প্রত্যাশা ডেস্ক: থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে ২০ দিন ধরে তীব্র সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে, ফলে লড়াই বন্ধ হয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) থাইল্যান্ডের চানথাবুড়ি প্রদেশের সীমান্তে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথাপন নার্কফানিট এবং কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী টি সেইহা চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন। দুই দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ওই যৌথ বিবৃতিতে দুই মন্ত্রী বলেন, আর কোনো নড়চড়া ছাড়া মোতায়েন করা সেনারা যেখানে আছে সেখানেই থাকবে বলে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ওই বিবৃতি আরও বলা হয়, যে কোনো শক্তিবৃদ্ধি উত্তেজনা বাড়াবে এবং পরিস্থিতি সমাধানের দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, প্রায় তিন সপ্তাহের এ লড়াইয়ে উভয়পক্ষের অন্তত ১০১ জন নিহত এবং পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি ছিল দেশ দুটির মধ্যে সবচেয়ে তীব্র লড়াই, যেখানে যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলাসহ রকেট বিনিময় ও ভারী কামান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল সুরাসান কংসিরি স্থানীয় সময় দুপুর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি পালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পযন্ত গোলাগুলির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, শনিবার ভোররাতে থাই বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে তারা আর কোনো সংঘাত হয়েছে বলে জানায়নি। এর আগে, চলতি বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হলে সেই চুক্তি ভেঙে পড়ে। এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে ফরাসিরা কম্বোডিয়ার দখলদারিত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশ নিজেদের সীমান্ত নির্ধারণ করে। তখন থেকেই ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের কিছু অংশ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে দ্বিমত রয়ে যায় এবং পরে সেসব অংশকে কেন্দ্র করে বিরোধ দেখা দেয়।
মাঝে মধ্যেই এই বিরোধ সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নেয়। এবারের যুদ্ধবিরতিটি ‘আসিয়ান’ পর্যবেক্ষক দলের পাশাপাশি দুই দেশের সরাসরি সমন্বয়ের মাধ্যমে তদারকি করা হবে। থাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথাপন সাংবাদিকদের বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে হটলাইন ব্যবস্থা চালু থাকবে।
গত জুলাইয়ে দুই দেশের পাঁচ দিনের লড়াইয়ে ৪৮ জন নিহতের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে সেই সমঝোতা ভেঙে যায়। এরপর আনোয়ার বা ট্রাম্প, কেউই দুই পক্ষকে নতুন কোনো চুক্তিতে আনতে পারছিলেন না। অবশেষে কুয়ালালামপুরে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠক এবং তিন দিনের সীমান্ত আলোচনার পর এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়। চুক্তি অনুযায়ী, যদি পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি পূর্ণভাবে বজায় থাকে, তবে জুলাইয়ের লড়াইয়ে আটক হওয়া ১৮ জন কম্বোডীয় সেনাকে ফেরত দেবে থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের এয়ার চিফ মার্শাল প্রপাস সর্নজাইদি বলেন, “যুদ্ধ বা সংঘর্ষ কোনো দেশের মানুষের জন্যই সুখকর নয়। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই।
সানা/কেএমএএ/আপ্র/২৭/১২/২০২৫

























