বিদেশের খবর ডেস্ক : শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়া। বহু ভবন ভেঙে পড়েছে। বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে হতাহত হয়েছেন। সোমবার ভোরের দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। তুরস্কের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের উদ্ধারকারী দল উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। অনেক দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায় সহায়তা সামগ্রী পাঠাচ্ছে। সোমবারের ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়া ভবনের নিচ থেকে কাউকে জীবিত উদ্ধারে আশা ক্ষীণ। তবুও কাউকে কাউকে জীবিত উদ্ধার করছেন উদ্ধারকারীরা। ধ্বংসস্তূপের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছানো বেশ দুরূহ। পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়াও রয়েছে। তবুও উদ্ধারকারীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এক ছোট্ট শিশুকে জীবিত পাওয়া গেল। সিরিয়ান এই শিশুটির নাম মোহাম্মদ। তুরস্কের হাতায়ে প্রদেশে একটি ভবনের নিচে চাপা পড়েছে সে। ভূমিকম্পের পর ৪৫ ঘণ্টা পর তাকে জীবিত পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এক ভিডিওতে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা শিশুটি বোতলের ক্যাপ দিয়ে মুখে পানি তুলে দিচ্ছেন। আর শিশুটি পানি খাচ্ছে। ভবনের নিচ থেকে তাকে বের করে আনার চেষ্টা চলছে।
৪৮ ঘণ্টা পর ২ মাসের শিশুকে জীবিত উদ্ধার
ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে বিধ্বস্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই মাস বয়সী এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার কাহরামানমারাস প্রদেশের ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা হয় বলে তুরস্কের সরকারি সংবাদমাধ্যম আনাদোলুর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আনাদোলু বলছে, এলবিস্তান জেলায় ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার মোহাম্মদ দোগান বোস্তান নামের ওই শিশুকে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধারের সময় শিশু মোহাম্মদ তার হাতের আঙুল চুষছিল। শিশুটিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনার কিছুক্ষণ আগে তার মাকেও জীবিত উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তুরস্কের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলেছে, সোমবারের দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৭৪ জন নিহত হয়েছে।
তবে ভূমিকম্পে সিরিয়ায় হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে দেশটির সরকার বুধবার পর্যন্ত ভূমিকম্পে ২ হাজার ৬৬২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে। সোমবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে সিরিয়া ও তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। তখন সেখানে লোকজন ঘুমিয়ে ছিলেন। স্মরণকালের এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন।
কেন্দ্রস্থলের কাছের শহর তুরস্কের গাজিয়ানতেপ এবং কাহরামানমারাসে প্রচ- ধ্বংসলীলা চালিয়েছে এই ভূমিকম্প। এই দুুই শহরের বেশিরভাগ ভবন ধসে পড়েছে। ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মঙ্গলবার দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
৪৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার ২ বছরের শিশু
তুরস্কের হাতেয় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে দুই বছর বয়সী এক মেয়ে ও তার মাকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারী দল ভূমিকম্পের ৪৪ ঘণ্টা পর ধসে পড়া ভবনের কংক্রিট ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই বছর বয়সী ভাফে সাবা ও তার মা ইমেদ সাবাকে (৩৩) উদ্ধার করেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেত্তিন কোকা বলেছেন, শুধুমাত্র হাতেয় প্রদেশেই এক হাজার ৬৪৭ জন নিহত হয়েছেন, যা তুরস্কের যেকোনো প্রদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়াও এক হাজার ৮৪৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। হাতেয় বিমানবন্দর ভূমিকস্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রদেশের বহু সড়ক ভেঙে গেছে। যার ফলে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতেয় প্রদেশ। ওই অঞ্চলের অনেক জায়গায় এখনো উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেননি। বলা হচ্ছে, এই প্রদেশের বেশিরভাগ ভবন ধসে গেছে। ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ এতই বেশি যে, উদ্ধারকারীরাও আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।
ধ্বংসস্তূপে আটকা ছোট্ট শিশু, মুখে দেওয়া হচ্ছে পানি
ট্যাগস :
ধ্বংসস্তূপে আটকা ছোট্ট শিশু
জনপ্রিয় সংবাদ

























