নিজস্ব প্রতিবেদক : ফার্মেসিতে ওষুধ আনতে গিয়ে রাতভর ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার হয়েছিলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের এক নারী, ওই ঘটনা বলে দিতে চাওয়ায় তাকে হত্যার পর লাশ ৬ টুকরা করে ওষুধের কার্টনে ভরা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শনিবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। তিনি বলেন, সৌদিপ্রবাসী এক ব্যক্তির স্ত্রী ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী কিছুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। বিষয়টি স্থানীয় ফার্মেসি মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে জানালে তিনি তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলেন।
“এরপর ওই ফার্মেসিতে গেলে সংঘব্ধ ধর্ষণের শিকার হন তিনি। ওই ঘটনা বলে দিতে চাইলে জিতেশসহ তিনজন তাকে শ্বাসরোধ হত্যার পর দোকানে থাকা ছুরি দিয়ে লাশ ছয় টুকরা করেন।”
গত শুক্রবার ঢাকার ভাটারার নুরের চালা এলাকা থেকে অভি মেডিকেল হল নামে ওই ফার্মেসির মালিক জিতেশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া তার দুই সহযোগী অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও অসীত চন্দ্র গোপকে (৩৬) সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুর পৌর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিতেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইতনা থানার শহিলা গ্রামে। অনজিৎও একই এলাকার এবং অসীতের বাড়ি নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থানার সুয়াইর অলিপুর গ্রামে।
পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, “ওষুধ কিনতে যেতেন বলে ওই নারীর সঙ্গে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ ওই নারীর মায়ের ব্লাড প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যান। সেসময় ওই প্রবাসীর স্ত্রী তার সমস্যার কথা বললে জিতেশ তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলেন।
“ওইদিন বিকালে তিনি ফার্মেসিতে গেলে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে তাকে অপেক্ষা করতে বলেন জিতেশ। এক পর্যায়ে রাত হয়ে গেলে বাসায় যাওয়ার জন্য ওই নারী অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে তাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেন জিতেশ।”
মুক্তা ধর বলেন, “ঘুমের ওষুধ খেয়ে ওই নারী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন জিতেশ তার দুই সহযোগী অনজিৎ ও অসীতের সঙ্গে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। রাত গভীর হলে আশেপাশের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারা তখন ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, “ওই গৃহবধূ ধর্ষণের বিষয়টি তার পরিবারকে জানিয়ে দেবে বললে জিতেশ ও তার সহযোগীরা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন।”
এরপর আসামিরা লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে জানিয়ে মুক্তা ধর বলেন, “দোকানে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে দুই হাত, দুই পা ও বুক-পেটসহ ছয় টুকরা করেন তারা। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টন দিয়ে খ-িত অংশগুলো ঢেকে রাখেন।
“প্রথমে লাশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেও ভোর হয়ে যাওয়ায় ও লোকজন চলে আসায় দোকানে তালা দিয়ে পালিয়ে যান তারা।” পরে বুধবার জগন্নাথপুর থানার পৌরসভা ব্যারিস্টার আবদুল মতিন মার্কেটের ওই ফার্মেসি থেকে সেই নারীর খ-িত লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকা-ের ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।