নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর নটরডেম কলেজ ক্যাম্পাস থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া এক ছাত্রের প্রাণ গেছে। কলেজের ‘ভবনের বারান্দা থেকে পড়ে’ তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে শিক্ষার্থীদের ধারণা। ধ্রুবব্রত দাস (১৮) নামে ওই শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার (১২ মে) বিকালে সোয়া ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে এ হাসপাতালের পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান।
ধ্রুবব্রত পরিবারের সঙ্গে গোপীবাগের একটি বাসায় থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ধ্রুব। বাবা বাণীব্রত দাস বলেন, প্রবেশপত্র আনার জন্য ছেলের সঙ্গে কলেজে গিয়েছিলেন। তিনি কলেজ গেইটের বাইরে ছিলেন। তার ছেলে গিয়েছিলেন প্রবেশপত্র আনতে। কিন্তু একটু পর দেখতে পান অন্য শিক্ষার্থীরা তার ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ধরাধরি করে নিয়ে আসছে।
ধ্রুবকে প্রথমে কাছের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিকেল সোয়া চারটায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধ্রুব কীভাবে রক্তাক্ত হলেন, সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি তারা বাবা বাণীব্রত দাস। তিনি বলেন, ‘আমি গেইটের বাইরে থেকে ছেলেকে ফোন দিয়েছিলাম, সে বলছিল বাবা ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগবে বের হতে। কিন্তু পরে তাকে পাই গুরুতর আহত অবস্থায়। কীভাবে কী হলো, আমি কিছুই বলতে পারব না।’
ওই কলেজের এক শিক্ষার্থী নাফিজ রহমান বলেন, ‘আমরা হঠাৎ একটি শব্দ পাই। বাইরে গিয়ে দেখি সে রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। পরে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
‘বারান্দা থেকে অসাবধানতাবশত’ সে নিচে পড়ে যেতে পারে বলে ধারণা শিক্ষার্থীদের। পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট থানায় অবগত করা হয়েছে।
নিহত ধ্রুবব্রত দাসের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সদর থানার মধ্যপাড়া এলাকায়। বর্তমানে টিকাটুলির ৪৮/৯ বাসার মাসকান ভিলার ৩/ এ বাসায় ভাড়া থাকতেন। ওই শিক্ষার্থীর মা তমা রানি সিং দাবি করেন, তার ছেলেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
নিহত শিক্ষার্থীর মা তমা রানি সিং বলেন, আমার ছেলে অনেক শান্তশিষ্ট, ভদ্র ছিল, আমার দুইটাই ছেলে। আজ টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্টের কার্ড আনতে কলেজে গিয়েছিল। এই বছর সে নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। তার বাবা তার সঙ্গে কলেজে গিয়েছিল, তবে গার্ডিয়ান কলেজে ঢুকতে না দেওয়ায় তার বাবা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। এক-দেড় ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও সে বের না হলে আমাকে ফোন দেয়। পরে আমি তার বাবাকে জানাই, তার কাছে ছোট মোবাইল আছে তাকে ফোন দেও, তার বাবা বেশ কয়েকবার ফোন দিলে সে ফোন ধরেনি। এর কিছুক্ষণ পরে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ তাকে গেটের বাইরে নিয়ে আসলে জানায়- সে ভবন থেকে পড়ে গেছে। পরে তাকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তমা রানি সিং আরো বলেন, সে এভাবে পড়ে মারা যেতে পারে না তাকে হয়ত কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেলেছে।
নিহতের কয়েকজন সহপাঠী জানায়, আমরা কমার্স ভবনের এক তলায় ছিলাম। সে কি কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হয়ে কমার্স ভবনে এসেছিল সেটা বলতে পারিনা। আমাদের কমার্স ভবন থেকেই সে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। নটরডেম কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শুভাশিষ সাহা বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছি। শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে পেরেছি- কমার্স ভবনের যে-কোনো ফ্লোর থেকে সে নিজেই পড়ে মারা গেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলে জানা যাবে এটি হত্যা না দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, আমরা ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরেছি। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি তৃতীয় তলার রেলিংয়ের ওপর সে বসা ছিল; সেখান থেকে অসাবধানতাবসত নিচে পড়ে মারা গেছে। তদন্ত চলছে বিস্তারিত পরে জানা যাবে।