ঢাকা ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন শেরে বাংলা নগরে হতে পারে

  • আপডেট সময় : ১২:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাসভবন নির্ধারণে কাজ শুরু করেছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, কমিটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের বিষয়ে সুপারিশও জমা দেয়। মূলত গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চেয়ে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে বেশি উপযোগী বলে মনে করছে কমিটি। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে বলে একটি সংবাদসংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ও নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়। তারা শেরে বাংলা নগরে দু’টি স্থান প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে প্রস্তুত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। একটি হচ্ছে- শেরে বাংলা নগরের সংসদ ভবন এলাকার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন, আরেকটি হচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এলাকা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওইদিন সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়ে। এটিতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসবাস করতেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’-এ রূপান্তরের কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নির্মাণকাজ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে, আর আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এটি উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছে জাদুঘর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ অবস্থায় নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে- এ বিষয়টি সরকারের সামনে আসে।

তাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রীদের বাসভবনের বিষয়ে সুপারিশ দিতে গত ৭ জুলাই উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছিল। ছয় সদস্যের এই কমিটির প্রধান ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদ (বর্তমানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক)। এই কমিটি রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

পরে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণের জন্য এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে দেওয়া হয়। এ কমিটির প্রধান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। এছাড়া সংসদ সচিবালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এ কমিটি করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গঠিত কমিটির সদস্যরা শেরে বাংলা নগর সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, কমিটির নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন দুটিকে একত্র করে অস্থায়ীভাবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন করা হবে। আলাদা দুটি ভবনের মধ্যে সহজ যাতায়াতের জন্য একটি দুই স্তরবিশিষ্ট করিডর নির্মাণ প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। একই সঙ্গে এ-১ ও এ-২ বাসা দুটিও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বাসভবন তো আগে থেকেই আছে। তারপরও সেটা আরেকটু দেখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়ছিল। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অন্য একটি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই সেটির বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে রূপান্তরের বিষয়টি বিবেচনায় ছিল। তবে যমুনা শহরের মধ্যবর্তী জায়গায়। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর চলাচল নগরবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগ ডেকে আনবে। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দূরত্বও শেষ। যাওয়া-আসায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়া মিন্টো রোডে বাংলো আছে। দুটি প্লট একত্র করেও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন করা যেতে পারে। তবে ক্ষেত্রে যানজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।

তাই দ্বিতীয় অপশন শেরে বাংলা নগরের কোথাও করাই সবচেয়ে উপযোগী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্পিকারের বাসভবন গণভবনের কাছাকাছি। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী চলাচল করলে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় খুব একটা প্রভাব পড়বে না। তাই এ অপশনটিকে অধিকতর সুবিধাজনক হিসেবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কমিটি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ বিষয় কাজ শুরু করবে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের মতো সংবেদনশীল স্থাপনার জন্য ঢাকা শহরে যুৎসই স্থান পাওয়া খুবই মুশকিল। কারণ এক্ষেত্রে একই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে হবে। তাই খুব ভেবে ও যাচাই করে করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তবে গণভবনে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো সরকার প্রধান বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেননি। আর শেখ হাসিনাও এটি নিজের নামে লিজ নিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছেন। তারপরও গণভবন থাকায় সরকারগুলো প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা করে বাসভবন নির্মাণের কথা ভাবেনি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. আব্দুল মতিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের বিষয়ে সুপারিশ দিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি তাদের সুপারিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে এটি নিয়ে আমরা একটি মিটিংও করি। কিন্তু সেখানে সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। সেই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণের কাজ করছে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।’

মন্ত্রীদের আবাসন নিয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেই
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য আগে থেকে আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। তবে তাদের বাড়ি বিচারপতিসহ উচ্চ পর্যায়ের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাই মন্ত্রীদের জন্য যে বাড়ি আছে তা পর্যাপ্ত নয়। তাই গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কমিটিকে এ বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছি।

আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডে মন্ত্রীদের জন্য বাংলো বাড়ি আছে ১৫টি। এ ছাড়া বেইলি রোডে তিনটি মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট ভবন রয়েছে। সেখানে ৩০ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা (ফ্ল্যাট) আছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট। এ ছাড়া গুলশানের একটি সরকারি বাংলো বাড়িতে বিভিন্ন সময় কোনো না কোনো মন্ত্রী থেকেছেন। সে হিসাবে ৪৬ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা আছে। মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এখন ১২টিতে থাকছেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা। বাকি ১৮টির মধ্যে ১৪টিতে থাকছেন দুজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার চারজন বিশেষ সহকারী, চারজন নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুজন কমিশনারসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তারা।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি প্রতিবেদনে নতুন সরকারের মন্ত্রী ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য মিন্টো রোডের দুটি বাংলো বাড়ি নিয়ে আধুনিক ভবন নির্মাণের সুপারিশ করে। একইভাবে বেইলি রোডেও দুটি বাংলো বাড়িতে আধুনিক ভবন নির্মাণেরও সুপারিশ করে কমিটি।

এর বাইরে গুলশান ও ধানমন্ডিতে দুটি পরিত্যক্ত বাড়িতে মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি।

আইনে প্রধানমন্ত্রীর আবাসনের বিষয়ে যা আছে
প্রধানমন্ত্রী ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টারস (রেমুনারেশেন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ২০১৬’ এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা ‘দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ২০১৬’ অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

আইনে প্রধানমন্ত্রীর আবাসন সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী জন্য একটি সরকারি বাসভবন থাকবে, যা সরকারী ব্যয়ে সজ্জিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী নিজের বাড়িতে বা সরকারি বাসভবন ছাড়া অন্য কোনো বাড়িতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তিনি প্রতি মাসে এক লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া পাবেন। সেই বাড়িটি প্রধানমন্ত্রীদের বাসভবনের মর্যাদার উপযোগীভাবে সজ্জিত করা হবে এবং এর ব্যয় সরকার বহন করবে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ তিনি যেখানে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেবেন সেই স্থানেও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন ইত্যাদি সরবরাহের সমস্ত ব্যয় সরকার বহন করবে। যদি প্রধানমন্ত্রী নিজের বাড়ি বা সরকারি বাসভবন ছাড়া অন্য কোনো বাড়িতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তিনি প্রতি বছর ওই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই আইনের অধীনে প্রাপ্ত বাড়ি ভাড়া ভাতার তিন মাসের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন।

যদি প্রধানমন্ত্রী নিজের বাড়িতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন এবং সেই বাড়িতে গার্ডদের থাকার জন্য নির্ধারিত কোনো শেড না থাকে, তবে সরকার সেখানে একটি অস্থায়ী গার্ড শেড নির্মাণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগের পর পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত সরকারি বাসভবনে বসবাস করতে পারবেন। এ সময়েও তার ওপর কোনো ব্যয় চাপানো হবে না।

এসি/আপ্র/২৪/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন শেরে বাংলা নগরে হতে পারে

আপডেট সময় : ১২:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাসভবন নির্ধারণে কাজ শুরু করেছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, কমিটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের বিষয়ে সুপারিশও জমা দেয়। মূলত গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চেয়ে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে বেশি উপযোগী বলে মনে করছে কমিটি। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে বলে একটি সংবাদসংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ও নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়। তারা শেরে বাংলা নগরে দু’টি স্থান প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে প্রস্তুত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। একটি হচ্ছে- শেরে বাংলা নগরের সংসদ ভবন এলাকার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন, আরেকটি হচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এলাকা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওইদিন সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়ে। এটিতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসবাস করতেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’-এ রূপান্তরের কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নির্মাণকাজ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে, আর আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এটি উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছে জাদুঘর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ অবস্থায় নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে- এ বিষয়টি সরকারের সামনে আসে।

তাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রীদের বাসভবনের বিষয়ে সুপারিশ দিতে গত ৭ জুলাই উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছিল। ছয় সদস্যের এই কমিটির প্রধান ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদ (বর্তমানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক)। এই কমিটি রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

পরে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণের জন্য এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে দেওয়া হয়। এ কমিটির প্রধান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। এছাড়া সংসদ সচিবালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এ কমিটি করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গঠিত কমিটির সদস্যরা শেরে বাংলা নগর সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, কমিটির নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন দুটিকে একত্র করে অস্থায়ীভাবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন করা হবে। আলাদা দুটি ভবনের মধ্যে সহজ যাতায়াতের জন্য একটি দুই স্তরবিশিষ্ট করিডর নির্মাণ প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। একই সঙ্গে এ-১ ও এ-২ বাসা দুটিও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বাসভবন তো আগে থেকেই আছে। তারপরও সেটা আরেকটু দেখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়ছিল। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অন্য একটি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই সেটির বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে রূপান্তরের বিষয়টি বিবেচনায় ছিল। তবে যমুনা শহরের মধ্যবর্তী জায়গায়। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর চলাচল নগরবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগ ডেকে আনবে। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দূরত্বও শেষ। যাওয়া-আসায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়া মিন্টো রোডে বাংলো আছে। দুটি প্লট একত্র করেও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন করা যেতে পারে। তবে ক্ষেত্রে যানজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।

তাই দ্বিতীয় অপশন শেরে বাংলা নগরের কোথাও করাই সবচেয়ে উপযোগী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্পিকারের বাসভবন গণভবনের কাছাকাছি। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী চলাচল করলে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় খুব একটা প্রভাব পড়বে না। তাই এ অপশনটিকে অধিকতর সুবিধাজনক হিসেবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কমিটি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ বিষয় কাজ শুরু করবে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের মতো সংবেদনশীল স্থাপনার জন্য ঢাকা শহরে যুৎসই স্থান পাওয়া খুবই মুশকিল। কারণ এক্ষেত্রে একই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও সমান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে হবে। তাই খুব ভেবে ও যাচাই করে করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তবে গণভবনে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো সরকার প্রধান বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেননি। আর শেখ হাসিনাও এটি নিজের নামে লিজ নিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছেন। তারপরও গণভবন থাকায় সরকারগুলো প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা করে বাসভবন নির্মাণের কথা ভাবেনি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. আব্দুল মতিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের বিষয়ে সুপারিশ দিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি তাদের সুপারিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে এটি নিয়ে আমরা একটি মিটিংও করি। কিন্তু সেখানে সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। সেই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণের কাজ করছে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।’

মন্ত্রীদের আবাসন নিয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেই
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য আগে থেকে আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। তবে তাদের বাড়ি বিচারপতিসহ উচ্চ পর্যায়ের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাই মন্ত্রীদের জন্য যে বাড়ি আছে তা পর্যাপ্ত নয়। তাই গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কমিটিকে এ বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছি।

আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডে মন্ত্রীদের জন্য বাংলো বাড়ি আছে ১৫টি। এ ছাড়া বেইলি রোডে তিনটি মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট ভবন রয়েছে। সেখানে ৩০ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা (ফ্ল্যাট) আছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট। এ ছাড়া গুলশানের একটি সরকারি বাংলো বাড়িতে বিভিন্ন সময় কোনো না কোনো মন্ত্রী থেকেছেন। সে হিসাবে ৪৬ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা আছে। মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এখন ১২টিতে থাকছেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা। বাকি ১৮টির মধ্যে ১৪টিতে থাকছেন দুজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার চারজন বিশেষ সহকারী, চারজন নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুজন কমিশনারসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তারা।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি প্রতিবেদনে নতুন সরকারের মন্ত্রী ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য মিন্টো রোডের দুটি বাংলো বাড়ি নিয়ে আধুনিক ভবন নির্মাণের সুপারিশ করে। একইভাবে বেইলি রোডেও দুটি বাংলো বাড়িতে আধুনিক ভবন নির্মাণেরও সুপারিশ করে কমিটি।

এর বাইরে গুলশান ও ধানমন্ডিতে দুটি পরিত্যক্ত বাড়িতে মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি।

আইনে প্রধানমন্ত্রীর আবাসনের বিষয়ে যা আছে
প্রধানমন্ত্রী ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টারস (রেমুনারেশেন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ২০১৬’ এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা ‘দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ২০১৬’ অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

আইনে প্রধানমন্ত্রীর আবাসন সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী জন্য একটি সরকারি বাসভবন থাকবে, যা সরকারী ব্যয়ে সজ্জিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী নিজের বাড়িতে বা সরকারি বাসভবন ছাড়া অন্য কোনো বাড়িতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তিনি প্রতি মাসে এক লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া পাবেন। সেই বাড়িটি প্রধানমন্ত্রীদের বাসভবনের মর্যাদার উপযোগীভাবে সজ্জিত করা হবে এবং এর ব্যয় সরকার বহন করবে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ তিনি যেখানে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেবেন সেই স্থানেও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন ইত্যাদি সরবরাহের সমস্ত ব্যয় সরকার বহন করবে। যদি প্রধানমন্ত্রী নিজের বাড়ি বা সরকারি বাসভবন ছাড়া অন্য কোনো বাড়িতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তিনি প্রতি বছর ওই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই আইনের অধীনে প্রাপ্ত বাড়ি ভাড়া ভাতার তিন মাসের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন।

যদি প্রধানমন্ত্রী নিজের বাড়িতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন এবং সেই বাড়িতে গার্ডদের থাকার জন্য নির্ধারিত কোনো শেড না থাকে, তবে সরকার সেখানে একটি অস্থায়ী গার্ড শেড নির্মাণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগের পর পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত সরকারি বাসভবনে বসবাস করতে পারবেন। এ সময়েও তার ওপর কোনো ব্যয় চাপানো হবে না।

এসি/আপ্র/২৪/০৯/২০২৫