আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে নজিরবিহীন বৃষ্টিপাতে বহু শহর পানিতে তলিয়ে গেছে, নিরুপায় বাসিন্দারা বাড়ির ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, কর্তৃপক্ষ প্রাণঘাতী হড়কা বানের সতর্কতা জারি করেছে। সোমবার ভারি বৃষ্টিতে ওই উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বিপর্যন্ত হয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া প্লাবনে এ পর্যন্ত নয় জনের মৃত্যু হয়েছে, উদ্ধারকারী দলগুলো সোমবার নিখোঁজ বলে কথিত অন্তত চার ব্যক্তির সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন নজিরবিহীন এ বৃষ্টিকে ‘আবহাওয়া বোমা’ বলে অভিহিত করেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে উদ্ধারে ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মেরামতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, ‘পাগলাটে আবহাওয়া’ কুইন্সল্যান্ড রাজ্য থেকে দক্ষিণ দিকে প্রতিবেশী নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের দিকে সরে যাচ্ছে, ফলে এ রাজ্যের উত্তর দিকে হড়কা বানের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এনএসডব্লিউ এর মুখ্যমন্ত্রী ডমিনিক পেরোটেট টেলিভিশনে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “আজ আমরা যা দেখছি তা নজিরবিহীন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
সোমবার সকালে কুইন্সল্যান্ডের রাজধানীতে ব্রিসবেন নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর ব্রিসবেনের বেশ কয়েকটি রাস্তা ডুবে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিগুলোতে ডুবে থাকা বাড়ি এবং রাস্তায় ভাসতে থাকা গাড়ি, নৌকা, ডাস্টবিন ও ময়লা-আবর্জনা দেখা গেছে। এনএসডব্লিউর উত্তরাঞ্চলীয় শহর লিজমোরে পুরো সিবিডি পানিতে তলিয়ে গেছে এবং শহরটির উইলসন নদীর পানির উচ্চতা সোমবার বিকালে প্রায় ১৪ দশমিক ২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া ব্যুরো। এমনটি হলে ১৯৫৪ সালে হওয়া এ নদীর পানির সর্বে্চ্চা উচ্চতার রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে জানা গেছে। শহরটির মেয়র স্টিভ ক্রেইগ পরিস্থিতিকে ‘নারকীয়’ বলে বর্ণনা করে ছাদে আশ্রয় নিয়ে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পানি বেড়ে ওঠার গতি দেখে বাসিন্দারা আশ্চর্য হয়ে গেছেন। শহরটির প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দাকে অবিলম্বে তাদের বাড়ি ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
লিজমোরের বাসিন্দা কারা অ্যাহার্ন জানিয়েছেন, দুই ঘণ্টার মধ্যে তাদের বাড়ি ডুবে যাওয়ার পর তারা ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখান থেকে তিনি, তার পার্টনার ও তিন সন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে। গণমাধ্যম এবিসিকে তিনি বলেন, “আমাদের পোষা প্রাণীগুলোকেও ফেলে আসতে হয়েছে, এমনকী জুতা পরারও সময় পাইনি আমরা।” অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল টানা দ্বিতীয় বছরের মতো আবহাওয়া প্যাটার্ন লা নিনার কবলে পড়েছে। লা নিনার সময়টিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ফেব্রুয়ারির সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও একদিনেই এক মাসের বা এক বছরের মোট বৃষ্টিপাতের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এসব অঞ্চলের প্রায় লাখো বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় লাখখানেক মানুষকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে, তাদের সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ওই অঞ্চলের কয়েক হাজার স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং অন্তত ৫০ হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। যে নয় জন মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই হয় হেঁটে অথবা গাড়িতে করে বন্যাকবলিত রাস্তায় পার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সোমবার সকালে ডুবন্ত একটি গাড়িতে এক ব্যক্তিকে তার পোষা কুকুরসহ মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
নজিরবিহীন বৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বহু শহরে বন্যা, ৯ মৃত্যু
জনপ্রিয় সংবাদ