নওগাঁ সংবাদদাতা: নওগাঁয় পৈতৃক সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে স্বাক্ষর জাল করে নামজারি করার অভিযোগ উঠেছে। নওগাঁ মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের কিউরেটর ভগ্নিপতি ডাক্তার আবু জার গাফ্ফার এবং তৎকালিন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতুর জোগসাজসে নামজারিটি করা হয়। ঘটনায় ভুক্তভোগী জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ জালিয়াতি কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়ে গত ২ অক্টোবর দূর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগী নওগাঁ শহরের কাজীর মোড়ের বাসিন্দা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভের বাবা আমিনুল ইসলাম কবিরাজ গত ২০২১ সালের ১৪ জুলাই মারা যান। মারা যাওয়ার আগে ছেলে সৌরভকে নালি তফশিল বর্নিত সম্পত্তি ও মার্কেট দখল দিয়ে রক্ষণবেক্ষণ করার দায়িত্ব প্রদান করেন। কিন্তু কৌশলে ভগ্নিপতি ডা. আবু জার গাফফার (৪৬) তার শ্যালক সৌরভের স্বাক্ষর জাল ও তার ছবি ব্যবহার করে তহশীল অফিসে মোট ৩০০ শতাংশ জমির জন্য চারটি নামজিরি আবেদন করেন। এছাড়া নামজারি আবেদনে যে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও সৌরভের না। সৌরভ বিষয়টি জানার পর নামজারি স্থগিত এবং নতুন করে নামজারি না দেয়ার এ জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আবেদন করেন। ফলে নামজারি আবেদনটি বাতিল হয়। কিন্তু ১৫ দিন পর পুনরাই ওই সম্পত্তির মধ্যে তাকে ছাড়াই ৩৭ শতাংশ জমির জন্য দুটি নামজারি আবেদন করা হয়। এরপর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আইনবর্হিভূত ভাবে একতরফা শুনানি শেষে নামজারি মুঞ্জুর করেন তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু। ঘটনার পর সহকারি কমিশনারের (ভূমি) বিরুদ্ধে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করলে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। পরবর্তীতে উপরোক্ত বিষয়ে প্রেক্ষিতে ডা. আবু জার গাফফারকে ১নং আসামি করে স্বাক্ষর জাল করার কারণে নওগাঁ ১ নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন সৌরভ।
ভুক্তভোগী জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ বলেন, বিশেষ সূত্রে বিষয়টি জানার পর নামজারী আবেদন স্থগিত এবং নতুন করে নামজারি করতে না পারে, এ জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) নওগাঁ সদরে আবেদন করা হয়। এতে আবেদনটি বাতিল হয়। কিন্তু আমাকে ছাড়াই ১৫ দিন পর নতুন করে আবারও তারা দুটি আবেদন করে ৩৭ শতাংশ জমি নামজারি করে নেয়। তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আইনবর্হিভূত ভাবে করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আবু জার গাফ্ফার একজন ডাক্তার হলেও মুখোশধারী ভূমিদস্যু। তিনি আমার স্বাক্ষর জাল ও ছবি ব্যবহার করে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে পৈতৃক সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখলের চেষ্টা করছেন। ইতোপূর্বে তিনি আমাকে হত্যার চেষ্টাও করেছেন। এই কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
সাবেক নওগাঁ সদর ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু বলেন, আইনগত প্রক্রিয়ায় শুনানি নিয়ে সবকিছু মেনেই কাজ করা হয়েছে। জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ যদি বলে থাকেন তাহলে তিনি মিথ্যা বলেছেন। যে নামজারি হয়েছে সেখানে তিনি কোনো পক্ষভুক্তই না। তারপরও অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে ডেকে শুনানি নেয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে কাজ করার অভিযোগটি সত্য নয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডা. আবু জার গাফফার বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ব্যাপারে শ্যালক জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ বাদী হয়ে আমিসহ স্ত্রী নুরে ই-আফসানা জেরির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল। যা পরবর্তীতে আদালতে খারিজ হয়ে যায়। খারিজের বিরুদ্ধে পুণরায় শুনানি হয়েছে। আগামী ৮ অক্টোবর চুড়ান্ত রায় হবে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নওগাঁর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নওসাদ আলী বলেন, এটি আমাদের একটি তফশীলভুক্ত অভিযোগ। আমরা ঢাকা অফিসে পাঠানোর পর অনুমোদন হয়ে আসলে তদন্ত শুরু করা হবে।