ক্রীড়া প্রতিবেদক : আফগানিস্তানের দেয়া ২১৬ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেটে হারালে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ শিবির। এমতাবস্থায় সপ্তম উইকেটে রেকর্ডগড়া জুটিতে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলে দলকে ৪ উইকেটের জয় উপহার দিলেন আফিফ হোসেন এবং মেহেদি হাসান মিরাজ। তাতে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগার।
চট্টগ্রামর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে লো-স্কোরিং ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমে আফগান বোলার ফজলে হক ফারুকীর বোলিং তোপে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। এরপর ফেরেন দলের আরও দুই ব্যাটার। সে সময় দলীয় স্কোর ছিল মাত্র ৪৫ রান। আর বাংলাদেশ হারিয়েছিল ছয় উইকেট।
লিটন দাস ১ রানে, তামিম ইকবাল ৮ রানে, মুশফিকুর রহিম ৩ রানে এবং শূন্যরানে ইয়াসির রাব্বি, ১০ রানে সাকিব এবং ৮ রানে আউট হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এ সময় মনে হচ্ছিলো লজ্জার ইনিংসের রেকর্ড গড়তেই যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু সপ্তম উইকেট জুটিতে আফগান বোলারদের বুড়ো আঙুল দেখাতে থাকেন আফিফ হোসেন এবং মেহেদি হাসান মিরাজ। দেখে-শোনে খেলতে খেলতে এক সময় দলকে জয়ের স্বপ্নই দেখান তারা। আর শেষ পর্যন্ত স্বপ্নকেও পরিণত করেন সত্যিতে।
সপ্তম উইকেটে দুজন মিলে ১৭০ রানে অপ্রতিরোধ্য জুটি গড়েন। যা বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে রেকর্ড। এর আগে ১২৭ রান করেছিলেন ইমরুল কায়েস এবং সাইফউদ্দিন। এছাড়া ক্রিকেটবিশ্বে সপ্তম উইকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ২০১৫ সালে জস বাটলার এবং আদিল রশিদ মিলে তুলেছিলেন ১৭৭ রান।
আফিফ এবং মিরাজ দুজনই অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন। আফিফ হোসেন ৯৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১১৫ বলে খেলা এই শৈল্পিক ইনিংসটি ১১টি চার এবং একটি ছয়ে সাজানো। এদিকে ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।
এর আগে ম্যাচের শুরুতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ৭ রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ। এরপর ১৯ রানে ইব্রাহিম জাদরান এবং ৩৪ রানে ফেরেন রহমত শাহ। আর মোহাম্মদউল্লাহর বলে সাজঘরে ফেরার আগে ২৮ রান তুলেন দলনেতা শহিদী।
একশর মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপেই পড়ে আফগানরা। এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ নবি এবং নাজিবুল্লাহ জাদরানের ৬৩ রানে জুটিতে চাপ সামলে কিছুটা বাড়ে দলীয় স্কোর। ২০ রানে আউট হন নবি।
এছাড়া ১৭ রানে গুলবাদিন নায়েব, শূন্যরানে রশিদ খান, ৫ রানে আহমেদজাই এবং শূন্যরানে মুজিব উর রহমান সাজঘরে ফেরেন। এদিকে দলকে একাই টানতে থাকা নাজিবুল্লাহ জাদরান ফিফটি পূর্ণ করার পর আউট হন ব্যক্তিগত ৬৭ রানে। আর শূন্যরানে অপরাজিত থাকেন ফজলেহক ফারুকি। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন তিনজন বোলার।
জুটি বেঁধে বিশ্ব রেকর্ডে আফিফ-মিরাজের নাম : পাওয়ার প্লে’র মধ্যে সাজঘরে পাঁচ ব্যাটার। বিপর্যয় সামাল দিতে গিয়ে উল্টো বাজেভাবে আউট হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আফগানিস্তানের করা ২১৫ রানের জবাবে মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন দিশেহারা অবস্থা বাংলাদেশ দলের। সেখান থেকে হাল ধরলেন দুই তরুণ মেহেদি হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। শুধু হালই ধরলেন না, রীতিমতো বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে। সপ্তম উইকেটে এ দু’জন মিলে গড়েছেন ১৭৪ রানের জুটি। যা বাংলাদেশের পক্ষে সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে সপ্তম উইকেটে ১২৭ রান যোগ করেছিলেন ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সেদিন ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রানের ইনিংস খেলেন ইমরুল। আর সাইফউদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে ৫০ রানের ইনিংস। এ দু’জনের কল্যাণে ১৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও ২৭২ রানের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ।
মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে ইমরুল-সাইফউদ্দিনকে টপকে গেলেন আফিফ-মিরাজ। তারা দু’জন মিলে শুধু বাংলাদেশের পক্ষেই সর্বোচ্চ নয়, সবমিলিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন। মাত্র ৩ রানের জন্য নিজেরা শীর্ষে উঠতে পারলেন না তারা। সপ্তম উইকেট জুটিতে বিশ্ব রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও আদিল রশিদের। ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাটলার ও রশিদ মিলে যোগ করেছিলেন ১৭৭ রান।
ধ্বংসস্তূপ থেকে অবিশ^াস্য জয় আনলেন আফিফ-মিরাজ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ