প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না থাকলেও আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে বলে দাবি করেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় তাকে বিচারের সম্মুখীন করা যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে উপস্থিত না থাকলেও তার বিচার হবে। পাশাপাশি তার অপরাধের সঙ্গে জড়িত পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য সহযোগীদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক জবাব পাওয়া যায়নি মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি ইতিবাচক কোনো সাড়া পাবেন বলেই আশা করেন। যদি আইনে থাকে, তবে শেখ হাসিনাকে দেশে নিয়ে আসতে কোনো বাধা থাকবে বলে মনে করেন না তিনি।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে উঠে আসে বহুল আলোচিত আয়নাঘর প্রসঙ্গ। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সম্প্রতি শতাধিক আয়নাঘরের অস্তিত্ব খুজে পাওয়ার দাবি করেছেন। কিন্তু এ স্থানগুলো এখনও প্রকাশ্যে না আনার কারণ জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আয়নাঘরগুলো স্থাপন করা হয়েছিল সামরিক বাহিনীর আওতাধীন এলাকায়। তাই এগুলোর অস্তিত্ব ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
আলাপচারিতার এই পর্যায়ে জানতে চাওয়া হয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতিতে সহযোগী অনেক ব্যক্তি এখনও প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন- এই অভিযোগের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী। জবাবে ড. ইউনূস বলেছেন, আগের সরকারের আমলে অনেকে হয়তো স্বেচ্ছায় অপরাধে যুক্ত ছিলেন। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে কিছু কাজে সহায়তা করেছেন। এসবের মধ্যে পার্থক্য করা কিছুটা কঠিন। তাই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা দফতর থেকে এখনও আগের সরকারের সব ব্যক্তিকে অপসারণ করা হয়নি।
জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় জুলাই-আগস্ট মাসে প্রায় ১৪০০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ভুক্তভোগী স্বজনরা ন্যায়বিচার পাবেন কিনা।
এ বিষয়ে নিজেদের স্বল্প মেয়াদের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়া অনেকটাই ধীর। কিন্তু আমাদের প্রশাসনের মেয়াদ তো কম। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। যাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায়, নিয়ে আসা হবে। আর বাকিদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলমান থাকবে। এটাকে তো আমরা অগ্রগতি বলতেই পারি।
সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে উত্থাপন করা হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি প্রসঙ্গ। তাকে বাংলাদেশে এনে বিচার করা হবে কিনা জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেছেন, আমি ঠিক নিশ্চিত নই, তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট আছে কিনা। যদি না থাকে, তবে একজন ব্রিটিশ নাগরিককে বাংলাদেশে এনে বিচার করা যাবে কিনা, সেই আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই। তবে বাংলাদেশে তার নামে থাকা সম্পদের বিষয়ে যাচাই করে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এখানে প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।