প্রত্যাশা ডেস্ক: যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে ও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শনিবার (৬ জুলাই) সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। কারবালার শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার এই দিনটি ধর্মীয়ভাবে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের মহিমা হিসেবে এ দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এক পবিত্রতম দিবস। এজন্যই যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা এ দিনটি পালন করে থাকেন। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশের মসজিদগুলোতে ইমাম খতিবরা মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
আসমান ও জমিনসহ সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় আশুরায়। হযরত আদম (আ.) এর সৃষ্টি ও পৃথিবীতে অবতরণ, মহাপ্লাবনের সময় হযরত নুহ (আ.) এর নৌযানের যাত্রা শুরু এবং প্লাবনের পরিসমাপ্তি এই আশুরাতেই ঘটেছিল। হযরত মুসা (আ.) ও বনী ইসরাঈলের সমুদ্রপথে রওনা এবং অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি লাভের দিনটি ছিল আশুরা। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরার দিনে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
আশুরার ফজিলত হযরত আদম (আ.)-এর যুগ থেকেই। এ দিনে করণীয় আমল হিসেবে অনেক মুসলমান রোজা রাখেছিলেন। তবে এর সাথে ৯ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে রাখা। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করতঃ আশুরার পূর্বে অথবা পরের একদিনসহ রোজা রাখবে। (মুসনাদে আহমাদ-হা. নং ২৪১)। এ রোজার ফজিলত অনেক। হযরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘আমি আশাবাদী, আশুরার দিনের রোজার উসীলায় আল্লাহ তায়ালা অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন’ (তিরমিযী-হা. নং ৭৫১)। এই দিন বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করা। দ্বীনের খাতিরে হযরত হোসাইন (রা.) যে ত্যাগ-তিতিক্ষা পেশ করেছেন তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দ্বীনের জন্য যে কোন ত্যাগ ও কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকা।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। শনিবার ছিল সরকারি ছুটি দিন। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বিশেষ প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশ করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।
পবিত্র আশুরা ১৪৪৫ হিজরি উপলক্ষ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ জোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকার। এ ছাড়া আলোচক হিসেবে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ। পরে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা মো. এহসানুল হক।
উল্লেখ্য, হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) ও তার পরিবার এবং অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মর্মস্পর্শী এ ঘটনা স্মরণ করে প্রতি-হিজরী সনের ১০ মহররম বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় শোকাবহ দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সকলকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়। পবিত্র আশুরার দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে তাদের হৃদয়-নিংড়ানো শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।