নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনযাত্রা শুরু করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের পাঠানো ‘বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ কাতারের রাজধানী দোহা হয়ে লন্ডন পৌঁছাবেন তিনি। সেখান থেকে তাকে সরাসরি যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে নেওয়া হবে। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা চলবে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মলনে এসব কথা জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় (সোমবার) সাড়ে ৭টায় খালেদা জিয়াকে বহন করার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবে। লন্ডন বিমান বন্দরে খালেদা জিয়াকে রিসিভ করবেন তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রী ড. জোয়াবেদা রহমান এবং লন্ডন বিএনপির ২ জন নেতা। আর ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসকদের পাশাপাশি তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি যাবেন। ডা. জাহিদ বলেন, লন্ডন ক্লিনিক নামে একটি পুরোনো হাসপাতাল আছে, সেখানে ম্যাডামকে ভর্তি করানো হবে এবং চিকিৎসা চলবে। এই হাসপাতালে ম্যাডামের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। তাদের পরামর্শে ম্যাডামের চিকিৎসার পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের পরামর্শ ও রিভিউয়ের পর খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা কি ধরনের হবে তা বলা যাবে বলেও জানান ডা. জাহিদ। খালেদা জিয়া তার শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশবাসী বিভিন্ন সময় দোয়া করেছেন, সে জন্য তিনি সবারপ্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে উল্লেখ করে ডা. জাহিদ বলেন, আগামীতে যাতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারেন তার জন্য ম্যাডাম দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনিও দেশবাসীর জন্য দোয়া করছেন। খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. জাহিদ বলেন, ম্যাডামের যে বয়স এবং তাতে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে যাওয়ার পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সেখানে (লন্ডন ক্লিনিকে) এই সুবিধা আছে। সুতরাং তারাই সিদ্ধান্ত নেবে ম্যাডামের পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে। তাই এই বিষয়ে এখন আমরা ভাষাভাষা কথা বলছি। কারণ আমরা জানি না কালকে (মঙ্গলবার) সফরটা কেমন হবে। খালেদা জিয়াকে লন্ডনের যে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে সেটি সবচেয়ে পুরোনো, বিশ্বস্ত এবং আধুনিক সুবিধা সম্বলিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টার। সেখানে তাদের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা যদি খালেদা জিয়ার আমেরিকার চিকিৎসার সুপারিশ করে কিংবা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে যদি এমন কোনো চিকিৎসা না থাকে, যেটা ম্যাডামের প্রয়োজন তখন বিষয়টি আসবে বলে উল্লেখ করে ডা. জাহিদ।
বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডন যাত্রাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিমানবন্দরে আগমনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য বিশেষ এই সতর্কতাবস্থা নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বিমানবন্দরের বাইরে (ল্যান্ডসাইড) নিরাপত্তায় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের পাশাপাশি থাকবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ডিবি এবং সোয়াটের মতো স্পেশাল টিমের সদস্যরাও। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভুঁইয়া বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসাজনিত কারণে মঙ্গলবার রাত ১০টায় লন্ডনের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। আমরা মনে করি, এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে আসবেন। তাদের আসাতে আমাদের নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এভসেক, এপিবিএনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের বাইরে ও ভেতরে তার (খালেদা জিয়া) যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাই থাকবে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে আগত অন্য যাত্রীদের যাতে কোনো প্রকার নিরাপত্তা সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারেও আমাদের সর্বোচ্চ পদক্ষেপ থাকবে।’
সূত্র মতে, মূলত বিমানবন্দরের বাইরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিড় হতে পারে। সেই জায়গাতে মূল ভূমিকা পালন করবে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। তাদের সঙ্গে থাকবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। এ ছাড়াও থাকবেন সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দরের বাইরে ও ভেতরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকেই আমাদের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুরো বিমানবন্দর এলাকা আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেবে। অতিরিক্ত সদস্যদের পাশাপাশি কুইক রেসপন্স টিম, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। সন্দেহজনক হলেই তল্লাশি চালানো হবে।’ তিনি বলেন, আমরা মনে করি, অসংখ্য নেতাকর্মী হবে এই এলাকায়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। নেতাকর্মীদের কারণে রাস্তায় ট্রাফিক সমস্যা যেন না ঘটে, তার জন্যও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে সরাসরি লন্ডন ক্লিনিকে
খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা আজ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ