প্রত্যাশা ডেস্ক: দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। হিমেল হাওয়ার দাপটে বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ক্রমশ কমছে। এরই মধ্যে দেশের দিকে ধেয়ে আসছে নতুন শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিয়েছে, আসন্ন এই শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে শীত আরো তীব্র হতে পারে আগামী কয়েক দিনে।
গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বার্তায় বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’ ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বা ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে।
তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শৈত্যপ্রবাহটি সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। পাশাপাশি রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও আশপাশের জেলাগুলোতেও শীতের তীব্রতা বেশি থাকতে পারে।
বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব তুলনামূলক কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানে শীত থাকলেও শৈত্যপ্রবাহ ততটা শক্তিশালী নাও হতে পারে। তবে দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
বিডব্লিউওটির হিসাব বলছে, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, নড়াইল, যশোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা ও রাজবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এসব অঞ্চলে অন্য জায়গার তুলনায় শৈত্যপ্রবাহ আগেই শুরু হতে পারে বলে ধারণা।
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া আর শীতের তীব্রতা: এদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভোর ও রাতের দিকে হিমেল বাতাসের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে অনেকের জন্য। হাটবাজার, নির্মাণকাজ ও খোলা আকাশের নিচে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ঢাকার রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলিত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে টাঙ্গাইল ১২ দশমিক ৭, ফরিদপুর ১৩ দশমিক ৩, মাদারীপুর ১৩ দশমিক ৩, গোপালগঞ্জ ১৩ দশমিক ২, কিশোরগঞ্জ ১০, মুন্সিগঞ্জ ১৩ দশমিক ১, নরসিংদী ১৩ দশমিক ৭ এবং নারায়ণগঞ্জে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে রাজশাহী ১২ দশমিক ৪, ঈশ্বরদী ১২ দশমিক ৫, বগুড়া ১২ দশমিক ৭, বগুড়াবাজার ১১ দশমিক ৭, নওগাঁ ১২ এবং বাগাতিপাড়ায় ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল। রংপুর বিভাগে রংপুর ১৩, দিনাজপুর ১২ দশমিক ৪, সৈয়দপুর ১৩, তেঁতুলিয়া ৯ দশমিক ৬, লালমনিরহাট ১৩ দশমিক ৪ এবং নীলফামারীতে ১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৬ ও শেরপুরে ১৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল। সিলেট বিভাগে সিলেট ১৪ দশমিক ৫ এবং শ্রীমঙ্গলে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৭, কুমিল্লা ১৪ দশমিক ৫, চাঁদপুর ১৪ দশমিক ৮, মাইজদীকোর্ট ১৫ দশমিক ৩, ফেনী ১৪ দশমিক ৩, সন্দ্বীপ ১৫ দশমিক ৫, হাতিয়া ১৫, কক্সবাজার ১৪ দশমিক ৫, সীতাকুণ্ড ১৪ দশমিক ৫, পতেঙ্গা ১৫, বান্দরবান ১৫ দশমিক ২ এবং খাগড়াছড়িতে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। খুলনা বিভাগে খুলনা ১৩ দশমিক ৫, যশোর ১৪, সাতক্ষীরা ১৩ দশমিক ৫, কুষ্টিয়া ১২ দশমিক ৬, চুয়াডাঙ্গা ১২ দশমিক ২ এবং ঝিনাইদহে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এবং বরিশাল বিভাগে বরিশালে ১৩ দশমিক ৫, পটুয়াখালী ১৪ দশমিক ৫ এবং ভোলায় ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকায় পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে হিমেল বাতাস বয়ে যেতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।
সানা/এসি/২৯/১২/২০২৫
























