নওগাঁ সংবাদদাতা : নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে প্রায় এক মাস ধরে ৫টি পরিবারকে গৃহবন্দি করে রেখেছে স্থানীয় হাসান মল্লিকসহ এলাকার মাতব্বররা। অভিযোগ রয়েছে, কৃষ্ণপুর গ্রামের ক্ষমতালোভী এলাকার মাতব্বরের নির্দেশে কতিপয় বেশকিছু দুষ্কৃতকারী জনসাধারণের পায়ে চলা রাস্তায় বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে ৫ পরিবারকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
স্থানীয়রা জানায়, গত মাসে কৃষ্ণপুর ব্রিজের রাস্তার ধারে লাউ-কুমড়ার গাছ খাওয়া কেন্দ্র করে ছাগল পেটানো হয়। পরে গ্রামের মাতব্বরের সহযোগিতায় আহত ছাগল জবাই করে দুলাল-হাসানসহ গ্রামের একাংশ লোকজন খেয়ে ফেলে। ঘটনার একপর্যায়ে ছাগলের মালিক হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় মাতববরের পরামর্শে বেলাল মল্লিকসহ তার পাশবর্তী আত্নীয়স্বজনসহ ৫টি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার তিনদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়। ফলে গত এক মাস পরিবারগুলো গৃহবন্দি অবস্থায় আছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, ওই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ বেলাল মল্লিক রাত্রি প্রায় সাড়ে ১০টা সময় বিলের মধ্য বানার মাছ নিতে গেলে স্থানীয় মাতব্বরদের পরিকল্পনায় হাসান মল্লিকসহ জব্বার, দুলাল ও তাদের পরিবারের মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে বেলাল মল্লিককে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিত আক্রমণ করে। কৃষ্ণপুর ব্রিজের রাস্তার পাশে সাত-আটজন মিলে লাঠিসোটা, ইট, পাথর দিয়ে মেরে গুরুতর আহত করে। বেলাল মল্লিককের অন্ডকোষ চেপে ধরে পানির মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে বেলাল মল্লিক প্রাণে বাঁচার চেষ্টায় ডাক-চিৎকার দিতে দৌড়াতে থাকে। এক সময় মোয়াজ্জেমের বাড়ির সামনে এসে পড়ে যায়। মোয়াজ্জেম ওই রাতে আহত বেলাল মল্লিকে সঙ্গে নিয়ে তার পরিবারসহ নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বররা জানান, তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে। তা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা সম্ভব ছিল। কিন্তু এলাকার কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারী একটি মহল চাঁদা দাবি করছে।
হাসান ও জব্বার বলে, স্থানীয় মাতব্বরের হুকুম ছাড়া তারা কখনোই বেড়া সরাবে না। আর যতই মামলাf-মোকদ্দমা করুক, সেটি দেখে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। ছোট ঘটনাটি এলাকার কয়েকজন মিলে মীমাংসা করতে দিচ্ছে না। শুনেছি, মোয়াজ্জেম ও তার বউ মরিয়ম মামলা করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করবে। এ জন্য বেলালকে চাঁপের মধ্যে রেখেছে এবং টাকা খরচ করিয়েছে। জব্বার অভিযোগ করে বলে, ঘটনা কেন্দ্র করে মোয়াজ্জেম আমার জায়গা দখল করে মাটি ফেলেছে। মোয়াজ্জেমের কাছে আমি জমি পাবো। সে এসব ষড়যন্ত্র করছে। মোয়াজ্জেমের বউ মরিয়ম সর্বদায় অকারণে বকা-ঝকা করে প্রাণে মেরে ফেলা ও মামলার হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে আহত বেলাল মল্লিক ও তার স্ত্রী জানায়, নওগাঁ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও এখন পর্যন্ত যাতায়াতের রাস্তার বেড়া সরায়নি। বর্তমানে তারা চাঁদার দাবিও করছে। চাঁদার টাকা না দিলে আর বেঁচে থাকার সুযোগ দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছে। তাই তারা বাড়িও যেতে পারছে না। এ জন্য তারা আইনগত ভাবে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
এ বিষয়ে নওগাঁর ভীমপুর পুলিশ ফাঁড়ির তদন্ত কেন্দ্রের সাব-ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দীন জানান, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। জনসাধারণের রাস্তার বেড়া সরিয়ে দেওয়ার কথা বলে এসেছেন। পরে অভিযোগের সূত্র ধরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

























