বিদেশের খবর ডেস্ক : জিম্মি আর্বেল ইয়েহুদ নিয়ে ইসরায়েল সঙ্গে হামাসের সমঝতার পর ফিলিস্তিনিদের জন্য উত্তর গাজায় ফেরার পথ খুলে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও বন্দি মুক্তির চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে সাতজন জিম্মি এবং প্রায় ৩০০ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) মুক্তিপ্রাপ্ত চার জিম্মিদের মধ্যে ইয়েহুদ না থাকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে বাধা দেয়।
পরে যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার জানায়, নতুন সমঝতা অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) তৃতীয় দফার জিম্মি-বন্দি বিনিময়ে, হামাস আর্বেল ইয়েহুদসহ অন্য দুই জিম্মিকে মুক্তি দেবে, পরে শনিবার আরও তিনজন মুক্তি দেওয়া হবে। এই সমঝতার পর উত্তর গাজায় ফেরার পথ খুলে দেয় ইসরায়েল। বিবিসি প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার পথে হাঁটছেন। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের উত্তর দিকে যেতে অনুমতি দেওয়ার পর সপ্তাহের মধ্যে আরও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী, শনিবার থেকে ফিলিস্তিনিদের নেটজারিম করিডোর পেরিয়ে উত্তর দিকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কথা ছিল। গাজা যুদ্ধ শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরাইয়েল যা উত্তর গাজাকে বাকি ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ইসরায়েল জানিয়েছে তারা স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে গাজার উত্তর অংশে বাসিন্দাদের ফিরে আসার অনুমতি দেবে, এবং দুই ঘণ্টা পর যানবাহন প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিরা আশা করছে, যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হবে এবং তারা নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে।
গাজায় ধ্বংসস্তূপে একের পর এক লাশ
দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর চলতি মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপরও বেড়েই চলেছে প্রাণহানি। মূলত ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৭ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। বার্তাসংস্থাটি বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৩০৬ জনে পৌঁছেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ১৪ জনের লাশ উদ্ধারের পর নিহতের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন তাদের আঘাতের কারণে মারা গেছে এবং ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন।
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, হামলায় আরও ১১ জন আহত হয়েছেন।
এতে করে ইসরায়েলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৪৮৩ জনে পৌঁছৈছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের আপাতত অবসান ঘটলেও ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি আক্রমণে নিখোঁজ রয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।