ঢাকা ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

দেহে যে কারণে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন

  • আপডেট সময় : ১০:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: গুটিকয়েক ভিটামিন ও খনিজ বাদে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সম্পর্কে আমাদের কমই জানা আছে। যেমন ধরা যাক ম্যাঙ্গাজিন। এই প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান দেহের নানান কাজে ব্যবহৃত হয়। আর মনে রাখতে হবে ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গাজিন এক জিনিস নয়। এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন পুষ্টিবিদ অ্যামি ডেভিস বলেন, “দেহের বিভিন্ন কার্য সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ম্যাঙ্গানিজ। প্রয়োজনীয় তকমা পেলেও দেহ এই খনিজ উৎপাদন করতে পারে না। তাই খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করাই একমাত্র পন্থা। আর এটা প্রকৃতিতে মাটি, পাথর, পানি ও কিছু খাবার থেকে পাওয়া যায়।”
প্রয়োজনীয়তা
নির্দিষ্ট কোনো কাজ নয়, বরং পুরো শরীরে কাজ করে ম্যাঙ্গানিজ।
বিপাক স্বাস্থ্য: প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেইট ও কোলেস্টেরল নির্ভর এনজাইম বিপাকক্রিয়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে ম্যাঙ্গানিজ।
হাড়ের স্বাস্থ্য: হাড় গঠনের জন্য এই খনিজ প্রয়োজন। কারণ দেহের বিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায় হাড়ে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভিটামিন কে’য়ের সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ মিলেমিশে কাজ করে রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যা কিনা হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই খনিজ কোষের অক্সিডেইশন বা ফ্রি র‌্যাডিকেল’য়ের জন্য হওয়া ক্ষতি পূরণ করে।
মগজের স্বাস্থ্য: অজ্ঞান হওয়া, বিচলিত থাকা বা দ্বিধায় ভোগার মতো বিষয়গুলো দূরে রাখতে সাহায্য করে ম্যাঙ্গানিজ। পাশাপাশি ‘নিউরোট্রান্সমিটার’ সমন্বয়ে ভূমিকা রাখে।
অন্যান্য উপকার: প্রজনন স্বাস্থ্য, সার্বিক দেহের ভারসাম্য, রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণ ও মূত্রাশয় কার্যকর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ম্যাঙ্গানিজ।
দেহে যে পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন
দৈনিক প্রয়োজনের কথা চিন্তা করলে শরীরে ২০ মি.লি. গ্রাম পর্যন্ত ম্যাঙ্গাজিন জমা থাকতে পারে, জানান ডেভিস। সেই হিসেবে দৈনিক চাহিদা নারীদের ক্ষেত্রে ১.৮ মি.লি. গ্রাম এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ২.৩ মি.লি. গ্রাম গ্রহণ করাই যথেষ্ট। আর এই পরিমাণ খাবারের মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব। এই খনিজের অভাব হয় না বলে, হালকাভাবেও নেওয়া যাবে না। কারণ ম্যাঙ্গানিজের অভাবে বিপাক স্বাস্থ্য খারাপ, হাড়ের বৃদ্ধি কমা ও ভঙ্গুর হওয়া অসম্ভব নয়। সেই সাথে দুর্বল লাগা, স্মরণশক্তি কমা ও এমনকি পরে পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বেশি মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজ থাকলে দেহে বিষাক্ত প্রভাব পড়তে পারে। নারী ও পুরুষের দেহে এই খনিজের সহ্য মাত্রা ১১ মি.লি. গ্রাম। এর বেশি অনেকদিন ধরে গ্রহণ করলে দেহে বাজে প্রভাব পড়তে পারে। তবে সেটার সম্ভাবনা খুবই কম।
দেহে যে কারণে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন
ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ খাবার
এই খনিজ গ্রহণের জন্য তেমন কোনো কষ্ট করতে হয় না। দৈনিক খাবার থেকেই ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ করা যায়।
কালো গোল মরিচ: মসলা শুধু স্বাদই বাড়ায় না, পুষ্টি উপাদানও থাকে। আধা চা-চামচ কালো গোল মরিচ থেকে মিলবে ০.২ মি.গ্রা. ম্যাঙ্গানিজ। যা কিনা দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।
সয়া: টফু-সহ নানান খাবার তৈরি হয় সয়া থেকে। আর তিন মি.গ্রাম তফু থেকে মিলবে ১.৪ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
মিষ্টি আলু: অন্ত্রের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপাদান যেমন- আঁশ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ ছাড়াও এক কাপ মিষ্টি আলুর ভর্তা থেকে মিলবে ২.৫ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
বাদামি চাল: বিভিন্ন উপকার রয়েছে পূর্ণ শষ্যে। এর মধ্যে রয়েছে বাদামি চাল। যাতে থাকে নানান ধরনের ভিটামিন, খনিজ, পেট ভরা রাখার আঁশ। আর মাত্র আধা কাপ রান্না করা বাদামি চালের ভাত থেকে পাওয়া যাবে ১.১ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
দেহে যে কারণে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন
শুঁটি: অর্থাৎ ছোলা, ডাল, শিমের দানা এরকম খাবারে পাওয়া যায় ম্যাঙ্গানিজ। এক কাপ ছোলায় ১ মি.গ্রাম, ডালে ১ মি.গ্রাম, শিমের দানায় ২.১ মি.গ্রাম ও কিডনি বিন থেকে মিলবে ০.৬ মি.গ্রাম।
চা: সকালে যাদের চা পানের অভ্যাস তারা শুধু ক্যাফেইন নয়, নানান ধরনের পুষ্টি উপাদানও গ্রহণ করেন এই পানীয় থেকে। এর মধ্যে এক কাপ ব্ল্যাক টি থেকে পাওয়া যায় ০.৫ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
আনারস: শুধু এক কাপ আনারসের টুকরা থেকে পাওয়া যাবে ১.৫ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
পালংশাক: এই পত্রল সবজির নানান উপকার রয়েছে। আর এক কাপ রান্না করা পালংশাকে থাকে ১.৭ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
বাদাম: নানান ধরনের বাদাম রয়েছে। সবগুলোতেই ম্যাঙ্গানিজের আঁধার। এক আউন্স বা দুই টেবিল-চামচ হ্যাজেল নাট থেকে মিলবে ১.৬ মি.গ্রাম, চিনা বাদাম থেকে পাওয়া যাবে ০.৫ মি.গ্রাম। এছাড়াও বাদাম থেকে মিলবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস, প্রোটিন ও আঁশ।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেহে যে কারণে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন

আপডেট সময় : ১০:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: গুটিকয়েক ভিটামিন ও খনিজ বাদে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সম্পর্কে আমাদের কমই জানা আছে। যেমন ধরা যাক ম্যাঙ্গাজিন। এই প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান দেহের নানান কাজে ব্যবহৃত হয়। আর মনে রাখতে হবে ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গাজিন এক জিনিস নয়। এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন পুষ্টিবিদ অ্যামি ডেভিস বলেন, “দেহের বিভিন্ন কার্য সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ম্যাঙ্গানিজ। প্রয়োজনীয় তকমা পেলেও দেহ এই খনিজ উৎপাদন করতে পারে না। তাই খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করাই একমাত্র পন্থা। আর এটা প্রকৃতিতে মাটি, পাথর, পানি ও কিছু খাবার থেকে পাওয়া যায়।”
প্রয়োজনীয়তা
নির্দিষ্ট কোনো কাজ নয়, বরং পুরো শরীরে কাজ করে ম্যাঙ্গানিজ।
বিপাক স্বাস্থ্য: প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেইট ও কোলেস্টেরল নির্ভর এনজাইম বিপাকক্রিয়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে ম্যাঙ্গানিজ।
হাড়ের স্বাস্থ্য: হাড় গঠনের জন্য এই খনিজ প্রয়োজন। কারণ দেহের বিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায় হাড়ে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভিটামিন কে’য়ের সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ মিলেমিশে কাজ করে রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যা কিনা হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই খনিজ কোষের অক্সিডেইশন বা ফ্রি র‌্যাডিকেল’য়ের জন্য হওয়া ক্ষতি পূরণ করে।
মগজের স্বাস্থ্য: অজ্ঞান হওয়া, বিচলিত থাকা বা দ্বিধায় ভোগার মতো বিষয়গুলো দূরে রাখতে সাহায্য করে ম্যাঙ্গানিজ। পাশাপাশি ‘নিউরোট্রান্সমিটার’ সমন্বয়ে ভূমিকা রাখে।
অন্যান্য উপকার: প্রজনন স্বাস্থ্য, সার্বিক দেহের ভারসাম্য, রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণ ও মূত্রাশয় কার্যকর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ম্যাঙ্গানিজ।
দেহে যে পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন
দৈনিক প্রয়োজনের কথা চিন্তা করলে শরীরে ২০ মি.লি. গ্রাম পর্যন্ত ম্যাঙ্গাজিন জমা থাকতে পারে, জানান ডেভিস। সেই হিসেবে দৈনিক চাহিদা নারীদের ক্ষেত্রে ১.৮ মি.লি. গ্রাম এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ২.৩ মি.লি. গ্রাম গ্রহণ করাই যথেষ্ট। আর এই পরিমাণ খাবারের মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব। এই খনিজের অভাব হয় না বলে, হালকাভাবেও নেওয়া যাবে না। কারণ ম্যাঙ্গানিজের অভাবে বিপাক স্বাস্থ্য খারাপ, হাড়ের বৃদ্ধি কমা ও ভঙ্গুর হওয়া অসম্ভব নয়। সেই সাথে দুর্বল লাগা, স্মরণশক্তি কমা ও এমনকি পরে পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বেশি মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজ থাকলে দেহে বিষাক্ত প্রভাব পড়তে পারে। নারী ও পুরুষের দেহে এই খনিজের সহ্য মাত্রা ১১ মি.লি. গ্রাম। এর বেশি অনেকদিন ধরে গ্রহণ করলে দেহে বাজে প্রভাব পড়তে পারে। তবে সেটার সম্ভাবনা খুবই কম।
দেহে যে কারণে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন
ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ খাবার
এই খনিজ গ্রহণের জন্য তেমন কোনো কষ্ট করতে হয় না। দৈনিক খাবার থেকেই ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ করা যায়।
কালো গোল মরিচ: মসলা শুধু স্বাদই বাড়ায় না, পুষ্টি উপাদানও থাকে। আধা চা-চামচ কালো গোল মরিচ থেকে মিলবে ০.২ মি.গ্রা. ম্যাঙ্গানিজ। যা কিনা দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।
সয়া: টফু-সহ নানান খাবার তৈরি হয় সয়া থেকে। আর তিন মি.গ্রাম তফু থেকে মিলবে ১.৪ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
মিষ্টি আলু: অন্ত্রের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপাদান যেমন- আঁশ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ ছাড়াও এক কাপ মিষ্টি আলুর ভর্তা থেকে মিলবে ২.৫ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
বাদামি চাল: বিভিন্ন উপকার রয়েছে পূর্ণ শষ্যে। এর মধ্যে রয়েছে বাদামি চাল। যাতে থাকে নানান ধরনের ভিটামিন, খনিজ, পেট ভরা রাখার আঁশ। আর মাত্র আধা কাপ রান্না করা বাদামি চালের ভাত থেকে পাওয়া যাবে ১.১ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
দেহে যে কারণে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন
শুঁটি: অর্থাৎ ছোলা, ডাল, শিমের দানা এরকম খাবারে পাওয়া যায় ম্যাঙ্গানিজ। এক কাপ ছোলায় ১ মি.গ্রাম, ডালে ১ মি.গ্রাম, শিমের দানায় ২.১ মি.গ্রাম ও কিডনি বিন থেকে মিলবে ০.৬ মি.গ্রাম।
চা: সকালে যাদের চা পানের অভ্যাস তারা শুধু ক্যাফেইন নয়, নানান ধরনের পুষ্টি উপাদানও গ্রহণ করেন এই পানীয় থেকে। এর মধ্যে এক কাপ ব্ল্যাক টি থেকে পাওয়া যায় ০.৫ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
আনারস: শুধু এক কাপ আনারসের টুকরা থেকে পাওয়া যাবে ১.৫ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
পালংশাক: এই পত্রল সবজির নানান উপকার রয়েছে। আর এক কাপ রান্না করা পালংশাকে থাকে ১.৭ মি.গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
বাদাম: নানান ধরনের বাদাম রয়েছে। সবগুলোতেই ম্যাঙ্গানিজের আঁধার। এক আউন্স বা দুই টেবিল-চামচ হ্যাজেল নাট থেকে মিলবে ১.৬ মি.গ্রাম, চিনা বাদাম থেকে পাওয়া যাবে ০.৫ মি.গ্রাম। এছাড়াও বাদাম থেকে মিলবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস, প্রোটিন ও আঁশ।