নারী ও শিশু ডেস্ক : ধর্ষণের ঘটনায় নারীর মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে সবচেয়ে বেশি। তাই প্রাথমিকভাবে এ দুঃসহ ঘটনার ট্রমা থেকে উঠে আসতে নারীদের প্রয়োজন ‘সহযোগিতা’। সংশ্লিষ্টদের মতে, সেক্ষেত্রে তাদের পুনর্বাসন ও নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ সাময়িক স্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভিকটিমের জন্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হওয়া জরুরি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তিনটি ধর্ষণের ঘটনা যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিল মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ (সিসিবি) ফাউন্ডেশন। ‘শিশুকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টার পর হত্যা করে ডোবায় ফেলেন প্রতিবেশী’, ‘তিন বছরেও স্বাভাবিক হতে পারেনি সেই…….’ এবং ‘স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ সদস্য গ্রেফতার’- শিরোনামের নিউজগুলো রিটে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
সেই রিটে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনায় আসামিকে ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত রায় নজির হিসেবে সংযুক্ত করেছিলেন আইনজীবীরা।
রিটটির প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের পুনর্বাসন করতে ও ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। মামলার বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেন আদালত। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। এরপর থেকে মামলাটি রয়েছে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায়। তবে খুব শিগগিরই রুলটি শুনানির জন্য উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
ধর্ষণের শিকার নারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রসঙ্গে রিটকারী সংগঠনের পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আদালতের মাধ্যমে ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সে দেশে আইন প্রণয়ন করা হয়। এদিকে মানিকগঞ্জে দুই পুলিশের হাতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চান আদালত। ফলে ধর্ষণের শিকার ভিকটিমের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি আরও জোরালো হতে থাকে।
দেশে ধর্ষণের শিকার ভিকটিমদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের বিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসানের মত হলো, এ ধরনের ভিকটিমদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য একটি আইন হওয়া জরুরি। ওই আইনের অধীনে একটি কমিটি গঠন করতে হবে বা একটি বোর্ড থাকবে। বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়েই সেটি গঠিত হবে। ওই কমিটি বা বোর্ড ভিকটিমের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতির বিষয়টি নির্ধারণ করবে। এরপর তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।
তবে উক্ত আইন না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আদেশ-রায়ের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে আদালতের সেই আদেশ-রায়ের কার্যকারিতা আইনের মতোই হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, যেহেতু রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেহেতু ক্ষতিপূরণের বিষয়টি রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। তাই ভিকটিম যদি ১৬ বছরের নিচে হয় তবে তার সারা জীবনের খরচ রাষ্ট্রের বহন করা উচিত। আর অন্যান্য ভিকটিমের ক্ষেত্রে তারা কি ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার ওপর ওই ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সরকার নির্ধারণ করে দেবে।
ধর্ষণের শিকার নারীর ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ