নিজস্ব প্রতিবেদক : অনেকেই আছেন, যারা নিজেদের ধরা-বাঁধার দায়িত্বের বাইরেও কাজ করতে চান মানুষের সেবায়। এমন দুজনের খোঁজ মিললো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর ১০ কার্যালয়ে। তারা হলেন কার্যালয়ের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ আলম ও মশক স্প্রে-ম্যান রফিকুল ইসলাম। কার্যালয়ের বাইরে একটি বড় চৌবাচ্চা। ওতে চাষ হচ্ছে গাপ্পি মাছের। গাপ্পি মাছের প্রিয় খাবার মশার ডিম ও লার্ভা। ডা. ফিরোজ ও রফিকুল এ মাছের চাষ করছেন বিশেষ এক উদ্দেশ্যে। তারা এই মাছ ছাড়েন রাজধানীর বিভিন্ন নর্দমা ও জলাশয়ে। যাতে সেখানে গাপ্পির বংশবিস্তার ঘটে ও জলাশয়টি মশামুক্ত হয়। কাজটি তারা করছেন স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবেই।
তারা জানিয়েছেন, পাঁচ মাস আগে তারা এ মাছের চাষ শুরু করেছেন। এখান থেকে গাপ্পি নিয়ে তারা মিরপুরের বিভিন্ন নর্দমায়ও ছাড়ছেন। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, তারা মূলত এ কাজের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ হানিফের কাছ থেকে। তিনি ১৯৯৫ সালে মাছগুলো থাইল্যান্ড থেকে এনে ঢাকার বিভিন্ন ডোবা ও নর্দমায় ছেড়েছিলেন। ‘এখন মাছগুলো বিভিন্ন নালায় পাওয়া যায়। সেগুলোই আমরা ধরে এনে চাষ করি’, জানালেন ডা. ফিরোজ। তিনি বললেন, একবার মশক নিধন কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে দেখি মাছগুলো। আমাদের পুরনো যারা মশককর্মী ছিলেন ওরা বললেন, স্যার এগুলো ২৭ বছর আগের সেই গাপ্পি মাছ। পরে আমাদের কীটতত্ত্ববিদরা নিশ্চিত করলেন এটি আসলেই সেই গাপ্পি।
তিনি বলেন, ‘এটা যখন বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছিল, তখন আমাদের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নির্দেশ দিলেন, যেখানে বেশি পাওয়া যায় সেখান থেকে ধরে মাছগুলো অন্য নর্দমায় ছড়িয়ে দিতে।’
‘ছাঁকনি দিয়ে এগুলো সংগ্রহ করা কঠিন। তখন আমার মাথায় চিন্তা এলো আমরা এটি অ্যাকুয়ারিয়ামেই চাষ করবো। সেখান থেকে ধরে পরে নর্দমায় ছাড়বো।’
ডা. ফিরোজ জানান, এ মাছগুলো মূলত প্যারিস রোড, কল্যাণপুর, টোলারবাগ, শ্যামলীর বিভিন্ন রাস্তার নর্দমা ও খালে প্রচুর দেখা যায়। এ জায়গাগুলো থেকেই তারা মাছটি সংগ্রহ করেন চাষের জন্যে।
উত্তর সিটির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারোয়ার জানান, অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি, মাছ চাষ ও এর দেখাশোনা ডা. ফিরোজ নিজ উদ্যোগে করছেন। তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন মশককর্মী রফিকুল ইসলাম। মাছের খাবার কেনার টাকাও ডা. ফিরোজ নিজে থেকে দেন।’
গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) মিরপুর ১০ কার্যালয়ের সামনের অ্যাকুয়ারিয়ামে দেখা যায় মাছের খাবার দিচ্ছেন রফিকুল। তিনি বলেন, ১১টার সময় ডিউটি শেষ করে মাছের যতœ নেওয়া শুরু করি। মাছের খাবার দেওয়া, কচুরিপানা দেওয়া, পানি বদলানো, ওপরে জাল দেওয়া এসব নিয়মিত করতে হয়। অনেক কষ্ট করে এগুলো ধরে আনি। ড্রেনে মলমূত্র-আবর্জনা থাকে। এরমধ্যেই জাল টানতে হয়। এসব কাজ কেন করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো চাষ করার পর এলাকায় মশা কমেছে। মশা কমলে তো আমাদের সুনাম, সিটি করপোরেশনেরও সুনাম।’
তিনি জানান, গাপ্পি মাছ দ্রুত বাড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক মাছ প্রতি তিন দিনে বাচ্চা দেয়। অল্প কিছু ছাড়া হলে এক সপ্তাহে অ্যাকুয়ারিয়াম ভরে যায়। তিনি আরও বলেন, অ্যাকুয়ারিয়াম নির্মাণ, জাল ও খাবার কেনাসহ যাবতীয় খরচ স্যার (ডা. ফিরোজ) দেন। তিন-চার দিন পর পর ১০০ টাকার খাবার লাগে।’
উত্তর সিটির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সারোয়ার বলেন, ‘ফিরোজের উদ্যোগে মিরপুর-২ এলাকায় একটি ডোবায় ও দক্ষিণখানের ফায়েদাবাদে আরও একটি অ্যাকুয়ারিয়ামে এ মাছের চাষ শুরু হচ্ছে। আমরা তার কাজের উচ্চ প্রশংসা করি।’
নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে নিভৃতে গাপ্পি চাষ করছেন তারা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ