ঢাকা ১১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন======

দ্রুতই অকার্যকর হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি এখনই

  • আপডেট সময় : ০৬:০১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল

অ্যান্টিবায়োটিক আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটি এক ধরনের ওষুধ- যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট যে কোনো সংক্রমণ নিরাময় করে বা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে সঠিক পর্যবেক্ষণ হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধটি ভাইরাসজনিত কোন রোগের কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। শরীরের ভেতরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে। যেমন- নিউমোনিয়া, টিউবারকিউলোসিস, মূত্রনালি সংক্রমণ, টাইফয়েড, সেপসিস ইত্যাদি। আমরা সবাই কম বেশি জানি, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সংক্রমণজনিত জীবানু দ্বারা জীবনহানির ঝুঁকি থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক তা প্রতিরোধ করে। শল্যচিকিৎসায় (সার্জারি) সহায়তা করে বড় কোনো অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়; যাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না হয়। এটি দ্রুত আরোগ্যে সহায়তা করে রোগীর জ্বর, বাথা, সংক্রমণজনিত অস্বস্তি দ্রুত কমিয়ে দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করছে এবং গড় আয়ু বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে এর অযাচিত ব্যবহার, ভুল প্রয়োগ কিংবা অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে এখন এটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে; বিশেষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ বা কোর্স অসম্পূর্ণ রেখে দেওয়া নানা ক্ষতিকর দিক তৈরি করছে। তা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে এমন দাঁড়ায়- প্রথমত, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি। যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া যদি অ্যান্টিবায়োটিকের আক্রমণ সহ্য করে বেঁচে যায়, তখন সেটি ওই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। ফলে পরবর্তীতে ওই ওষুধে সংক্রমণ আর দূর হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিশ্বে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে যদি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যায়, অর্থাৎ এর অযাচিত ব্যবহার বন্দ করা না যায়। দ্বিতীয়ত, শরীরের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়। আমাদের শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে; যা হজমে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধে ভমিকা রাখে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক নির্বিচারে সেগুলোও ধ্বংস করে ফেলে। এর ফলে ডায়রিয়া, হজমের সমস্যা, মুখে বা শরীরে ফাঙ্গাল সংক্রমণ দেখা দেয়। তৃতীয়ত, অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন- বমি, বমিভাব, পেট ব্যথা, অ্যালার্জি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। অনেকের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অ্যালার্জি প্রাণঘাতীও হতে পারে। যেমন- অ্যানাফাইল্যাক্সিস। চতুর্থত, লিভার ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে। যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিক শরীর থেকে বের হয় মূলত যকৃত ও কিডনির মাধ্যমে, তাই দীর্ঘদিন অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে এ অঙ্গগুলোতে চাপ পড়ে এবং স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। পঞ্চমত, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ ঝুঁকি থাকে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে গড়ে উঠতে বাধা পায়, আবার বয়স্কদের শরীরে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হয়। ষষ্ঠত, অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার চিকিৎসা ব্যয় বাড়াচ্ছে। সাধারণ রোগ নিরাময়ে আগের সহজ ওষুধ কাজ নয়- যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর করায় নতুন, ব্যয়বহুল এবং শক্তিশালী ওষুধ ব্যবহার করতে হচ্ছে- যা এবং শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্য জন্য মারাত্মক সমস্যা।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসজনিত রোগে একেবারেই কাজ করে না। তবুও অনেক সময় সর্দি-কাশি, ফ্লু বা সাধারণ জ্বরের জন্য মানুষ নিজে থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকে। এতে রোগ সারেও না, বরং শরীরের ভেতরে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়ে ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনে। অ্যান্টিবায়োটিক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হলেও এর অযাচিত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের অস্তিত্বকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত না হলে এক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করবে না। তখন মানবসভ্যতা আবারও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ভয়ঙ্কর ছোবলে অসহায় হয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মত, ব্যবস্থাপত্রে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক রাখা বিপজ্জনক। কোন কোন চিকিৎসক প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। তারা স্পষ্টতই বলেন, এগুলো অবশ্যই ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ব্যবসায়ী মনোভাবের কারণেও হচ্ছে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ৮২ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা হারিয়েছে। কয়েক বছর আগে যা ছিল ৭১ শতাংশ। সেই হিসাবে অল্প সময়ের মধ্যে এ ওষুধের অকার্যকারিতার হার বেড়েছে ১১ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে সেফট্রিয়েক্সন গ্রুপের ওষুধ। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের পরিস্থিতি কী, তা জানতে ২০১৭ সাল থেকে গবেষণা করছে আইইডিসিআর। গত বছরের জুন পর্যন্ত চলে এ গবেষণা। দীর্ঘ সাত বছরে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার নমুনা নিয়ে এ গবেষণায় পরিচালনা করা হয়। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি ৬১ শতাংশ রোগীর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইসিইউ রোগী ২৬ শতাংশ ও বহির্বিভাগ চিকিৎসা নেওয়া ১৩ শতাংশ রোগী।

সাধারণভাবে মনে করা হয়, অ্যান্টিবায়োটিক শুধু মানুষের তৈরি বা কেমিক্যালের মিশ্রণে গঠিত। কিন্তু আসলে এর মূল উৎস প্রকৃতি। প্রাকৃতিকভাবে নানা জীব একে অন্যের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ রাসায়নিক উৎপাদন করে। ওই রাসায়নিকই মূলত অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ- ছত্রাক বা ফাঙ্গাস থেকে পাওয়া পেনিসিলিন প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং লক্ষ্য করেন যে ছত্রাকের এক প্রকার প্রাকৃতিক নিঃসরণ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে। শুধু ফাঙ্গাস নয়, মাটির জীবাণু অ্যাক্টিনোমাইসেটিস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থেকেও টেট্রাসাইক্লিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন ইত্যাদি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয়েছে। প্রকৃতির এই নিঃসরণগুলো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে কাজ করে; যা মানুষের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

আমাদের দেশসহ বিশ্বের বহু দেশের গাছপালা ও ভেষজ ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান; যা জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করতে এবং রোগ নিরাময়ে সহায়ক। এই ভেষজ বা এর উপাদানগুলোয় ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক ও ট্যানিনের মতো জৈব সক্রিয় যৌগ থাকে; যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা প্রদান করে। প্রথমে বলা যায় রসুনের কথা। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি বৃক্ষ নিম। নিমে থাকা উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। আমরা লবঙ্গ বিভিন্ন রসনাজাতীয় খাদ্যে তৈরিতে ব্যবহার করি। লবঙ্গের উপাদান ইউজেনল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। রান্না ঘরের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হলুদ ও আদা। এ দুটি মসলা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং প্রদাহনাশক হিসেবে পরিচিত। ইচিনেসিয়া শ্বাসনালি সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল প্রভাব রয়েছে। মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী বাসক। এটি দেশীয় চিকিৎসায় কাশি, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য বিভিন্ন রোগের নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া রয়েছে মধু, গিলয় (বৈজয়ন্তী মালা) এবং অর্জুন গাছও তাদের ভেষজ গুণাবলির জন্য পরিচিত। এ ছাড়া দারুচিনি, অ্যালোভেরা, কালোজিরা, তুলশি ও পেঁয়াজে অ্যান্টিবালোটিকের উপাদান রয়েছে। এসব ভেষজ বা তার গুলোতে থাকা কুমারিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক, ট্যানিন এবং অপরিহার্য তেলের মতো জৈব সক্রিয় যৌগগুলি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যদিও এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ঔষধের বিকল্প নয়, তবুও এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং কিছু সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। তবে ঔষধি গাছ ব্যবহারের আগে একজন বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রাকৃতিক উপায়ে যদি এই ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়াকে দমন করা যায়, তাহলে শরীরে তার প্রভাব স্বাস্থ্যকর। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য বলছে, ১০ জনের মধ্যে একজন অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সেবনের দরুণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন। কারো অ্যালার্জি, কারো হজমের সমস্যা। ইউনানি আয়ুর্বেদ মতে, বেশ কিছু ভেষজ রয়েছে- যেগুলো সারা বছর খেয়ে যেতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে আর কিছু রয়েছে রোগ বিশেষে দারুণ কাজ করে। তাই বলা যায়, অ্যান্টিবায়োটিক প্রকৃতিরই দান। মানবজাতি কেবল গবেষণার মাধ্যমে এগুলোকে শনাক্ত, বিশুদ্ধ এবং ওষুধ আকারে তৈরি করেছে। প্রকৃতির এ উপহার আধুনিক চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটিয়েছে।

এ কথা সত্য যে, অ্যান্টিবায়োটিক আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক মহৌষধ। এটি ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করে অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। আবার সচেতনতার অভাবে এটি হয়ে উঠেছে নীরব ঘাতকও। তাই রোগ প্রতিরোধে যেসব নিয়ম মানা উচিত সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন রেফারলে সেন্টার, আইইডিসিআর, সিডিসিসহ ল্যাবগুলোকে আরো সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা চাই, অ্যান্টিবায়োটিক হোক কেবল রোগ নিরাময়ের উপাদান; অপব্যবহার বা বাণিজ্যের হাতিয়ার নয়। এর সচেতন ব্যবহারই আমাদের সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারে।

লেখক: কলামিস্ট ও শিল্পোদ্যোক্তা

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

স্বাস্থ্য প্রতিদিন======

দ্রুতই অকার্যকর হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি এখনই

আপডেট সময় : ০৬:০১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাদল

অ্যান্টিবায়োটিক আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটি এক ধরনের ওষুধ- যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট যে কোনো সংক্রমণ নিরাময় করে বা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে সঠিক পর্যবেক্ষণ হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধটি ভাইরাসজনিত কোন রোগের কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। শরীরের ভেতরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে। যেমন- নিউমোনিয়া, টিউবারকিউলোসিস, মূত্রনালি সংক্রমণ, টাইফয়েড, সেপসিস ইত্যাদি। আমরা সবাই কম বেশি জানি, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সংক্রমণজনিত জীবানু দ্বারা জীবনহানির ঝুঁকি থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক তা প্রতিরোধ করে। শল্যচিকিৎসায় (সার্জারি) সহায়তা করে বড় কোনো অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়; যাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না হয়। এটি দ্রুত আরোগ্যে সহায়তা করে রোগীর জ্বর, বাথা, সংক্রমণজনিত অস্বস্তি দ্রুত কমিয়ে দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করছে এবং গড় আয়ু বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে এর অযাচিত ব্যবহার, ভুল প্রয়োগ কিংবা অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে এখন এটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে; বিশেষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ বা কোর্স অসম্পূর্ণ রেখে দেওয়া নানা ক্ষতিকর দিক তৈরি করছে। তা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে এমন দাঁড়ায়- প্রথমত, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি। যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া যদি অ্যান্টিবায়োটিকের আক্রমণ সহ্য করে বেঁচে যায়, তখন সেটি ওই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। ফলে পরবর্তীতে ওই ওষুধে সংক্রমণ আর দূর হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিশ্বে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে যদি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যায়, অর্থাৎ এর অযাচিত ব্যবহার বন্দ করা না যায়। দ্বিতীয়ত, শরীরের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়। আমাদের শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে; যা হজমে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধে ভমিকা রাখে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক নির্বিচারে সেগুলোও ধ্বংস করে ফেলে। এর ফলে ডায়রিয়া, হজমের সমস্যা, মুখে বা শরীরে ফাঙ্গাল সংক্রমণ দেখা দেয়। তৃতীয়ত, অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন- বমি, বমিভাব, পেট ব্যথা, অ্যালার্জি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। অনেকের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অ্যালার্জি প্রাণঘাতীও হতে পারে। যেমন- অ্যানাফাইল্যাক্সিস। চতুর্থত, লিভার ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে। যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিক শরীর থেকে বের হয় মূলত যকৃত ও কিডনির মাধ্যমে, তাই দীর্ঘদিন অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে এ অঙ্গগুলোতে চাপ পড়ে এবং স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। পঞ্চমত, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ ঝুঁকি থাকে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে গড়ে উঠতে বাধা পায়, আবার বয়স্কদের শরীরে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি হয়। ষষ্ঠত, অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার চিকিৎসা ব্যয় বাড়াচ্ছে। সাধারণ রোগ নিরাময়ে আগের সহজ ওষুধ কাজ নয়- যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর করায় নতুন, ব্যয়বহুল এবং শক্তিশালী ওষুধ ব্যবহার করতে হচ্ছে- যা এবং শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্য জন্য মারাত্মক সমস্যা।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসজনিত রোগে একেবারেই কাজ করে না। তবুও অনেক সময় সর্দি-কাশি, ফ্লু বা সাধারণ জ্বরের জন্য মানুষ নিজে থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকে। এতে রোগ সারেও না, বরং শরীরের ভেতরে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়ে ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনে। অ্যান্টিবায়োটিক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হলেও এর অযাচিত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের অস্তিত্বকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত না হলে এক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করবে না। তখন মানবসভ্যতা আবারও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ভয়ঙ্কর ছোবলে অসহায় হয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মত, ব্যবস্থাপত্রে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক রাখা বিপজ্জনক। কোন কোন চিকিৎসক প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। তারা স্পষ্টতই বলেন, এগুলো অবশ্যই ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ব্যবসায়ী মনোভাবের কারণেও হচ্ছে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ৮২ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা হারিয়েছে। কয়েক বছর আগে যা ছিল ৭১ শতাংশ। সেই হিসাবে অল্প সময়ের মধ্যে এ ওষুধের অকার্যকারিতার হার বেড়েছে ১১ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে সেফট্রিয়েক্সন গ্রুপের ওষুধ। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের পরিস্থিতি কী, তা জানতে ২০১৭ সাল থেকে গবেষণা করছে আইইডিসিআর। গত বছরের জুন পর্যন্ত চলে এ গবেষণা। দীর্ঘ সাত বছরে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার নমুনা নিয়ে এ গবেষণায় পরিচালনা করা হয়। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি ৬১ শতাংশ রোগীর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইসিইউ রোগী ২৬ শতাংশ ও বহির্বিভাগ চিকিৎসা নেওয়া ১৩ শতাংশ রোগী।

সাধারণভাবে মনে করা হয়, অ্যান্টিবায়োটিক শুধু মানুষের তৈরি বা কেমিক্যালের মিশ্রণে গঠিত। কিন্তু আসলে এর মূল উৎস প্রকৃতি। প্রাকৃতিকভাবে নানা জীব একে অন্যের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ রাসায়নিক উৎপাদন করে। ওই রাসায়নিকই মূলত অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ- ছত্রাক বা ফাঙ্গাস থেকে পাওয়া পেনিসিলিন প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং লক্ষ্য করেন যে ছত্রাকের এক প্রকার প্রাকৃতিক নিঃসরণ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে। শুধু ফাঙ্গাস নয়, মাটির জীবাণু অ্যাক্টিনোমাইসেটিস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থেকেও টেট্রাসাইক্লিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন ইত্যাদি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয়েছে। প্রকৃতির এই নিঃসরণগুলো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে কাজ করে; যা মানুষের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

আমাদের দেশসহ বিশ্বের বহু দেশের গাছপালা ও ভেষজ ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান; যা জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করতে এবং রোগ নিরাময়ে সহায়ক। এই ভেষজ বা এর উপাদানগুলোয় ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক ও ট্যানিনের মতো জৈব সক্রিয় যৌগ থাকে; যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা প্রদান করে। প্রথমে বলা যায় রসুনের কথা। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি বৃক্ষ নিম। নিমে থাকা উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। আমরা লবঙ্গ বিভিন্ন রসনাজাতীয় খাদ্যে তৈরিতে ব্যবহার করি। লবঙ্গের উপাদান ইউজেনল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। রান্না ঘরের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হলুদ ও আদা। এ দুটি মসলা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং প্রদাহনাশক হিসেবে পরিচিত। ইচিনেসিয়া শ্বাসনালি সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল প্রভাব রয়েছে। মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী বাসক। এটি দেশীয় চিকিৎসায় কাশি, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য বিভিন্ন রোগের নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া রয়েছে মধু, গিলয় (বৈজয়ন্তী মালা) এবং অর্জুন গাছও তাদের ভেষজ গুণাবলির জন্য পরিচিত। এ ছাড়া দারুচিনি, অ্যালোভেরা, কালোজিরা, তুলশি ও পেঁয়াজে অ্যান্টিবালোটিকের উপাদান রয়েছে। এসব ভেষজ বা তার গুলোতে থাকা কুমারিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক, ট্যানিন এবং অপরিহার্য তেলের মতো জৈব সক্রিয় যৌগগুলি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যদিও এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ঔষধের বিকল্প নয়, তবুও এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং কিছু সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। তবে ঔষধি গাছ ব্যবহারের আগে একজন বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রাকৃতিক উপায়ে যদি এই ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়াকে দমন করা যায়, তাহলে শরীরে তার প্রভাব স্বাস্থ্যকর। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য বলছে, ১০ জনের মধ্যে একজন অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সেবনের দরুণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন। কারো অ্যালার্জি, কারো হজমের সমস্যা। ইউনানি আয়ুর্বেদ মতে, বেশ কিছু ভেষজ রয়েছে- যেগুলো সারা বছর খেয়ে যেতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে আর কিছু রয়েছে রোগ বিশেষে দারুণ কাজ করে। তাই বলা যায়, অ্যান্টিবায়োটিক প্রকৃতিরই দান। মানবজাতি কেবল গবেষণার মাধ্যমে এগুলোকে শনাক্ত, বিশুদ্ধ এবং ওষুধ আকারে তৈরি করেছে। প্রকৃতির এ উপহার আধুনিক চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটিয়েছে।

এ কথা সত্য যে, অ্যান্টিবায়োটিক আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক মহৌষধ। এটি ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করে অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। আবার সচেতনতার অভাবে এটি হয়ে উঠেছে নীরব ঘাতকও। তাই রোগ প্রতিরোধে যেসব নিয়ম মানা উচিত সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন রেফারলে সেন্টার, আইইডিসিআর, সিডিসিসহ ল্যাবগুলোকে আরো সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা চাই, অ্যান্টিবায়োটিক হোক কেবল রোগ নিরাময়ের উপাদান; অপব্যবহার বা বাণিজ্যের হাতিয়ার নয়। এর সচেতন ব্যবহারই আমাদের সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারে।

লেখক: কলামিস্ট ও শিল্পোদ্যোক্তা

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ