নিজস্ব প্রতিবেদক : পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুকে জাতীয় সংসদের নতুন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করেছেন দেশের আইনসভার সদস্যরা।
গতকাল রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের ঊনবিংশতম অধিবেশনের শুরুতে সভাপতিম-লী মনোনয়নের পর তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। ডেপুটি স্পিকার হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকুর নাম প্রস্তাব করেন প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। টুকু একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় তার নির্বাচিত হওয়ার পথে কোনো বাধা ছিল না। তবে নিয়ম থাকায় প্রধান হুইপের প্রস্তাব ভোটে দেন স্পিকার। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
স্পিকার বলেন, “মাননীয় সদস্য শামসুল হক টুকু জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।“
নতুন ডেপুটি স্পিকারকে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির চেম্বারে এই শপথ অনুষ্ঠান হয়।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ফজলে রাব্বী মিয়া একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে ডেপুটি স্পিকারের পদ এবং গাইবান্ধা-৫ আসন শূন্য হয়। নিয়ম অনুযায়ী স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের পদ শূন্য হলে ওই সময় যদি সংসদের অধিবেশনের থাকে, তাহলে সাত দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। আর অধিবেশনে না থাকলে পরের অধিবেশনের প্রথম দিন নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেজন্য রোববার দিনের কর্মসূচির শুরুতেই ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র টুকু মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা প্রথমবার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে বসেন। প্রথমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় টুকুকে। পরে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত টুকু বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ১৯৪৮ সালের ৩১ মে পাবনার বেড়া উপজেলায় বৃশালিখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শামসুল হক টুকু। তিন পুত্র সন্তানের জনক তিনি।
ফজলে রাব্বী মিয়াসহ যাদের নামে সংসদে শোক প্রস্তাব : একাদশ জাতীয় সংসদের প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলে রাব্বী মিয়া ও সাবেক ৬ জন এমপিসহ বিশিষ্টজনদের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে এই শোক প্রস্তাব আনা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি পড়ে শোনান। এরপর মরহুমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অধিবেশনে উপস্থিত এমপিরা একমিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করেন। এরপর মরহুমদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
ডেপুটি স্পিকার ছাড়াও সাবেক গণপরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এম আবু ছালেহ (৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচন, তৎকালীন সাতকানিয়া-কুতুবদিয়া-চকরিয়া, এন-ই-১৬০), সাবেক সংসদ সদস্য আব্বাস আলী মন্ডল (তৃতীয় জাতীয় সংসদ, জয়পুরহাট-১), সাবেক সংসদ সদস্য করিম উদ্দিন ভরসা (পঞ্চম জাতীয় সংসদ, রংপুর-১ এবং সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ, রংপুর-৪), সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শোয়েব (চতুর্থ জাতীয় সংসদ, দিনাজপুর-৫) এবং সাবেক সংসদ সদস্য খোরশেদ আরা হকের (দশম জাতীয় সংসদ, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৫০) মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়।
স্পিকার এ সময় বলেন, উল্লিখিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্ত সম্বলিত শোক প্রস্তাব আমি এ মহান সংসদে উত্থাপন করছি। শোক প্রস্তাবের অনুলিপি আপনাদের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। তাদের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে।
এছাড়া স্বাধীনতা পদক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট প্রতœতত্ত্ববিদ, ইতিহাস ও শিল্পকলা বিশারদ এবং জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এনামুল হক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম খান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ নৌ অভিযান পরিচালনাকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সাবেক সচিব এটিএম শামসুল হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল বোস, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরবিক্রম শতকত আলী সরকার, মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বদরুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুস সালেহীন, দেশের সিনেমা ও নাট্যাঙ্গনের বরেণ্য অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক অমিত হাবিবের মৃত্যুতে মহান সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে, উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনায়, শ্রীমঙ্গলে টিলা ধসে, তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ ও মারদিনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায়, আফগানিস্তানে বন্যায় এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সব বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। স্পিকার বলেন, উত্থাপিত শোক প্রস্তাবগুলো ছাড়া যদি কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নাম বাদ পড়ে থাকে, তবে তার বা তাদের নাম ও সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছে দিলে তা পরবর্তী সময়ে প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিবেচনা করা হবে।
নতুন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ