ঢাকা ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ধৈর্যশীলদের আল্লাহ পছন্দ করেন

  • আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদ আহমদ : একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় গুণ হলো সে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে আর সব বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করে। আমরা খেয়াল করি, সামান্য সামান্য বিষয় কেন্দ্র করে সমাজ ও দেশে প্রতিনিয়ত কতই না নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
সামান্য কোনো বিষয়ে উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য প্রদর্শন করলে লাভ ছাড়া ক্ষতি হয় এমনটি আমরা দেখতে পাই না। মূলত ধৈর্যশীল ব্যক্তিরাই যে সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে এটা শতভাগ সত্য।

আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।
এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর বান্দার উচিত, তার চেষ্টা-প্রচেষ্টায় সে যেন লেগে থাকে এবং তার অধ্যবসায়ে যে কখনো ভাটা না পড়ে। উদ্দেশ্য সাধনের পথে কখনো যেন মনে নৈরাশ্য সৃষ্টি না হয়; যা কিছু মন্দ ও ক্ষতিকর তা যেন সে বর্জন করে এবং যা ভালো তা যেন আঁকড়ে ধরে এবং সব বিষয়ে সব সময় ধৈর্য ধারণ করে।

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) একবার এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, মহিলাটি এক কবরের পাশে বসে মাতম করছিল। তিনি (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহতাআলাকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। ওই মহিলা বললো, সরে যাও, নিজের রাস্তায় চলো, যে বিপদ আমার ওপর পড়েছে সেই বিপদ তোমার ওপর পড়েনি।

প্রকৃতপক্ষে ওই মহিলা তাকে (সা.) চিনতে পারেনি (এ জন্যই রাগান্বিত এমন কথা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে)। তাকে যখন বলা হলো যে, ইনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.), তখন সে অস্থির হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরজায় উপস্থিত হলো আর সেখানে তাকে বাধা দেয়ার মত কোনো দারোয়ান না থাকায় সোজা সে অন্দর মহলে চলে গেল আর সবিনয়ে নিবেদন করলো, হুজুর (সা.) আমি আপনাকে চিন্তে পারি নাই। তখন তিনি (সা.) বললেন, প্রকৃত ধৈর্য তো দুঃখ আঘাত হানা কালেই ধারণ করতে হয় (নইলে কান্না কাটি করে ব্যথিত-ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সবাই তো ধৈর্যেরই পথ ধরে)’ (বুখারি, কিতাবুল জানায়েজ)।

এ প্রসঙ্গে মহানবির (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ রয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার যখন আমি মহানবির (সা.) পিছনে (উটের পিঠে) ছোয়ারি হয়ে বসে ছিলাম, তিনি (সা.) বললেন, ‘হে স্নেহাস্পদ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা বলছি। প্রথম কথা হলো, আল্লাহর কথা স্মরণ রেখো, তিনি তোমাকে নিরাপদ রাখবেন। আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখলে তুমি তাঁকে নিকটেই পাবে, কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আল্লাহতাআলার কাছেই চাও, তোমার সাহায্যের প্রয়োজন হলে আল্লাহতাআলার সাহায্য যাচনা কর। জেনে রাখো, সব লোক একত্র হয়ে তোমার ভালো করতে চাইলেও তারা তোমার কোনোই মঙ্গল সাধন করতে পারবে না যদি আল্লাহতাআলা তা না চান আর তোমার কপালে তা না লিখেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি করতে একাত্ম হয়ে যায় তবুও তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না যদি না আল্লাহতাআলা তোমার কপালে সেই ক্ষতি লিখে রাখেন, কলম তুলে নেন আর কালিও যায় ফুরিয়ে।’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতাআলার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখ তুমি তাঁকে সামনে পাবে, স্বাচ্ছন্দ্য কালেও তুমি তাকে স্মরণ করো, তাহলে দুঃসময়েও তিনি তোমাকে মনে রাখবেন। আর জেনে রাখ, তুমি যা হারিয়েছ বা যা তুমি লাভ করতে পার নাই তা তোমার জন্য ছিল না আর যা তুমি পেয়ে গিয়েছ তা তোমারই, প্রাপ্তির বাইরে তা থাকতে পারে না। কেননা অবধারিত নিয়তির লিখন এটাই ছিল। বুঝে নাও আল্লাহতাআলার সাহায্য ধৈর্য ধারণকারীদের সাথে থাকে। সুখ-আনন্দ উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সাথে, হাসি-আনন্দ দুঃখ-বেদনার সাথে একীভূত হয়ে থাকে আর প্রত্যেক অভাব-অনটনের পর রয়েছে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য’ (সুনান তিরমিযি)।

হাদিসে এসেছে, একবার কিছু আনসার সাহাবি হজরত নবী করিম (সা.)-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা-ই চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন। এক পর্যায়ে তাঁর কাছে যা ছিল তা শেষ হয়ে যায়। সবকিছু দান করার পর তিনি বললেন, আমার কাছে যা কিছু থাকে তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে ব্যক্তি নিজেকে অন্যের কাছে চাওয়া থেকে পরিত্রাণ চায় আল্লাহ তাকে তা দান করেন। আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে তিনি তাকে ধৈর্য দান করেন। যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দেওয়া হবে না। (বুখারি)

অপর এক হাদিসে মহানবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোনো নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি’ (বুখারি)। তাই যারা সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করেন তাদের সাথেই আল্লাহ থাকেন। কেননা ধৈর্যশীলদের তিনি ভালোবাসেন।
আল্লাহপাক আমাদের সব বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন এবং তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে রাখুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ
সধংঁসড়হ৮৩@ুধযড়ড়.পড়স

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ধৈর্যশীলদের আল্লাহ পছন্দ করেন

আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

মাহমুদ আহমদ : একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় গুণ হলো সে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে আর সব বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করে। আমরা খেয়াল করি, সামান্য সামান্য বিষয় কেন্দ্র করে সমাজ ও দেশে প্রতিনিয়ত কতই না নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
সামান্য কোনো বিষয়ে উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য প্রদর্শন করলে লাভ ছাড়া ক্ষতি হয় এমনটি আমরা দেখতে পাই না। মূলত ধৈর্যশীল ব্যক্তিরাই যে সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে এটা শতভাগ সত্য।

আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।
এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর বান্দার উচিত, তার চেষ্টা-প্রচেষ্টায় সে যেন লেগে থাকে এবং তার অধ্যবসায়ে যে কখনো ভাটা না পড়ে। উদ্দেশ্য সাধনের পথে কখনো যেন মনে নৈরাশ্য সৃষ্টি না হয়; যা কিছু মন্দ ও ক্ষতিকর তা যেন সে বর্জন করে এবং যা ভালো তা যেন আঁকড়ে ধরে এবং সব বিষয়ে সব সময় ধৈর্য ধারণ করে।

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) একবার এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, মহিলাটি এক কবরের পাশে বসে মাতম করছিল। তিনি (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহতাআলাকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। ওই মহিলা বললো, সরে যাও, নিজের রাস্তায় চলো, যে বিপদ আমার ওপর পড়েছে সেই বিপদ তোমার ওপর পড়েনি।

প্রকৃতপক্ষে ওই মহিলা তাকে (সা.) চিনতে পারেনি (এ জন্যই রাগান্বিত এমন কথা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে)। তাকে যখন বলা হলো যে, ইনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.), তখন সে অস্থির হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরজায় উপস্থিত হলো আর সেখানে তাকে বাধা দেয়ার মত কোনো দারোয়ান না থাকায় সোজা সে অন্দর মহলে চলে গেল আর সবিনয়ে নিবেদন করলো, হুজুর (সা.) আমি আপনাকে চিন্তে পারি নাই। তখন তিনি (সা.) বললেন, প্রকৃত ধৈর্য তো দুঃখ আঘাত হানা কালেই ধারণ করতে হয় (নইলে কান্না কাটি করে ব্যথিত-ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সবাই তো ধৈর্যেরই পথ ধরে)’ (বুখারি, কিতাবুল জানায়েজ)।

এ প্রসঙ্গে মহানবির (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ রয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার যখন আমি মহানবির (সা.) পিছনে (উটের পিঠে) ছোয়ারি হয়ে বসে ছিলাম, তিনি (সা.) বললেন, ‘হে স্নেহাস্পদ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা বলছি। প্রথম কথা হলো, আল্লাহর কথা স্মরণ রেখো, তিনি তোমাকে নিরাপদ রাখবেন। আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখলে তুমি তাঁকে নিকটেই পাবে, কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আল্লাহতাআলার কাছেই চাও, তোমার সাহায্যের প্রয়োজন হলে আল্লাহতাআলার সাহায্য যাচনা কর। জেনে রাখো, সব লোক একত্র হয়ে তোমার ভালো করতে চাইলেও তারা তোমার কোনোই মঙ্গল সাধন করতে পারবে না যদি আল্লাহতাআলা তা না চান আর তোমার কপালে তা না লিখেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি করতে একাত্ম হয়ে যায় তবুও তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না যদি না আল্লাহতাআলা তোমার কপালে সেই ক্ষতি লিখে রাখেন, কলম তুলে নেন আর কালিও যায় ফুরিয়ে।’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতাআলার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখ তুমি তাঁকে সামনে পাবে, স্বাচ্ছন্দ্য কালেও তুমি তাকে স্মরণ করো, তাহলে দুঃসময়েও তিনি তোমাকে মনে রাখবেন। আর জেনে রাখ, তুমি যা হারিয়েছ বা যা তুমি লাভ করতে পার নাই তা তোমার জন্য ছিল না আর যা তুমি পেয়ে গিয়েছ তা তোমারই, প্রাপ্তির বাইরে তা থাকতে পারে না। কেননা অবধারিত নিয়তির লিখন এটাই ছিল। বুঝে নাও আল্লাহতাআলার সাহায্য ধৈর্য ধারণকারীদের সাথে থাকে। সুখ-আনন্দ উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সাথে, হাসি-আনন্দ দুঃখ-বেদনার সাথে একীভূত হয়ে থাকে আর প্রত্যেক অভাব-অনটনের পর রয়েছে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য’ (সুনান তিরমিযি)।

হাদিসে এসেছে, একবার কিছু আনসার সাহাবি হজরত নবী করিম (সা.)-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা-ই চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন। এক পর্যায়ে তাঁর কাছে যা ছিল তা শেষ হয়ে যায়। সবকিছু দান করার পর তিনি বললেন, আমার কাছে যা কিছু থাকে তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে ব্যক্তি নিজেকে অন্যের কাছে চাওয়া থেকে পরিত্রাণ চায় আল্লাহ তাকে তা দান করেন। আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে তিনি তাকে ধৈর্য দান করেন। যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দেওয়া হবে না। (বুখারি)

অপর এক হাদিসে মহানবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোনো নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি’ (বুখারি)। তাই যারা সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করেন তাদের সাথেই আল্লাহ থাকেন। কেননা ধৈর্যশীলদের তিনি ভালোবাসেন।
আল্লাহপাক আমাদের সব বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন এবং তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে রাখুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ
সধংঁসড়হ৮৩@ুধযড়ড়.পড়স