ঢাকা ০১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ছুটির পরও বুয়েটে চলছে পরীক্ষা বর্জন, আইনি লড়াইয়ে প্রশাসন টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা ভোটের আগে ভারতের নির্দেশে রাজনৈতিক পোস্ট ব্লক করল এক্স ঋণ পেতে মরদেহ নিয়ে ব্যাংকে এলেন নারী প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আবেদন প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে বৈধ প্রার্থী ১৭৮৬ জন ভারতের জাতীয় নির্বাচন আজ শুরু নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‌্যাব মুখপাত্র মঈন বোতলজাত সয়াবিনের লিটারে দাম বাড়ল ৪ টাকা ২৪ এপ্রিল ব্যাংকক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব প্রতিবেদক : থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে

দেশে শনাক্তের হার ফের ১০ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ৩৪

  • আপডেট সময় : ০২:০২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মে ২০২১
  • ৩৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৪ জন। এতে শনাক্তের হার বেড়ে ১০.১১ শতাংশ হয়েছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মারা গেছেন আরও ৩৪ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৭ জন।
গতকাল রোববার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ২৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হন ১ হাজার ৪৪৪ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৯ মে শনাক্ত হন ১ হাজার ৪৩ জন। এদিন পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৭.৯১ শতাংশ। ২৮ মে শনাক্ত হন ১ হাজার ৩৫৮ জন ও শনাক্তের হার ৯.৩০ শতাংশ। ২৭ মে শনাক্ত হন ১ হাজার ২৯২ জন এবং শনাক্তের হার ৮.১২ শতাংশ। ২৬ মে শনাক্তের হার ছিল ৯.১১ শতাংশ ও ২৫ মে ১০.৮ শতাংশ। পাঁচদিন পর আজ শনাক্তের হার ফের ১০ শতাংশের বেশি। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩.৪৭ শতাংশ। এদিকে নতুন ৩৪ জনসহ দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৮৩ জনে। নতুন যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন ও নারী ১১ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক আছেন ২১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৫ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২ জন ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৭ জন। এনিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থতার হার ৯২.৪৮ শতাংশ। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। কয়েক মাস ধরে টানা মৃত্যু ও শনাক্ত ঊর্ধ্বগতিতে থাকার পর বছর শেষে কয়েক মাস ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। চলতি বছরের শুরুতে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত অনেকটা কমে আসে। তবে গত মার্চ মাস থেকে মৃত্যু ও শনাক্ত আবার বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা এটাকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলছেন।
দেশে মিলেছে যুক্তরাজ্য, সাউথ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট : বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, ৮৫টি সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, পাঁচটি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এবং ২৩টি ইন্ডিয়ার ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল বিফ্রিংয়ে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, দেশে এ যাবৎ ২৬৩টি সিকোয়েন্স করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, ৮৫টি সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, পাঁচটি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এবং ২৩টি ইন্ডিয়ার ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। বি.১.৬.৭ এটি ভারতফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে পেয়েছি আমরা। তবে এই ভ্যারিয়েন্ট নতুন কোনও বিষয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, যত রোগী শনাক্ত হবে, সংক্রমণ হবে, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে। সুতরাং ভ্যারিয়েন্ট যা-ই হোক না কেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যার যখন সময় আসবে, তাকে টিকা নিতে হবে। এভাবে আমরা সংক্রমণ কমাতে পারবো। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এটা আমের মৌসুম। আম পচনশীলও। অনেক পরিবার আমের বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই মৌসুমে আম কেনা-বেচা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাগান থেকে আম কেনা-বেচা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারজাত করার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিসরে খোলা জায়গায় বিক্রি করতে হবে। অনলাইন শপিংয়ে মাধ্যমে আম কেনা-বেচা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিস্থিতি বুঝে সীমান্তবর্তী সাত জেলায় লকডাউন : সংক্রমণ বাড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি। এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসব জেলায় ‘বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে’ জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গতকাল রোববার করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর আদেশের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এই কথা বলেন।
করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৪ মে থেকে সাত দিনের লকডাউন চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে আরও কয়েকটি সীমান্তবর্তী জেলায় ক্রমেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলা অবরুদ্ধে ঘোষণার সুপারিশ করা হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
সীমান্তবর্তী সাতটি জেলা হলো- নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা। এসব জেলাতেও গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ হার উধ্বমুখী।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের বিষয়টির আশঙ্কা থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেটা আমরা করছি। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। সেই বিষয়ে আমরা হয়তো জানাব, কী করা যেতে পারে। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোরের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’
বর্তমানে দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ১০ শতাংশের বেশি; সরকার এই হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৫ শতাংশে নেমে এলে ধরে নেয়া হয়, পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নয়। আমরা সেই রকম অবস্থায় দিকে নিতে চাই।’
লকডাউন আরও বাড়বে কি না জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাইছি ৫ শতাংশ আসার পরে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ রেখেছি। তাতে করে মানুষের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা বা বাধ্যবাধকতা নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকাটা স্বস্তিদায়ক।’
সংক্রমণের বতর্মান অবস্থায় স্কুল-কলেজ খোলা আরও পিছিয়ে যেতে পারে কি না জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেটি তাদের বিষয়। উনি বলেছেন এটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত খুলবে না।’
তাহলে ৫ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকছে কি না- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। যদিও আমরা বিকল্প ব্যবস্থাগুলো চিন্তা-ভাবনা করছি স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে। যে রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন পরীক্ষা, অনলাইন ক্লাস চলমান আছে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ছুটির পরও বুয়েটে চলছে পরীক্ষা বর্জন, আইনি লড়াইয়ে প্রশাসন

দেশে শনাক্তের হার ফের ১০ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ৩৪

আপডেট সময় : ০২:০২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৪ জন। এতে শনাক্তের হার বেড়ে ১০.১১ শতাংশ হয়েছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মারা গেছেন আরও ৩৪ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৭ জন।
গতকাল রোববার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ২৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হন ১ হাজার ৪৪৪ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৯ মে শনাক্ত হন ১ হাজার ৪৩ জন। এদিন পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৭.৯১ শতাংশ। ২৮ মে শনাক্ত হন ১ হাজার ৩৫৮ জন ও শনাক্তের হার ৯.৩০ শতাংশ। ২৭ মে শনাক্ত হন ১ হাজার ২৯২ জন এবং শনাক্তের হার ৮.১২ শতাংশ। ২৬ মে শনাক্তের হার ছিল ৯.১১ শতাংশ ও ২৫ মে ১০.৮ শতাংশ। পাঁচদিন পর আজ শনাক্তের হার ফের ১০ শতাংশের বেশি। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩.৪৭ শতাংশ। এদিকে নতুন ৩৪ জনসহ দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৮৩ জনে। নতুন যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন ও নারী ১১ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক আছেন ২১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৫ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২ জন ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৭ জন। এনিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থতার হার ৯২.৪৮ শতাংশ। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। কয়েক মাস ধরে টানা মৃত্যু ও শনাক্ত ঊর্ধ্বগতিতে থাকার পর বছর শেষে কয়েক মাস ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। চলতি বছরের শুরুতে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত অনেকটা কমে আসে। তবে গত মার্চ মাস থেকে মৃত্যু ও শনাক্ত আবার বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা এটাকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলছেন।
দেশে মিলেছে যুক্তরাজ্য, সাউথ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট : বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, ৮৫টি সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, পাঁচটি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এবং ২৩টি ইন্ডিয়ার ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল বিফ্রিংয়ে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, দেশে এ যাবৎ ২৬৩টি সিকোয়েন্স করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, ৮৫টি সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, পাঁচটি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এবং ২৩টি ইন্ডিয়ার ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। বি.১.৬.৭ এটি ভারতফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে পেয়েছি আমরা। তবে এই ভ্যারিয়েন্ট নতুন কোনও বিষয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, যত রোগী শনাক্ত হবে, সংক্রমণ হবে, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে। সুতরাং ভ্যারিয়েন্ট যা-ই হোক না কেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যার যখন সময় আসবে, তাকে টিকা নিতে হবে। এভাবে আমরা সংক্রমণ কমাতে পারবো। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এটা আমের মৌসুম। আম পচনশীলও। অনেক পরিবার আমের বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই মৌসুমে আম কেনা-বেচা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাগান থেকে আম কেনা-বেচা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারজাত করার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিসরে খোলা জায়গায় বিক্রি করতে হবে। অনলাইন শপিংয়ে মাধ্যমে আম কেনা-বেচা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিস্থিতি বুঝে সীমান্তবর্তী সাত জেলায় লকডাউন : সংক্রমণ বাড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি। এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসব জেলায় ‘বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে’ জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গতকাল রোববার করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর আদেশের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এই কথা বলেন।
করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৪ মে থেকে সাত দিনের লকডাউন চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে আরও কয়েকটি সীমান্তবর্তী জেলায় ক্রমেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলা অবরুদ্ধে ঘোষণার সুপারিশ করা হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
সীমান্তবর্তী সাতটি জেলা হলো- নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা। এসব জেলাতেও গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ হার উধ্বমুখী।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের বিষয়টির আশঙ্কা থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেটা আমরা করছি। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। সেই বিষয়ে আমরা হয়তো জানাব, কী করা যেতে পারে। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোরের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’
বর্তমানে দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ১০ শতাংশের বেশি; সরকার এই হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৫ শতাংশে নেমে এলে ধরে নেয়া হয়, পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নয়। আমরা সেই রকম অবস্থায় দিকে নিতে চাই।’
লকডাউন আরও বাড়বে কি না জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাইছি ৫ শতাংশ আসার পরে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ রেখেছি। তাতে করে মানুষের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা বা বাধ্যবাধকতা নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকাটা স্বস্তিদায়ক।’
সংক্রমণের বতর্মান অবস্থায় স্কুল-কলেজ খোলা আরও পিছিয়ে যেতে পারে কি না জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেটি তাদের বিষয়। উনি বলেছেন এটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত খুলবে না।’
তাহলে ৫ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকছে কি না- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। যদিও আমরা বিকল্প ব্যবস্থাগুলো চিন্তা-ভাবনা করছি স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে। যে রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন পরীক্ষা, অনলাইন ক্লাস চলমান আছে।’