বিশেষ সংবাদদাতা: রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনের পাশে নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট থেকে পানি সেচ শেষ হলেও সেখানে সন্দেহজনক কোনো কিছুরই দেখা মেলেনি। যদিও এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার আগমুহূর্তে এই সেচ কাজ শেষ হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই ভবনের সেচ কার্যক্রম শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের নিচে থেকে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে তোলা হয়েছে পানি। আন্ডারগ্রাউন্ডে নোংরা আবর্জনা ও ভাঙা ইটের টুকরা দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট একটি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে এই পানি সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করে। নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলা থেকে সেচযন্ত্রের সাহায্যে পানি তুলে ধানমন্ডি লেকে সেই ফেলা হয়।
সম্প্রতি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও পাশের দুটি ভবনে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ ঘটনার পরই সন্ধান মেলে পাশের একটি ভবনের নিচে দীর্ঘ আরও কয়েকতলা ফ্লোরের। অনেকে এই আন্ডারগ্রাউন্ডে ‘আয়নাঘর’ আছে বলে সন্দেহ পোষণ করেন। সেই রহস্য উন্মোচনেই রোববার ভবনের নিচে জমে থাকা পানি তুলে ফেলার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।
ইট-রড খোলায় ব্যস্ত অনেকে: ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ির ইট, রড ও অন্যান্য সামগ্রী খুলে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ।
রোববার সকাল থেকেই বাড়িটির সামনে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে সেখানে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁরা বাড়িটির আন্ডারগ্রাউন্ডে জমে থাকা পানি সেচপাম্পের মাধ্যমে তুলে আনছিলেন। সেখানেও উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ হাতুড়ি দিয়ে ভবনের অবশিষ্ট অংশ ভাঙছেন, কেউ লোহার রড কেটে নিচ্ছেন, ইট খুলে নিচ্ছেন কেউ কেউ। এসব নেওয়ার জন্য রিকশা ও ভ্যানও আনা হয়েছে।
![](https://ajkerprottasha.com/wp-content/uploads/2025/02/32-3ROD.jpg)
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনের রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। আনারস, পেয়ারা, ফুচকা, পানিপুরি, পাঁপড়, আইসক্রিম, পানি, বাদাম, ছোলা, আখের রস ও চা-সিগারেটের দোকানের সামনেও ছিল মানুষের ভিড়।
৩২ নম্বর বাড়ির সামনেই ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলেন সেকান্দর আলী নামের একজন। বেলা দেড়টার দিকে তিনি বলেন, চার দিন ধরে তিনি এখানে দোকান বসিয়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ ঘুরতে আসছেন। ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
‘আয়নাঘর’ আছে, ‘আয়নাঘর’ নেই: কয়েকদিন ধরে এই বাড়ির বেজমেন্টের জায়গা নিয়ে চলছিল নানা আলোচনা। তবে রোববার সকাল থেকে সেচের কাজ শেষ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন দুপুর সোয়া ১টার দিকে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, বিল্ডিংয়ের বেজমেন্টে উৎসুক মানুষের ভিড়। নানা বয়সের নারী-পুরুষ সেখানে আসছেন এবং ঘুরে দেখে চলে যাচ্ছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে বলেন-এখানে কী জানি পাওয়া গেছে, তাই দেখতে এসেছি।
উৎসুক মানুষের ভিড়ে থাকা মাসুম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান, এখানে ‘আয়নাঘর’ আছে। এখানে পানির নিচে অনেক ঘর আছে, মানুষের ব্যবহার করা জিনিসপত্র পাওয়া গেছে বলে শুনেছি, তবে এখনও দেখিনি।
![](https://ajkerprottasha.com/wp-content/uploads/2025/02/32-2.jpg)
ওই বিল্ডিংয়ের যে জায়গাটি ঘিরে এতো আলোচনা সেখানে নেমে পানি সেচের কাজ করছিলেন একজন তরুণ শ্রমিক। তিনি পানির নিচে হাতিয়ে দেখেছেন বেশ কিছুক্ষণ। তবে কিছু না পেয়ে পরে উঠে যান।
যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, নিচে কিছু নাই, এটা লিফটের জন্য জায়গা করা বলে মনে হচ্ছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইনে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদস্বরূপ ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ‘ছাত্র-জনতা’। বাড়ির পাশেই নির্মাণাধীন ভবনে উপস্থিত হয় বিক্ষুব্ধরা। সেই ভবনের কয়েকতলা বেজমেন্ট দেখতে পায় তারা। তার মধ্যে দুই তলা পর্যন্ত নামতে পারলেও পরবর্তী ফ্লোরে পানি দেখা যায়। অনুমান করা হয়, নিচে আরও কয়েকটি তলা রয়েছে।
তবে দুপুরে এই পুরো বেজমেন্টে সরেজমিন দেখা যায়, বেজমেন্টের প্রথম তলা শুকনো থাকলে দ্বিতীয় তলায় পানি জমে আছে। এই পানির ভেতর অনেককেই ‘কোনও কিছু’ খুঁজতে দেখা যায়। আবার কাউকে কাউকে বেরিয়ে থাকা রড কেটে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি সেচের কাজ শেষ করেন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। জানতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। সেচের কাজ শেষ করে দুপুর ১টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোহাম্মদপুর স্টেশনের তিনটি ইউনিট এক এক করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ত্যাগ করে।
ঘটনার পূর্বাপর: টানা ৩৬ দিন কোটা সংস্কারের তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ওইদিন গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
ওইদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও।
গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। পরে এক পর্যায়ে নির্মাণাধীন এই ভবনের নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের সন্ধান পায় ছাত্র-জনতা।