ঢাকা ০৬:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

দেড় বছরের সাধনায় পুরো কোরআন হাতে লিখলেন ঢাবির তাসনিম দিয়া

  • আপডেট সময় : ১১:২৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি থেকে টানা দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়টা ক্লাস, পরীক্ষা, বন্ধু, আড্ডা, গল্প ইত্যাদির ব্যস্ততা ছেড়ে চার দেওয়ালের বন্দী জীবনে কাটিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চ্যুয়াল জগতে, কেউবা গল্পের বই পড়ে, কেউ আবার পরিবারের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় কাটিয়েছেন সময়টা। আর কেউ এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সম্ভাবনা ও মেধার জানান দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৪-১৫ সেশনের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম দিয়া। মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময়টাতে পুরো কোরআন শরীফ হাতে লিখেছেন তিনি। তারপর নিজ হাতে লেখা সেই পা-ুলিপিগুলো বাঁধাই করে রূপ দিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কোরআনে। এখন দেশের ৫০০ মসজিদ, মাদরাসায় তিনি তার হস্তলিখিত কোরআন উপহার দিতে চান। সোমবার (২০ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জারিন তাসনিম দিয়া জানিয়েছেন তার নিজ হাতে কোরআন লেখার পেছনের গল্প ও স্বপ্নের কথা।
দিয়া বলেন, ২০২০ সালের মার্চে যখন করোনার কারণে ঘরবন্দি হয়ে গেলাম, তখন ভাবলাম সময় কাটানোর জন্য একটা উদ্যোগ নিই। তখন এই কাজ শুরু করলাম। আমি যে শেষ করতে পারব এই উদ্দেশ্যে শুরু করিনি। আমি ভাবলাম, সিরিয়াল ধরে লিখি, যা পারি। কিন্তু এভাবে কখন যে ৫ পারা পর্যন্ত লেখা শেষ হয়ে গেল, আমি বুঝতে পারিনি। তখন তো বাইরে যাওয়া হয় না, বসে বসে প্রতিদিন লিখতে থাকি। এটার প্রতি এক প্রকার নেশা হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমি হাফেজ নই কিংবা মাদরাসাতেও পড়াশোনা করিনি। তবে কোরআন পড়তে পারতাম। আঙুল দিয়ে ধরে দেখে দেখে লিখতে দেড় বছর সময় লেগেছে। এরপর সেটা ডিজাইন করলাম এবং একজন হাফেজের সাথে আলাপ করলাম কীভাবে, কী করা যায়। উনি বললেন, এটা খুবই ভালো কাজ হয়েছে। এরপর ৩০ জন হাফেজ আমার এই পা-ুলিপি দেখেন। ৬৫১ পৃষ্ঠার এই কোরআন শরিফ তারা দেড় মাস ধরে দেখে সংশোধন করে আমাকে দেন। তারপর তাদের মতামত নিয়ে প্রিন্ট করি।
৫০০ কপি বিতরণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমি এক কপি প্রিন্ট করি। তারপর আরও কয়েক কপি করি, আমার মা-বাবার হাতেও তুলে দিই; যেটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এখন আমার চিন্তা অন্তত ৫০০ কপি করে বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা এবং যারা নিয়মিত কোরআন পড়ে তাদের মাঝে বিতরণ করব, যাতে তারা পড়লে আমার সওয়াব হয়। আমাকে কেউ ভুলে গেলেও আমার এই কাজকে কেউ যেন ভুলে না যায়।
মা-বাবার অবদানের কথা উল্লেখ করে দিয়া বলেন, আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা। তাদের অনুপ্রেরণা ছাড়া আসলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। বাবা আমাকে কাগজ কিনে দিয়েছেন, মা চেক করে দিয়েছেন। তারা সবসময় সাহস যুগিয়েছেন। সর্বোপরি পরিবারের সবাই সাপোর্ট দিয়েছে। জারিন তাসনিম দিয়া বলেন, আমি ছোট থেকে ইসলামি পরিবেশে বড় হয়ে উঠিনি। আমি স্কুল-কলেজে পড়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সবার মতো সাধারণভাবেই পড়াশোনা করতাম। তবে আমি এই কাজটি যখন করে ফেলেছি এবং ইসলামের কিছু বিষয় যখন আমি বুঝেছি তখন অর্থসহ খতম করেছি। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করছি ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলতে এবং যতটুকু সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করব। অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যায় না। কোরআন লিখতে আমার অনেক ভালো লাগা কাজ করেছে। আর এই ভালো লাগার কারণেই আমি শেষ করতে পেরেছি। আর সবার এত এত ভালোবাসা পেয়ে আরও অনেক বেশি ভালো লাগছে। যদিও কেউ কেউ আবার নেগেটিভ কমেন্টও করেছেন। এটা লোক দেখানো কাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমার মনের মধ্যে তো আর এসব নেই, তাই এসব নিয়ে এত ভাবি না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেড় বছরের সাধনায় পুরো কোরআন হাতে লিখলেন ঢাবির তাসনিম দিয়া

আপডেট সময় : ১১:২৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি থেকে টানা দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়টা ক্লাস, পরীক্ষা, বন্ধু, আড্ডা, গল্প ইত্যাদির ব্যস্ততা ছেড়ে চার দেওয়ালের বন্দী জীবনে কাটিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চ্যুয়াল জগতে, কেউবা গল্পের বই পড়ে, কেউ আবার পরিবারের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় কাটিয়েছেন সময়টা। আর কেউ এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সম্ভাবনা ও মেধার জানান দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৪-১৫ সেশনের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম দিয়া। মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময়টাতে পুরো কোরআন শরীফ হাতে লিখেছেন তিনি। তারপর নিজ হাতে লেখা সেই পা-ুলিপিগুলো বাঁধাই করে রূপ দিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কোরআনে। এখন দেশের ৫০০ মসজিদ, মাদরাসায় তিনি তার হস্তলিখিত কোরআন উপহার দিতে চান। সোমবার (২০ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জারিন তাসনিম দিয়া জানিয়েছেন তার নিজ হাতে কোরআন লেখার পেছনের গল্প ও স্বপ্নের কথা।
দিয়া বলেন, ২০২০ সালের মার্চে যখন করোনার কারণে ঘরবন্দি হয়ে গেলাম, তখন ভাবলাম সময় কাটানোর জন্য একটা উদ্যোগ নিই। তখন এই কাজ শুরু করলাম। আমি যে শেষ করতে পারব এই উদ্দেশ্যে শুরু করিনি। আমি ভাবলাম, সিরিয়াল ধরে লিখি, যা পারি। কিন্তু এভাবে কখন যে ৫ পারা পর্যন্ত লেখা শেষ হয়ে গেল, আমি বুঝতে পারিনি। তখন তো বাইরে যাওয়া হয় না, বসে বসে প্রতিদিন লিখতে থাকি। এটার প্রতি এক প্রকার নেশা হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমি হাফেজ নই কিংবা মাদরাসাতেও পড়াশোনা করিনি। তবে কোরআন পড়তে পারতাম। আঙুল দিয়ে ধরে দেখে দেখে লিখতে দেড় বছর সময় লেগেছে। এরপর সেটা ডিজাইন করলাম এবং একজন হাফেজের সাথে আলাপ করলাম কীভাবে, কী করা যায়। উনি বললেন, এটা খুবই ভালো কাজ হয়েছে। এরপর ৩০ জন হাফেজ আমার এই পা-ুলিপি দেখেন। ৬৫১ পৃষ্ঠার এই কোরআন শরিফ তারা দেড় মাস ধরে দেখে সংশোধন করে আমাকে দেন। তারপর তাদের মতামত নিয়ে প্রিন্ট করি।
৫০০ কপি বিতরণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমি এক কপি প্রিন্ট করি। তারপর আরও কয়েক কপি করি, আমার মা-বাবার হাতেও তুলে দিই; যেটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এখন আমার চিন্তা অন্তত ৫০০ কপি করে বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা এবং যারা নিয়মিত কোরআন পড়ে তাদের মাঝে বিতরণ করব, যাতে তারা পড়লে আমার সওয়াব হয়। আমাকে কেউ ভুলে গেলেও আমার এই কাজকে কেউ যেন ভুলে না যায়।
মা-বাবার অবদানের কথা উল্লেখ করে দিয়া বলেন, আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা। তাদের অনুপ্রেরণা ছাড়া আসলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। বাবা আমাকে কাগজ কিনে দিয়েছেন, মা চেক করে দিয়েছেন। তারা সবসময় সাহস যুগিয়েছেন। সর্বোপরি পরিবারের সবাই সাপোর্ট দিয়েছে। জারিন তাসনিম দিয়া বলেন, আমি ছোট থেকে ইসলামি পরিবেশে বড় হয়ে উঠিনি। আমি স্কুল-কলেজে পড়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সবার মতো সাধারণভাবেই পড়াশোনা করতাম। তবে আমি এই কাজটি যখন করে ফেলেছি এবং ইসলামের কিছু বিষয় যখন আমি বুঝেছি তখন অর্থসহ খতম করেছি। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করছি ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলতে এবং যতটুকু সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করব। অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যায় না। কোরআন লিখতে আমার অনেক ভালো লাগা কাজ করেছে। আর এই ভালো লাগার কারণেই আমি শেষ করতে পেরেছি। আর সবার এত এত ভালোবাসা পেয়ে আরও অনেক বেশি ভালো লাগছে। যদিও কেউ কেউ আবার নেগেটিভ কমেন্টও করেছেন। এটা লোক দেখানো কাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমার মনের মধ্যে তো আর এসব নেই, তাই এসব নিয়ে এত ভাবি না।