কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: পেঁয়াজ তোলার পর গোপালগঞ্জে ওই জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে পাট। নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত জমিতে সারা বছর মাত্র একবার ধান চাষ হতো। এখন সেই জমিতে দুইবার ফসল ফলাচ্ছেন চাষি। ধানের বদলে সেখানে চাষ করা হয় পেঁয়াজ। আর পেঁয়াজ তুলে সেই জমিতে পাটের চাষাবাদ করা হয়।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও পেঁয়াজের আবাদ করে বাজিমাত করেছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার চাষিরা। চলতি মৌসুমে ১২০ হেক্টর জমি থেকে দুই হাজার ৪০০ টন পেঁয়াজ পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। ১৫ বছর আগে উপজেলার ভাবড়াশুর ইউনিয়নের কৃষকরা বিলের জমিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেন। আর এতে ধানের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হন তারা। জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে চাষ করা হয় পাট। পেঁয়াজ চাষের বদৌলতে একই জমিতে বছরে দুবার ফসল ফলিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
ভাবড়াশুর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, জমির প্রায় ৯০ শতাংশ পেঁয়াজ তোলা সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকের উঠানে এখন শুধু পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ। গৃহবধূ ও কৃষাণীরা পেঁয়াজের অগ্রভাগ কাটছেন। কেউ বা পেঁয়াজ বস্তায় ভরছেন। কেউবা পেঁয়াজ মাচায় সংরক্ষণ করতে ব্যস্ত। এখন তাদের দম ফেলার অবকাশ নেই।
ভাবরাশুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, এ বছর ভাবরাশুর ইউনিয়নের কালিনগর, নলডাঙ্গা, টুঙ্গিবাড়ি ও দীঘরা গ্রামের ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। হেক্টর প্রতি প্রায় ২০ টন পেঁয়াজ ফলেছে। তিনি বলেন, এবার কৃষকরা বাদশা কিং সুপার, রানী কিং, লাল তীরসহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ রোপণ করেন। কালি নগর গ্রামের বিব্রত বিশ্বাসের জমিতে উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ তুলে পরিমাপ করে দেখা গেছে, শতাংশে দুই মণেরও বেশি ফলেছে।
ভাবরাশুর ইউনিয়নে ৫২ শতাংশে বিঘা। ৫২ শতাংশ জমি থেকে ১০০ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ পেয়েছেন কৃষক। এ বছর ১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে প্রতিবছর পেঁয়াজের আবাদ বাড়ছে। ওই চার গ্রামের কৃষকরা ধান চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। একই জমিতে পেঁয়াজ ও পাট চাষা করে ভাল আছেন তারা।
কৃষাণী কল্পনা মণ্ডল বলেন, আমাদের এলাকার জমি বছরে প্রায় সাড়ে সাত মাস পানির নিচে থাকে। তাই এসব জমিতে বছরে একটি মাত্র ফসল বোরো ধান আবাদ করতাম। যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হত, তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানো সম্ভব হতো না। ১৫ বছর আগে আমাদের গ্রামের জমিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয়।
কৃষাণী শিখা মণ্ডল বলেন, দুই বিঘা জমিতে এ বছর পেঁয়াজের চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ১০০ মণ পেঁয়াজ ফলেছে। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় অন্তত ৪০ হাজার টাকা করে লাভ হবে। অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে প্রতিমণ পেঁয়াজ তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি হবে।
কৃষক বিব্রত বিশ্বাস বলেন, পেঁয়াজের পর জমিতে পাট আবাদ করা হয়। প্রতি বিঘায় অন্তত ১০ থেকে ১২ মণ পাট পাওয়া যায়। পাট ও পেঁয়াজের আবাদ করে আমরা এখন ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই আছি।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক সমীর কুমার বিশ্বাস বলেন, পেঁয়াজ চাষ আমাদের ইউনিয়নের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে পাট চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। প্রত্যেক কৃষক এখন খুব ভালো আছেন।