ঢাকা ০৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বাসুদেব ধর

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর -ছবি বিডি নিউজের সৌজন্যে

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে।

শনিবার (২৮ জুন) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার ‘মিথ্যা অজুহাতে’ পিতা-পুত্রকে হয়রানি ও গ্রেফতার এবং ঢাকার খিলক্ষেতে পূজা মণ্ডপ উচ্ছেদসহ দেশের নানাপ্রান্তে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‘অব্যাহত নির্যাতনের’ প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গতকাল একটি দুর্গা মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের কোনো অভিযোগ থাকত না- যদি রেলওয়ের জায়গায় যা কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সবগুলো নিয়ম অনুযায়ী এবং নির্ধারিত সময় দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হত। অবৈধ জায়গায় যদি স্থাপনা অবৈধভাবে করা হয়, তারও একটা নিয়ম আছে। সেটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে সরিয়ে নেয়ার সুযোগ দিয়ে সবগুলোকে সমান দৃষ্টিতে দেখে সেগুলো অপসারণ করা হলে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে দুর্গা মন্দিরটি অপসারণ করা হয়েছে, যে অপমানিত বোধ করছে হিন্দু সম্প্রদায়। আমাদের পবিত্র দেবী মূর্তি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নূন্যতম সম্মান দেখানো হয়নি। এ কোন বাংলাদেশে আমরা রয়েছি।’

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আমরা এমন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম যেটা ৫৪ বছরের বৈষম্য নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে। আমাদের মহামান্য প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল জয়ী। তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ছুটে গিয়েছিলেন শপথ গ্রহণের পরপর। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছিলেন, আমরা এক পরিবার হিসেবে দেখতে চাই বাংলাদেশকে। বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটবে না। বৈষম্যের অবসান হবে। বাংলাদেশে পূজা হবে পুলিশ-র‌্যাব-সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিতে। এমন এক বাংলাদেশ আমরা গড়ে দিয়ে যাব। আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম।

বাসুদেব ধর বলেন, ‘সেদিন আমি বলেছিলাম, আমরা এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই, যখন আপনি বিদায় নেবেন যেন আমরা বলতে পারি ইউনূস সাহেব এমন এক সংস্কার চালু করে গেছেন, যেখানে কোনো বৈষম্য নেই। যারা এরপর ক্ষমতায় আসবেন, তারা যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাইরে যেতে না পারে। এমন এক অধ্যায় তিনি সূচনা করে যাবেন।’ ‘কিন্তু আমরা দেখছি, আমরা যা স্বপ্ন দেখেছিলাম এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে বৈষম্যের নিসরন হবে; হয়নি। ৫৪ বছর ধরে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখেছি। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে মনে প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছিল এবার আমরা রাস্তায় আর থাকব না। ওমা কী দেখছি? রাস্তায় থাকছি। আরো জোরে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। এবং আমরা এক ভয়াবহ অন্ধকারের মধ্যে নিপতিত হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছিলেন, তা হচ্ছে না। তিনি বলেছিলেন বৈষম্য থাকবে না। আমরা কী দেখলাম? ১১-১২ টা কমিশন হয়েছে, সেখানে আমাদের জায়গা হয়নি। এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে। আশা ছিল, নোবেল বিজয়ী ইউনূস সাহেব এদেশকে অন্ধকার মুক্ত করবেন, কিন্তু হচ্ছে না। সংবিধান নতুন হচ্ছে, সংশোধন হচ্ছে না ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে কিছুই জানি না। আমাদের অভিমত শুনতে চাওয়া হয়নি। সবার মন্তব্য চিন্তাভাবনা জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের ডাকা হয়নি। দেশের ২ কোটির বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিমত কি সংবিধান সম্পর্কে সেটা জানা গেল না।’

বাসুদেব ধর বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহ-সভাপতি, যিনি সংবিধান সংশোধন কমিশনেরও সভাপতি আলী রিয়াজ তিনি আমাকে বারবার টেলিফোন দেন। একবার বললেন, ‘দাদা আসেন’। বলেছি, ‘একা যাব না’। গেলে সংগঠনগতভাবে যাব। বলে যে, ‘সে ডাকব, আপনি আসেন। আমি গেলাম।’
‘আমি বললাম, এই যে সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান কি হবে- আমরা জানি না। এ সংবিধানে আমরা কোথায় থাকব? একবার বলা হচ্ছে বহুত্ববাদ। বারবার নানা কথা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু সংবিধানের সেই ধর্মীয়করণটা রেখেই করা হচ্ছে। তাহলে আমাদের সমান অধিকার থাকলো কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে চার নীতি পেয়েছিলাম, তার মাধ্যমে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলেই কিন্তু আমরা রাস্তায় ছিলাম।’

দুই কোটিরও বেশি মানুষকে বাদ দিয়ে যদি সংবিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তার থেকে দুঃখজনক অধ্যায় আর কী হতে পারে মন্তব্য করে বাসুদেব ধর বলেন, ‘আমরা কোথায়? এখন পর্যন্ত ডাক আসেনি। এ রাষ্ট্র বির্নিমাণে যেন আমাদের কোন ভূমিকা থাকবে না। অথচ মুক্তিযুদ্ধ করেছি এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি আত্মদান করেছে মুক্তিযুদ্ধে। সর্বস্ব হারিয়েছে নতুন দেশটা গড়বার জন্য। তাদের আজকে এ অবস্থায় নিপতিত হতে হচ্ছে। ‘রাজনৈতিক পরিবর্তন দেশে যাই ঘটুক হামলা হয় আমাদের উপর। কেন? এ দেশ প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল আমাদের। অথচ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমরা। এ অবস্থা চলতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘ইউনূস সাহেবের সরকারের মধ্যে একটা অপশক্তি আছে। যারা ইউনূস সাহেবের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দিতে চায় না। তারা পদে পদে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সাবধান যদি না হয়, দেশের জনগণ যদি স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে ভয়াবহ দিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’

এই অন্ধকার দিনগুলোতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পাশে সক্রিয়ভাবে এসে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দাঁড়িয়েছে জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় তারা আমাদের পাশে রয়েছে। অভয়নগরে দেখলাম ২০-২১টি পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। তাদের খাবার নেই, ঘরে আলো নেই। ‘সেনাবাহিনীকে বললাম, এদের রক্ষা করতে হবে। পরের দিন তারা সেখানে ছুটে গেছেন। সেখানে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করেছে। বাড়িঘর করে দিয়েছে, খাবার দিচ্ছে। এভাবে তারা পাশে আছে। তারা আরো সক্রিয় হবে আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘অভয়নগরে ২২টি হিন্দু পরিবারকে একেবারে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে হত্যাকাণ্ডের কথা বলে তাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে, সে ঘটনার সঙ্গে এই ২২টি পরিবারের ন্যূনতম যোগাযোগও নেই। কিন্তু হিংস্র-আক্রোশে তাদের ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।’ ‘লালমনিরহাটের ঘটনা যা আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি, টাকা কম দিতে চেয়েছিল। সেটাকে উল্টো আরেকটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে এই ঘটনার রূপ দেওয়া হয়েছে। এভাবেই কিন্তু ধর্ম অবমাননার কথা বলে বিভিন্ন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’ ঐক্য পরিষদের সভাপতি পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভালো নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে: ওয়াহিদউদ্দিন

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বাসুদেব ধর

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে।

শনিবার (২৮ জুন) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার ‘মিথ্যা অজুহাতে’ পিতা-পুত্রকে হয়রানি ও গ্রেফতার এবং ঢাকার খিলক্ষেতে পূজা মণ্ডপ উচ্ছেদসহ দেশের নানাপ্রান্তে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‘অব্যাহত নির্যাতনের’ প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গতকাল একটি দুর্গা মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের কোনো অভিযোগ থাকত না- যদি রেলওয়ের জায়গায় যা কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সবগুলো নিয়ম অনুযায়ী এবং নির্ধারিত সময় দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হত। অবৈধ জায়গায় যদি স্থাপনা অবৈধভাবে করা হয়, তারও একটা নিয়ম আছে। সেটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে সরিয়ে নেয়ার সুযোগ দিয়ে সবগুলোকে সমান দৃষ্টিতে দেখে সেগুলো অপসারণ করা হলে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে দুর্গা মন্দিরটি অপসারণ করা হয়েছে, যে অপমানিত বোধ করছে হিন্দু সম্প্রদায়। আমাদের পবিত্র দেবী মূর্তি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নূন্যতম সম্মান দেখানো হয়নি। এ কোন বাংলাদেশে আমরা রয়েছি।’

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আমরা এমন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম যেটা ৫৪ বছরের বৈষম্য নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে। আমাদের মহামান্য প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল জয়ী। তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ছুটে গিয়েছিলেন শপথ গ্রহণের পরপর। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছিলেন, আমরা এক পরিবার হিসেবে দেখতে চাই বাংলাদেশকে। বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটবে না। বৈষম্যের অবসান হবে। বাংলাদেশে পূজা হবে পুলিশ-র‌্যাব-সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিতে। এমন এক বাংলাদেশ আমরা গড়ে দিয়ে যাব। আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম।

বাসুদেব ধর বলেন, ‘সেদিন আমি বলেছিলাম, আমরা এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই, যখন আপনি বিদায় নেবেন যেন আমরা বলতে পারি ইউনূস সাহেব এমন এক সংস্কার চালু করে গেছেন, যেখানে কোনো বৈষম্য নেই। যারা এরপর ক্ষমতায় আসবেন, তারা যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাইরে যেতে না পারে। এমন এক অধ্যায় তিনি সূচনা করে যাবেন।’ ‘কিন্তু আমরা দেখছি, আমরা যা স্বপ্ন দেখেছিলাম এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে বৈষম্যের নিসরন হবে; হয়নি। ৫৪ বছর ধরে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখেছি। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে মনে প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছিল এবার আমরা রাস্তায় আর থাকব না। ওমা কী দেখছি? রাস্তায় থাকছি। আরো জোরে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। এবং আমরা এক ভয়াবহ অন্ধকারের মধ্যে নিপতিত হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছিলেন, তা হচ্ছে না। তিনি বলেছিলেন বৈষম্য থাকবে না। আমরা কী দেখলাম? ১১-১২ টা কমিশন হয়েছে, সেখানে আমাদের জায়গা হয়নি। এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে। আশা ছিল, নোবেল বিজয়ী ইউনূস সাহেব এদেশকে অন্ধকার মুক্ত করবেন, কিন্তু হচ্ছে না। সংবিধান নতুন হচ্ছে, সংশোধন হচ্ছে না ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে কিছুই জানি না। আমাদের অভিমত শুনতে চাওয়া হয়নি। সবার মন্তব্য চিন্তাভাবনা জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের ডাকা হয়নি। দেশের ২ কোটির বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিমত কি সংবিধান সম্পর্কে সেটা জানা গেল না।’

বাসুদেব ধর বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহ-সভাপতি, যিনি সংবিধান সংশোধন কমিশনেরও সভাপতি আলী রিয়াজ তিনি আমাকে বারবার টেলিফোন দেন। একবার বললেন, ‘দাদা আসেন’। বলেছি, ‘একা যাব না’। গেলে সংগঠনগতভাবে যাব। বলে যে, ‘সে ডাকব, আপনি আসেন। আমি গেলাম।’
‘আমি বললাম, এই যে সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান কি হবে- আমরা জানি না। এ সংবিধানে আমরা কোথায় থাকব? একবার বলা হচ্ছে বহুত্ববাদ। বারবার নানা কথা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু সংবিধানের সেই ধর্মীয়করণটা রেখেই করা হচ্ছে। তাহলে আমাদের সমান অধিকার থাকলো কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে চার নীতি পেয়েছিলাম, তার মাধ্যমে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলেই কিন্তু আমরা রাস্তায় ছিলাম।’

দুই কোটিরও বেশি মানুষকে বাদ দিয়ে যদি সংবিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তার থেকে দুঃখজনক অধ্যায় আর কী হতে পারে মন্তব্য করে বাসুদেব ধর বলেন, ‘আমরা কোথায়? এখন পর্যন্ত ডাক আসেনি। এ রাষ্ট্র বির্নিমাণে যেন আমাদের কোন ভূমিকা থাকবে না। অথচ মুক্তিযুদ্ধ করেছি এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি আত্মদান করেছে মুক্তিযুদ্ধে। সর্বস্ব হারিয়েছে নতুন দেশটা গড়বার জন্য। তাদের আজকে এ অবস্থায় নিপতিত হতে হচ্ছে। ‘রাজনৈতিক পরিবর্তন দেশে যাই ঘটুক হামলা হয় আমাদের উপর। কেন? এ দেশ প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল আমাদের। অথচ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমরা। এ অবস্থা চলতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘ইউনূস সাহেবের সরকারের মধ্যে একটা অপশক্তি আছে। যারা ইউনূস সাহেবের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দিতে চায় না। তারা পদে পদে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সাবধান যদি না হয়, দেশের জনগণ যদি স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে ভয়াবহ দিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’

এই অন্ধকার দিনগুলোতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পাশে সক্রিয়ভাবে এসে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দাঁড়িয়েছে জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় তারা আমাদের পাশে রয়েছে। অভয়নগরে দেখলাম ২০-২১টি পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। তাদের খাবার নেই, ঘরে আলো নেই। ‘সেনাবাহিনীকে বললাম, এদের রক্ষা করতে হবে। পরের দিন তারা সেখানে ছুটে গেছেন। সেখানে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করেছে। বাড়িঘর করে দিয়েছে, খাবার দিচ্ছে। এভাবে তারা পাশে আছে। তারা আরো সক্রিয় হবে আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘অভয়নগরে ২২টি হিন্দু পরিবারকে একেবারে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে হত্যাকাণ্ডের কথা বলে তাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে, সে ঘটনার সঙ্গে এই ২২টি পরিবারের ন্যূনতম যোগাযোগও নেই। কিন্তু হিংস্র-আক্রোশে তাদের ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।’ ‘লালমনিরহাটের ঘটনা যা আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি, টাকা কম দিতে চেয়েছিল। সেটাকে উল্টো আরেকটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে এই ঘটনার রূপ দেওয়া হয়েছে। এভাবেই কিন্তু ধর্ম অবমাননার কথা বলে বিভিন্ন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’ ঐক্য পরিষদের সভাপতি পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ।