ঈশ্বরদী পাবনা: হেমন্তের হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজ পাতা। একই সঙ্গে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। মাসখানেক পরই সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। এরপর শূন্য গোলা ভরে উঠবে ধানে। কিন্তু হঠাৎ ধানের পাতা পোড়া রোগ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীর কৃষকরা। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় চিন্তিত তারা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩৬৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। কয়েক দফা অতি বৃষ্টির কারণে ধানের জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় নানা ধরনের পোকার আক্রমণ শুরু হয়। এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এবার এ উপজেলা ব্রি ৮৭, ব্রি-৪৯, ব্রি৫১-৫২ব্রি-৯৫, ব্রি-১০৩, ব্রি- ও বিনা -১৭, বিনা-৭, বিনা-২৩ জাতের আমন ধানসহ বিভিন্ন জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, শুরুতেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের ফলনে বেশ আশাবাদী ছিলেন কৃষকরা। কিন্তু সম্প্রতি তিন চার দফা প্রবল বর্ষণে ধানের জমিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নানান ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে। বিশেষ করে ধানের পাতা পোড়া রোগ ও মাজরা পোকার আক্রমণে ধানের গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন ধান গাছের বয়স প্রায় ৩৫-৪০ দিন। প্রথমে ধান গাছের পাতার কিনারায় এবং আগায় ছোট জলছাপের মতো দেখা যায়। এ দাগুলো আস্তে এস্ত বড় হয়ে পাতার দু’প্রান্ত দিয়ে বা ভেতরের দিকে অগ্রসর হয়ে আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হচ্ছে এবং ধূসর বাদামী বর্ণে পরিণত হয়। যা ঝলসানো বা পাতা পোড়া বলে মনে হয়। এছাড়াও কিছু ধানের পাতা কুঁচকে বাদামী বর্ণ আকার ধারণ করছে। কীটনাশক স্প্রে করেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার কৃষকরা আমন ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন।
উপজেলার মুলাডুলির কৃষক আমিনুল ইসলাম সোহেল জানান, আমন ধানের এমন একটি রোগ দেখতে পাচ্ছি পাতা নিচের দিক থেকে আস্তে আস্তে ঝলসে যাচ্ছে। যাকে আমরা পোড়া রোগ বলে থাকি। পুরো মাঠ জুড়ে এ পোড়া রোগ দেখা দিয়েছি। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাধারণত বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান হয়। এ রোগের কারণে বিঘাতে ১০ মণ ধান পাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ ধানের জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পোড়া রোগসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা পোকা নিধনে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। উচ্চমূল্যে কীটনাশক কিনে ব্যবহার করেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না।
ইস্তা গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান আদম বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে ধানের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পাতা পোড়া, পাতা মোড়ানো ও মাজরা পোকার ব্যাপক প্রভাব দেখা দিয়েছে। এবার প্রতি বিঘা জমি আবাদ করতে ১২-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। এবার জমিতে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফলনও কমে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম স্বপন জানান, এ মাঠে আমন মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করেছি। ধানের বয়স ৪৫-৫০ দিন। ধানের পাতা পচে লাল ও বাদামি বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ধানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
ইস্তা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধানের জমিতে নানা ধরনের পোকার আক্রমণ দেখতে পাচ্ছি। ধানের পোকামাকড় নিধনের জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে এগুলোর দামও বেশি। কীটনাশক ও সার ব্যবহার করেও ধানের ভালো ফলন পাবো বলে মনে হয় না।
মুলাডুলি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলিউজ্জামান জিয়া জানান, অতি বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ধানের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ধানের মাঠে নানান ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে। পোকা নিধনে কৃষকদের নানান পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা সঠিকভাবে কৃষি অফিসের পরামর্শ মেনে কীটনাশক ব্যবহার ও পরিচর্যা করলে ধানের তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এ মৌসুমে আমন ধানের জমিতে পাতাপোড়া রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কৃষকদের প্রতি পরামর্শ যে, জমিতে যদি অতিরিক্ত পানি থাকে তাহলে দ্রুত বের করে দিতে হবে। এসময় অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যাবে না। বিঘা প্রতি ৫ কেজি করে পটাশ সার ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।