নারী ও শিশু ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পড়ার সময় হ্যান্ড পেইন্ট করা টি-শার্ট বিক্রি করে তার ব্যবসার শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-শুভানুধ্যায়ী ও পরিচিতরা ছিলেন তার ক্রেতা। এরপর দেশে দিয়েছেন ছয়টি এবং লন্ডনে একটি আউটলেট। দেশে ও দেশের বাইরে সব নিয়ে শতাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তার সঙ্গে কাজ করছেন। তার নাম হাবিবা আক্তার সুরভী। ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘শরদিন্দু’র কর্ণধার।
যেভাবে শুরু: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গ্রাফিক ডিজাইনে পড়ার সময়ের কথা। অনেকটা শখের বশে শুরু করেন শরদিন্দু নামে একটি শপ। বিক্রি করেছেন হাতে আঁকা টি-শার্ট। ক্রেতা ছিলেন তারই পরিচিত লোকজন। এরই মধ্যে চারুকলায় পড়াশোনা শেষ হলে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি ফর দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টসে স্নাতকোত্তর করতে পাড়ি জমান। তত দিনে শরদিন্দুর বেশ সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ছোট পরিসরে শুরু করা শরদিন্দু ধীরে ধীরে দেশে খুলে ফেলেন ছয়টি আর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে একটি আউটলেট। অনলাইনে অর্ডার করে কুরিয়ারের মাধ্যমে এখন বিশ্বের যে কোনো দেশে বসে শরদিন্দুর পোশাক সংগ্রহ করা যায়। সুরভী ক্রেতাদের সুবিধার জন্য ডিএইচএল, ফেডেক্স, অ্যারামেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের সেবা নিয়ে থাকেন।
শরতের চাঁদ: ‘শরদিন্দু’ শব্দের অর্থ শরতের চাঁদ। চাঁদের মতোই ছড়াচ্ছে শরদিন্দুর পোশাক। মোট সাতটি আউটলেট এবং কারখানা মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন শতাধিক মানুষ। ঢাকায় বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে, নিউ মার্কেটে, বেইলি রোডের সিরাজ শপিং সেন্টার, উত্তরার জমজম টাওয়ার ও মিরপুর এবং সিলেটের কুমারপাড়ায় আছে শরদিন্দুর আউটলেটগুলো।
পাশে ছিলেন রিফাত: শরদিন্দু আজ বিখ্যাত ব্র্যান্ড। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তার সুনাম। আজকের এই অবস্থানের জন্য যে মানুষটি সব সময় সুরভীর পাশে ছিলেন, তিনি হলেন তার স্বামী তানবীর হোসাইন রিফাত।
সুরভী বলেন, ‘শরদিন্দু শুধু আমার একার জন্য এ পর্যন্ত আসেনি। এর নেপথ্যে অনেকের শ্রম ও মেধা ছিল। রিফাতসহ আরও অনেকে পাশে ছিল।’
লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে সুরভী সেখানে একটি আউটলেটের কথা ভাবতে থাকেন। উদ্দেশ্য ছিল, তার আউটলেটে যেন লন্ডনে বসবাসকারী বাঙালিরা দেখেশুনে পোশাক কিনতে পারেন। কিন্তু লন্ডনের মতো জায়গায় চাইলেই তো আর একটি আউটলেট খোলা যায় না। সুবিধামতো জায়গায় দোকান পেতেই কেটে যায় অনেকটা সময়। অবশেষে চেশ্যয়ার স্ট্রিটের একটি দোকান পছন্দ হয়ে যায়। সুরভী জানান, ওখানকার প্রবাসীরা শরদিন্দুকে খুব পছন্দ করেছেন। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
কনটেন্ট ক্রিয়েটে বাজিমাত: সুরভী এই সময়ে জনপ্রিয় লাইফস্টাইল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে একজন। ফেসবুক ও ইউটিউবে পোশাককে বিভিন্নভাবে তুলে ধরার কাজ করছেন তিনি। হাবিবা ডট সুরভী নামে ফেসবুক পেজে তার অনুসারীর সংখ্যা বর্তমানে ৮ লাখ ৮ হাজারের বেশি। একই নামে ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৬৪ হাজারের কাছাকাছি। ইউটিউবে তার ভিডিওর সংখ্যা ৩১০। রান্নাবান্না, মেকআপ, বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ এবং প্রাত্যহিক জীবনের টুকিটাকি বিষয় নিয়ে তার ভিডিওগুলো। নিজের ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়ে সুরভী বলেন, ‘আমার চ্যানেলে আপনি-আমি যা করতে পছন্দ করি, সেই ফ্যাশন, পেইন্টিং, রান্না, ভ্রমণসহ সবকিছু পাবেন। আমি নিজের কাজ নিয়ে কখনোই হীনম্মন্যতায় ভুগিনি। আমার মতো করেই নিজেকে এগিয়ে নিয়েছি।’
আয় নিয়ে সন্তুষ্ট: আউটলেট, ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে যা আয় করছেন, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। তবে ভিডিও বানিয়ে আয় তার জীবনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। ভিডিও বানিয়ে ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে টাকা আয় করেছেন, তা দিয়েই তিনি যুক্তরাজ্যে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়তে যান। ভিডিও থেকে আয়ের শুরুটা হয়েছিল তার ২০০ ডলার দিয়ে। সুরভী কোয়ালিটি কনটেন্ট তৈরি করেন। কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন তিনি। এসব কারণে তার নিজস্ব দর্শক তৈরি হয়েছে।
ভালোবাসায় ধন্য: দেশ-বিদেশে যেখানেই হোক, মানুষ সুরভীকে চেনে। ডেকে কথা বলে। ভালো লাগার কথা জানায়। ছোট্ট এই জীবনে এই-বা কম কিসে। মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়ে সুরভী নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। মানুষের ভালোবাসা ও ভালো লাগা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান অনেক দূর।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ