নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে দৈনিক শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৭ হাজারের নিচে নেমেছে, মৃত্যুও দুইশর নিচে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৬ হাজার ৮৮৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে। গত তিন সপ্তাহে এক দিনে এটাই সবচেয়ে কম রোগী শনাক্তের খবর। এর আগে গত ২৪ জুলাই ৬ হাজার ৭৮০ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তারপর শুক্রবার পর্যন্ত দৈনিক শনাক্ত ৮ হাজারের নিচে আর নামেনি। এর মধ্যে ২৮ জুলাই দিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। নতুন শনাক্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত করোনাভাইরাসের রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ লাখ ১২ হাজার ২১৮ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই হার আগের দিন ছিল ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ডেল্টার বিস্তারে কয়েক সপ্তাহ আগে তা ৩০ শতাংশের উপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে ১৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩ হাজার ৯৮৮। সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ৭ হাজার ৮০৫ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত ১২ লাখ ৮১ হাজার ৩২৭ জন সুস্থ হলেন। দেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ৯০৩ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক মানুষ এখন নিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছেন।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ১৫৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে যে ১৭৮ জন মারা গেছেন, তাদের ৬৭ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৪৫ জন। দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সংক্রমণ আর মৃত্যুর সংখ্যা গত মাসের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে। তবে মধ্য আর পূর্ব অংশে এখনও চলছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার মধ্যে শেষ ২ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১৬ দিনে। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১০ অগাস্ট তা ২৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ৬৩ লাখের বেশি রোগী। গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বাধিক ৩ হাজার ৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জে ১৭৬ জন, ফরিদপুরে ১১৯ জন, গাজীপুরে ৮৪ জন, গোপালগঞ্জে ৮২ জন, কিশোরগঞ্জে ৬২ জন, মানিকগঞ্জে ১৪০ জন, মুন্সীগঞ্জে ১৩০ জন এবং শরীয়তপুরে ৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৪৬৬ জন, কক্সবাজারে ১৪২ জন, নোয়াখালীতে ৫৭ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮৬ জন, চাঁদপুরে ১৬৪ জন, কুমিল্লায় ২২৭ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে যশোরে ৬৭ জন, ময়মনসিংহে ১৩৯ জন, ভোলায় ৯৩ জন এবং সিলেটে ২২১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৩ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৪৫ জনের মধ্যে ১৪ জন কুমিল্লা জেলার। মৃতদের মধ্যে ৫ জন চট্টগ্রাম জেলার, ৯ জন চাঁদপুর জেলার, ৬ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন। রাজশাহী বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৭ জন, খুলনা বিভাগে ২৩ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন, সিলেট বিভাগে ১১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে। মৃত ১৭৮ জনের মধ্যে ১০৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৪০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল। মৃতদের মধ্যে ১০৯ জন ছিল পুরুষ, ৬৯ জন নারী। ১৩৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৫ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৪ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
দেশে ৩ সপ্তাহের মধ্যে নিচে মৃত্যু ও শনাক্ত
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ