নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ‘সন্দেহভাজন’ বিদেশি নাগরিকদের আগমন ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সোমবার (১২ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, এ দেশে অনেক বিদেশির আগমন ঘটেছে, সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন ঘটেছে। বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন মিশন নিয়ে আসতেছে। আজ ফেসবুকে আপনারা সার্চ দিলে পাবেন, এক ভদ্রলোক বলছিলেন, এখন বলতে পারছি না। তবে আমার ধারণা, এ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এসব অপকর্ম করছে।
সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদ’ এ সভা আয়োজন করে। সেখানে ‘মানবিক করিডোরের’ বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, “এ মুহূর্তে আমি এ সরকারকে, অন্তত আমি আমার কথা বলছি, নিরপেক্ষ ভাবতে পারছি না। তারা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কারো হয়ে কাজ করছে। এ সরকার কোনো অবস্থাতেই গণবান্ধব কিংবা দেশপ্রেমিক সরকার নয়, আমি পরিষ্কার ভাষায় এটা বলতে চাই। আমার দেশ, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন?
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে এ সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারা দেশপ্রেমিক সরকার। সঠিক জবাব দেওয়ার পর আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হোক, আমি মাথা পেতে নেব। আমি আমার কথা বললাম। আমি জানি, এটা যথাযথ ফোরাম নয়, হয়ত আরো বড় কোনো জায়গায় বলা উচিত ছিল । কিন্তু আমি আমার মনের ক্ষোভ ধরে রাখতে পারিনি, আপনাদের সামনে প্রকাশ করলাম। আমার কথাটা একটু আপনারা মনে ধারণ করবেন এবং দেশবাসীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এখন কিন্তু আমরা খুব ভালো অবস্থানে নাই।
পিন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে কথাটা বলা ঠিক হবে কিনা, তারপরও বলব, পিন্টুকে যেভাবে স্মরণ করা হচ্ছে, এটা আমার জন্য, আমার দলের জন্য, সবার জন্য একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। এই পিন্টু এবং এই পিন্টুদের কার্যক্রমের জন্যই আজ বিএনপি এ অবস্থানে এসেছে। বিএনপি একদিনে আকাশ থেকে নামেনি কিংবা এক দিনেই বড় হয়ে যায়নি। তিলে তিলে এই বিএনপি বড় হয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি রাজনৈতিক অবস্থানে, আমরা কয়েক দিন যাবত দেখতে পারছি, বাংলাদেশে একটা সার্কাস জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, নাটক জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, আমার কাছে মনে হচ্ছে আরকি। আমি আবার কথাগুলো আটকিয়ে রাখতে পারি না, আমার একটা বাজে অভ্যাস। আগে আমরা দেখতাম যে, শেখ হাসিনা কিছু করার আগে কোথাও একটা অপকর্ম ঘটাত, আমরা বুঝতাম সে কিছু একটা ঘটাবে। একদিকে আমাদের দৃষ্টি নিয়ে যেত, আরেক দিক দিয়ে কাজ করত।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেখেন হামিদ সাহেব (আবদুল হামিদ) চলে গেলেন কি সুন্দর। হামিদ সাহেব কোন দিক দিয়ে চলে গেলেন? ভিআইপি দিয়ে। পত্রপত্রিকায় দেখলাম উনি নাকি গেঞ্জি পরে, লুঙ্গি পরে, মাস্ক লাগিয়ে গিয়েছে। লুঙ্গি পরে, গেঞ্জি পরে ভিআইপিতে ঢুকলেন কীভাবে? ভিআইপি সুবিধা নিয়ে এয়ারপোর্ট দিয়ে উনি পার হয়ে গেলেন, আর আমার সরকার বলে কিছু জানি না। ৬২২ জন আওয়ামী লীগের লোক পার হয়ে গেল, এ সরকার বলে আমরা কিছু জানি না, জানেনটা কী?
শাহবাগে নাটক কেন? মির্জা আব্বাস বলেন, আরো জানি কী কী ঘটাচ্ছে। নইলে শাহবাগের এ নাটক কেন হঠাৎ করে। যে শাহবাগ আপনারা বন্ধ করেছেন, যে শাহবাগের এই সমস্ত এলাকায় মিছিল-মিটিং করা যাবে না, সেখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, সরকারের দল এনসিপির লোকেরা ওখানে মিছিল-মিটিং করে কীভাবে? আর কোন দাবিতে মিছিল-মিটিং করল, কী দাবি? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে না করছে কে ভাই? কে না করছে? বিএনপি না করছে? খুব চেষ্টা করছে চালানোর জন্য বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায়। আমাদের ঠেকা পড়ে গেছে, বড় ঠেকা পড়ে গেছে।
প্রশাসনে কী হচ্ছে: মির্জা আব্বাস বলেন, প্রশাসনে বিভিন্ন এলাকায় পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মকর্তাদের বাতিল করে সেখানে কমপক্ষে জামায়াতের লোকজনকে দিতে হবে, জামায়াত না হলে আওয়ামী লীগ দিতে হবে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, থানা-পুলিশ-কোর্ট-কাচারি, সচিবালয়ের ভেতরে এসব কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে- বিএনপিকে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, এই সরকারের অনেক উপদেষ্টা বাংলাদেশের নাগরিকই নন, তারা এই দেশ পরিচালনা করতেছেন। এসব থেকে নজর ফিরিয়ে নিতে সরকার নানা কিছু ইস্যু করছে।
সেন্ট মার্টিন-সাজেক-বাঘাইছড়ি কেন যেতে পারবে না: মির্জা আব্বাস বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা ঔপনিবেশিক শাসনে আছি? আমার মনে হয় যে, আমরা দেশের মানুষের শাসনে নাই। সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি-এসব এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরূহ হয়ে গেছে। আমি কেন ইচ্ছা করলে সেন্ট মার্টিন যেতে পারি না, আামি কেন ইচ্ছা করলে সাজেক যেতে পারব না, আমি কেন ইচ্ছা করলে বাঘাইছড়ি যেতে পারব না, আমি এটা সরকার থেকে জানতে চাই। আমরা কি কোনো পরাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করি। সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি যেতে পাসপোর্ট ভিসা লাগবে? আমি এ সরকারের কাছে স্পষ্ট উত্তর জানতে চাই। আমি এটাও বুঝি না, আমার এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) ভাইয়েরা যারা বলতে চান, দ্বিতীয় স্বাধীনতা, তারা এ নিয়ে কথা বলছেন না কেন? যদি প্রশ্ন করেন, আপনি কেন বলছেন। আমি বলছি এ কারণে যে, এ দেশটাকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছে। এ দেশটা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন কারো কাছে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য নয়।
মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ: মির্জা আব্বাস বলেন, তিনটা এলাকার নাম বলছি, সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি- এসব এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরুহ হয়ে গেছে। আবার শুনি একটা জায়গায় নাকি করিডোর দেওয়া হবে। কীসের করিডোর? মানবিক করিডোর। আরে ভাই, বিশ্বের কোন ডিকশনারিতে মানবিক করিডোর নামে শব্দ আছে, কোথা থেকে এসব আবষ্কার করেন?
আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো করিডোর কিংবা প্যাসেজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই জনগণের মতামত ছাড়া। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে? মির্জা আব্বাস বলেন, করিডোর দিয়ে অন্য দলগুলো কথা বলছে না কেন; কী কারণে? জামায়াতে ইসলামী কথা বলে না কেন? বিভিন্ন পীর সাহেব আছেন, ওনারা কথা বলেন না কেন?
আবার বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার সময় সবাই এক হয়ে যান, এটা কেমন কথা হলো? অর্থাৎ বিএনপিকে শেষ করতে পারলেই বাংলাদেশটাকে আবারও লুটেপুটে খাওয়া যাবে আওয়ামী লীগের মতো।
সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হক বক্তব্য রাখেন।