমরা সবকিছুতেই ভালো। আড্ডা জমে উঠলে একজন গেয়ে ওঠে ক্ল্যাসিকাল গান, কেউ–বা আবৃত্তি করে কবিতা। এভাবেই চলছে এই সাতজনের ক্যাম্পাস–জীবন। অনেক চড়াই–উতরাইয়ের মধ্য দিয়েই এই বন্ধুত্বের বয়স আজ তিন বছরে পা দিতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় আমরা কতটা দূরে ছিলাম, কতটা অপরিচিত ছিলাম! আজ আমরা একে অন্যের কতটা কাছের, কতটা ভালোবাসার। এরই নাম বন্ধুত্ব। বেঁচে থাকুক বন্ধুত্ব, বেঁচে থাকুক ভালোবাসায়।
নতুন বছরে নতুন বন্ধু
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ