ঢাকা ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

নতুন পোপ হিসেবে আলোচনায় যাদের নাম

  • আপডেট সময় : ০৮:০৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : পোপ ফ্রান্সিস গতকাল সোমবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, ভ্যাটিকান এক ভিডিও বিবৃতিতে এই দুঃসংবাদ জানায়। কয়েকদিন আগেই তিনি একটি জটিল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ১২ বছর আগে ক্যাথলিক চার্জের সর্বোচ্চ আসনে বসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তার মৃত্যু নতুন করে সামনে এনেছে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কে হবেন ক্যাথলিক ধর্মের প্রায় ১.৩৯ বিলিয়ন অনুসারীর আগামীর নেতা? গির্জার জ্যেষ্ঠ পুরোহিতদের সমন্বয়ে গঠিত কার্ডিনাল পরিষদ পরবর্তী পোপ নির্বাচন করবেন। নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই একজন বাপ্টাইজড রোমান ক্যাথলিক পুরুষ হতে হবে।

যদিও বিগত কয়েক শতক ধরে কেবল কার্ডিনালদের মধ্য থেকেই পোপ নির্বাচন করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ২৪০ জনের বেশি কার্ডিনাল আছেন। এদের মধ্যে ১৩৮ জন ভোট দিতে পারবেন পরবর্তী পোপ নির্বাচনে। এর মধ্যে ১১০ জনকেই নিয়োগ দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ফলে, এবারের ভোটাররা আগের তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার। ধারণা করা হচ্ছে, এই শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো কোনও আফ্রিকান বা এশিয়ান পোপ নির্বাচিত হতে পারেন।
নতুন পোপ নির্বাচন
নতুন পোপ নির্বাচনের দায়িত্ব নেবেন কলেজ অব কার্ডিনালস। তারা হচ্ছেন পোপের মনোনীত ক্যাথলিক চার্চের জ্যেষ্ঠতম পদস্থ কর্তাব্যক্তি।
এই দলের সবাই পুরুষ। তারা সাধারণত বিশপ পদমর্যাদার হয়ে থাকেন। বর্তমানে ক্যাথলিক চার্চে ২৫২ জন কার্ডিনাল রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩৮ জন নতুন পোপ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। অন্যদের বয়স ৮০ এর ওপরে হওয়ায় তারা ভোট দিতে পারেন না। তবে পোপ নির্বাচনের আলোচনা পর্বে অংশ নিতে পারেন।
কত সময় লাগতে পারে?
কোনও পোপ মারা গেলে ভ্যাটিকানে বৈঠক ডাকেন কার্ডিনালরা। এরপরই শুরু হয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া, যা ‘কনক্লেভ’ নামে পরিচিত। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় সিসটিন চ্যাপেলে। এই নির্জন স্থানে শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলোর বিখ্যাত চিত্রকর্মে সাজানো রয়েছে। প্রত্যেক কার্ডিনাল তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। নতুন পোপ মনোনীত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভোটাভুটি চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়া কয়েক দিন ব্যাপী চলতে পারে। অতীতে সপ্তাহ বা মাসব্যাপী প্রক্রিয়া চলার উদাহরণও রয়েছে। এমনকি কনক্লেভ চলাকালে কার্ডিনালের মৃত্যুবরণ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কনক্লেভ চলাকালে বাইরের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ থাকে। এ সময় দিনে দুবার করে ধোঁয়ার সংকেত প্রদান করে অগ্রগতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়। কালো ধোঁয়া দেখা যাওয়ার মানে নির্বাচন ব্যর্থ হয়েছে, আর সাদা ধোঁয়া মানে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন পোপ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ক্যাথলিক চার্চ পরিচালনার দায়িত্ব থাকে কলেজ অব কার্ডিনালসের হাতে।

সম্ভাব্য নতুন পোপ যারা:
পিটার টার্কসন (ঘানা): তিনি পন্টিফিক্যাল কাউন্সিল ফর জাজস্টিস এন্ড পিস এর প্রাক্তন প্রধান। একজন কঠোর রক্ষণশীল নেতা, যিনি নিজ দেশে শান্তির পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
ফ্রিডোলিন অ্যামবঙ্গো (ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো): তিনি কিনশাসার আর্চবিশপ এবং সমাজ শান্তি ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ।
লুইস টাগলে (ফিলিপাইন): মানবিকতা ও দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোয় যিনি পোপ ফ্রান্সিসের আদর্শের খুব কাছাকাছি।
পিটার এরদো (হাঙ্গেরি): এসজ্টারগম-বুদাপেস্টের আর্চবিশপ, যিনি রক্ষণশীল মূল্যবোধের পক্ষে এবং ইস্টার্ন অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করেছেন।
পিয়েত্রো পারোলিন (ইতালি): ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অব স্টেট এবং দক্ষ কূটনীতিক, যিনি সমস্ত কার্ডিনালের কাছে পরিচিত মুখ।
মাত্তেও জুপ্পি (ইতালি): বলোনিয়ার আর্চবিশপ, যিনি সব সময় সংলাপ ও সহনশীলতার উপর জোর দেন।
মারিও গ্রেক (মাল্টা): সিনড অব বিশপসের সেক্রেটারি জেনারেল, যিনি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভবিষ্যতের পোপ সম্ভবত ইউরোপের বাইরের কোনও দেশ থেকে আসতে পারেন। যদি তাই হয়, তবে তা হবে ক্যাথলিক গির্জার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনার মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ২৭ বিশিষ্ট নারীর স্মারকলিপি

নতুন পোপ হিসেবে আলোচনায় যাদের নাম

আপডেট সময় : ০৮:০৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : পোপ ফ্রান্সিস গতকাল সোমবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, ভ্যাটিকান এক ভিডিও বিবৃতিতে এই দুঃসংবাদ জানায়। কয়েকদিন আগেই তিনি একটি জটিল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ১২ বছর আগে ক্যাথলিক চার্জের সর্বোচ্চ আসনে বসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তার মৃত্যু নতুন করে সামনে এনেছে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কে হবেন ক্যাথলিক ধর্মের প্রায় ১.৩৯ বিলিয়ন অনুসারীর আগামীর নেতা? গির্জার জ্যেষ্ঠ পুরোহিতদের সমন্বয়ে গঠিত কার্ডিনাল পরিষদ পরবর্তী পোপ নির্বাচন করবেন। নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই একজন বাপ্টাইজড রোমান ক্যাথলিক পুরুষ হতে হবে।

যদিও বিগত কয়েক শতক ধরে কেবল কার্ডিনালদের মধ্য থেকেই পোপ নির্বাচন করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ২৪০ জনের বেশি কার্ডিনাল আছেন। এদের মধ্যে ১৩৮ জন ভোট দিতে পারবেন পরবর্তী পোপ নির্বাচনে। এর মধ্যে ১১০ জনকেই নিয়োগ দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ফলে, এবারের ভোটাররা আগের তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার। ধারণা করা হচ্ছে, এই শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো কোনও আফ্রিকান বা এশিয়ান পোপ নির্বাচিত হতে পারেন।
নতুন পোপ নির্বাচন
নতুন পোপ নির্বাচনের দায়িত্ব নেবেন কলেজ অব কার্ডিনালস। তারা হচ্ছেন পোপের মনোনীত ক্যাথলিক চার্চের জ্যেষ্ঠতম পদস্থ কর্তাব্যক্তি।
এই দলের সবাই পুরুষ। তারা সাধারণত বিশপ পদমর্যাদার হয়ে থাকেন। বর্তমানে ক্যাথলিক চার্চে ২৫২ জন কার্ডিনাল রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩৮ জন নতুন পোপ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। অন্যদের বয়স ৮০ এর ওপরে হওয়ায় তারা ভোট দিতে পারেন না। তবে পোপ নির্বাচনের আলোচনা পর্বে অংশ নিতে পারেন।
কত সময় লাগতে পারে?
কোনও পোপ মারা গেলে ভ্যাটিকানে বৈঠক ডাকেন কার্ডিনালরা। এরপরই শুরু হয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া, যা ‘কনক্লেভ’ নামে পরিচিত। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় সিসটিন চ্যাপেলে। এই নির্জন স্থানে শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলোর বিখ্যাত চিত্রকর্মে সাজানো রয়েছে। প্রত্যেক কার্ডিনাল তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। নতুন পোপ মনোনীত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভোটাভুটি চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়া কয়েক দিন ব্যাপী চলতে পারে। অতীতে সপ্তাহ বা মাসব্যাপী প্রক্রিয়া চলার উদাহরণও রয়েছে। এমনকি কনক্লেভ চলাকালে কার্ডিনালের মৃত্যুবরণ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কনক্লেভ চলাকালে বাইরের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ থাকে। এ সময় দিনে দুবার করে ধোঁয়ার সংকেত প্রদান করে অগ্রগতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়। কালো ধোঁয়া দেখা যাওয়ার মানে নির্বাচন ব্যর্থ হয়েছে, আর সাদা ধোঁয়া মানে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন পোপ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ক্যাথলিক চার্চ পরিচালনার দায়িত্ব থাকে কলেজ অব কার্ডিনালসের হাতে।

সম্ভাব্য নতুন পোপ যারা:
পিটার টার্কসন (ঘানা): তিনি পন্টিফিক্যাল কাউন্সিল ফর জাজস্টিস এন্ড পিস এর প্রাক্তন প্রধান। একজন কঠোর রক্ষণশীল নেতা, যিনি নিজ দেশে শান্তির পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
ফ্রিডোলিন অ্যামবঙ্গো (ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো): তিনি কিনশাসার আর্চবিশপ এবং সমাজ শান্তি ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ।
লুইস টাগলে (ফিলিপাইন): মানবিকতা ও দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোয় যিনি পোপ ফ্রান্সিসের আদর্শের খুব কাছাকাছি।
পিটার এরদো (হাঙ্গেরি): এসজ্টারগম-বুদাপেস্টের আর্চবিশপ, যিনি রক্ষণশীল মূল্যবোধের পক্ষে এবং ইস্টার্ন অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করেছেন।
পিয়েত্রো পারোলিন (ইতালি): ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অব স্টেট এবং দক্ষ কূটনীতিক, যিনি সমস্ত কার্ডিনালের কাছে পরিচিত মুখ।
মাত্তেও জুপ্পি (ইতালি): বলোনিয়ার আর্চবিশপ, যিনি সব সময় সংলাপ ও সহনশীলতার উপর জোর দেন।
মারিও গ্রেক (মাল্টা): সিনড অব বিশপসের সেক্রেটারি জেনারেল, যিনি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভবিষ্যতের পোপ সম্ভবত ইউরোপের বাইরের কোনও দেশ থেকে আসতে পারেন। যদি তাই হয়, তবে তা হবে ক্যাথলিক গির্জার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি