নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্ধেকের বেশি গুঁড়িয়ে দেওয়া ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ঘিরে তৃতীয় দিনেও রয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাড়িটি ভারী কোনো যন্ত্র দিয়ে ভাঙা না হলেও হাতুড়িপেটা করে ইট খুলে, হ্যাকসো ব্লেড দিয়ে রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে যে যার মতো।
ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পূর্তির দিনে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে এই ভাঙচুর শুরু হয়।
বুধবার রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে শেখ মুজিব ও ঐতিহাসিক অনেক ঘটনার সাক্ষী বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবারও সকালে একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে চলে বাড়ি ভাঙা। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টার পর একমাত্র এক্সক্যাভেটরটি সরিয়ে নেওয়ার পর আর কোনো ভারী যন্ত্রপাতি আনা হয়নি।
বৃহস্পতিবার দিনভর সেখানে লুটপাটের পর শুক্রবারও ভবন দুটির ভাঙা স্তূপ থেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রড বের করে কেটে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
কেউ এখনও ভবনের দাঁড়িয়ে থাকা অংশেই রোডের খোঁজে চালাচ্ছেন হাতুড়ি। আবার কেউ ফাঁকা অংশের মাটি খুড়ে বের করছেন বৈদ্যুতিক তার।
কেরানীগঞ্জ থেকে ৫ জনের একটি দল এসে ভাঙা স্তূপ থেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রড বের করে জমা করছিলেন। এদের একজন তাজুল ইসলাম জানালেন, খবর পেয়ে শুক্রবারই এসেছেন রড নিতে।
তিনি বলেন, সকাল থেইকা আইসা খোলা শুরু করছি। যতক্ষণ পারি খুলি, এরপরে ভাঙারির দোকানে নিয়া বেইচা দিমু।
মোহাম্মদপুর থেকে এসে ভবনের আরেক পাশে ভাঙা স্তূপ থেকে রড কাটতে থাকা দেলোয়ার বলেন, সবাই নিতাছে, আমিও নিই। কালকেও কিছু নিয়া রাখছি। আজকে যা পারি একলগে কইরা বেচমু।
একদল যুবককে মাটি খুঁড়তে দেখে জানতে চাইলে জালাল নামের একজন বলেন, কারেন্টের তার আছে, ওইগুলা বাইর করমু। তারের মেলা দাম পাওন যায়।
এদিনও বাড়িটি ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়, যারা ঘুরেফিরে দেখছিলেন। কেউ কেউ ছবি তুলছেন। পাশের রাস্তা দিয়ে যেতেও অনেকে বাড়িটির সামনে এসে খানিকটা দাঁড়াচ্ছেন, কেউ ছবি তুলছিলেন।
কয়েক বন্ধু নিয়ে উত্তরা থেকে দেখতে আসা শামীম আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা স্বৈরাচারের পরিণতি কী হয় সেটা দেখতে আসছি। কয়েকমাসের ব্যবধানে কী জায়গাটা কী হয়ে গেল। মাটির সাথে মিশে গেল সব। আশা করছি ভবিষ্যতে সবাই এ থেকে শিক্ষা নেবে।
তৌহিদ হোসেন নামের একজন বলেন, এই যে লাখ লাখ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, হাজার হাজার কোটি টাকা বানাইছে একেকজন, তারা আজ কই? শেখ মুজিবরে মারল, কেউ আসলোনা, শেখ হাসিনা পালায়ে গেল, কেউ আসলোনা। আজকে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল, তাও কেউ আসে নাই। তাইলে এতো এতো দলবাজি, দুর্নীতি, ক্ষমতার বড়াই কিসের জন্য? কেউ বোঝে না জনগণের ক্ষমতার চাইতে বড় কিছু নাই।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে এসেছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুস সামাদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, যখন জাদুঘর ছিল, তখন একবার ছেলেদের নিয়ে আসছিলাম। কাল থেকেই ছেলেরা বলতেছিল, বাড়িটা ভেঙে দিচ্ছে, দেখতে আসবে। এজন্য নিয়ে আসলাম। সবকিছু নতুন করে গড়া সম্ভব, কিন্তু কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতি হাজার কোটি টাকা দিলেও আবার গড়া সম্ভব না।
বৃহস্পতিবার দিনভর এ ভবনে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বিকাল বেলায় সেখানে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্নার পর রাতে জেয়াফতের আয়োজন করা হয়। এ ঘটনার রেশ ছড়িয়েছে দেশজুড়েও। বুধবার রাতের পর বৃহস্পতিবার দিনভর জেলায় জেলায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ পরিবারের নামে থাকা ভাস্কর্য ও ম্যুরালসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে তাদের নামে থাকা নামফলক। ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে। অনেক জেলায় দলীয় কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন।