ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

দেশে তেলের অভাব নাই!

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৬:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মে ২০২২
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

মোকাম্মেল হোসেন : অফিসে পৌঁছেই পিয়ন হাম্বর আলীকে বাইরে পাঠালেন শরবতি বেগম। বললেন, এক বাটি চিকেন স্যুপ আনতে। সঙ্গে ব্যথানাশক ট্যাবলেট। হাম্বর আলী অফিস থেকে বের হওয়ার ঠিক সাড়ে তিন মিনিটের মাথায় ম্যানেজার নীলাম্বর শাহ উদ্ভ্রান্তের মতো শরবতি বেগমের কক্ষে প্রবেশ করে বললেন,
: আপা, শুনলাম আপনার দাঁত ব্যথা!
: হ্যাঁ। আজ সকাল থেকে…
: সকাল থেকে? ওহ্ গড!
: আপনার আবার কী হলো!
: ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, আমার চোয়াল ব্যথা করছে। ব্যাপারটা তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছি আপা, হঠাৎ কেন আমার চোয়াল ব্যথা করছিল!

চোয়াল ব্যথার ঘটনা সত্য নয়। হাম্বর আলীকে অফিসের বাইরে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস না করলে বসের দন্তশূল জাতীয় শারীরিক অসুবিধার কথা জানতেই পারতেন না নীলাম্বর শাহ। উপরওয়ালার দাঁত ব্যথা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে যদি অধস্তনের চোয়ালে ব্যথা শুরু হয়ে যায়- তাহলে উপরওয়ালার খুশি হওয়ারই কথা। শরবতি বেগম খুশি হলেন। তিনি নীলাম্বর শাহকে চা অফার করলেন। চা পানরত অবস্থায় যতটা সম্ভব মুখটাকে মলিন করে নীলাম্বর শাহ বললেন-
: আপা, আপনার সঙ্গে চা পান করার সুযোগ পেয়েছি- এটা যে আমার কতবড় একটা সৌভাগ্য, তা বলে বুঝাতে পারব না। কিনতু এত খুশির মধ্যেও মনটা বিষাদগ্রস্ত হয়ে আছে।
: কেন, কেন?
: না-না। কার কথা বলব- কে আবার বেজার হবে? দরকার কী আপা! তারচেয়ে মচকে যাওয়া হৃদয় নিয়ে কষ্ট যা ভোগ করার, আমিই করতে থাকি…
: আহা, বলুন না!
: কিছু মনে করবেন না আপা; আপনি এত পরিশ্রম করেন, এত খাটাখাটনি করেন, বলতে গেলে এই অফিসের উন্নতির জন্য আপনি নিজের শরীরের রক্ত পানি করে ফেলছেন- এটা দেখার পরও এই অফিসের কিছু বদলোক আপনার দুর্নাম করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। ওদের এই হারামিপনা দেখে আমি এতটাই মর্মাহত হই যে, কী বলব আপা!
: কারা দুর্নাম করে?
: কয়জনের নাম বলব?
: ঠিক আছে, মুখে বলার দরকার নেই। আপনি আমাকে একটা লিস্ট দেন। লিস্ট অনুযায়ী অ্যাকশন হবে।
আধাঘন্টার মধ্যে লিস্ট তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শরবতি বেগমের কক্ষ থেকে বের হয়েই হাম্বর আলীকে ডাকলেন তিনি। তারপর পকেট থেকে নতুন একটা একশ টাকার নোট বের করে তার হাতে দিয়ে খোশমেজাজে বললেন,
: নেও। এইটা হইল তথ্য গোপন না করার বখশিশ। তথ্য প্রবাহ যদি অবাধ রাখতে সক্ষম হও, তাহলে বখশিশও ননস্টপভাবে পাইতেই থাকবা…
এ ঘটনার কয়েকদিন পর হাম্বর আলী নিউমার্কেট যাওয়ার আগে কারণটা নীলাম্বর শাহকে বলে গেল। নীলাম্বর শাহ তক্কেতক্কেই ছিলেন। হাম্বর আলী নিউমাকের্ট থেকে ফেরার কিছুক্ষণ বাদে তিনি শরবতি বেগমের কক্ষে প্রবেশ করে বললেন-
: আপনার নতুন ফ্রেম আপা! ওফ, একেই বলে মনি-কাঞ্চন যোগ। যেমন আপনার মুখের গড়ন, তেমনি হয়েছে চশমার ফ্রেম; অপরূপ সমন্বয়।
: কিনতু…
: আমি জানি আপা, আপনি কী বলবেন! আপনি বলবেন, একথা বলে কেন আপনাকে লজ্জা দিচ্ছি- এই তো?
: নীলাম্বর সাহেব!
: জি আপা।
: লজ্জা আমি সত্যি সত্যি পাচ্ছি। তবে এই লজ্জাটা আসলে পাওয়া উচিত আপনার।
: আমার!
: হ্যাঁ, আপনার।
: কেন আপা!
: এই জন্য যে, আমার চশমার এই ফ্রেমটা নতুন নয়। প্রায় তিন বছর ধরে এটি পরছি আমি।
: কিনতু আপা, হাম্বর আলী তো নিউমার্কেট থেকে আপনার জন্য নতুন ফ্রেম নিয়ে এলো!
: হাম্বর আলী নিউমার্কেট থেকে নতুন ফ্রেম এনেছে ঠিকই; কিনতু সেটি এখনও আমি চোখে পরিনি, ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি; দেখবেন?
: না আপা, তার আর দরকার নেই। পুরাতনটা দেখেই মন ভরে গেছে আমার। তবে আপা, আপনার কাছে আমার একটা হাম্বল রিকোয়েস্ট আছে।
:কী রিকোয়েস্ট?
: এই ফ্রেমটা ডাস্টবিনে ফেলে না দিয়ে আমাকে দেবেন। আমি এটাকে এন্টিক হিসেবে সংরক্ষণ করব।

নীলাম্বর শাহের কথা শুনে শরবতি বেগম কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
: শাহ সাহেব!এইসব তুচ্ছ জিনিসপত্র নিয়ে সময় নষ্ট না করে আপনি এক কাজ করেন। : কী কাজ আপা?
: আপনি বাজারে চলে যান।
: বাজারে কীজন্য আপা!
: দেশে এখন সয়াবিন তেলের ভয়াবহ সংকট চলছে। লোকজন এক বাজার থেকে আরেক বাজারে ধর্না দিয়েও তেল পাচ্ছে না। আপনি তাদের আশ্বস্ত করে বলবেন-জনগণ, আপনারা হতাশ হবেন না; দেশে তেলের কোনো অভাব নাই। কী, পারবেন না?
লেখক: সাংবাদিক, রম্যলেখক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে তেলের অভাব নাই!

আপডেট সময় : ০৯:৩৬:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মে ২০২২

মোকাম্মেল হোসেন : অফিসে পৌঁছেই পিয়ন হাম্বর আলীকে বাইরে পাঠালেন শরবতি বেগম। বললেন, এক বাটি চিকেন স্যুপ আনতে। সঙ্গে ব্যথানাশক ট্যাবলেট। হাম্বর আলী অফিস থেকে বের হওয়ার ঠিক সাড়ে তিন মিনিটের মাথায় ম্যানেজার নীলাম্বর শাহ উদ্ভ্রান্তের মতো শরবতি বেগমের কক্ষে প্রবেশ করে বললেন,
: আপা, শুনলাম আপনার দাঁত ব্যথা!
: হ্যাঁ। আজ সকাল থেকে…
: সকাল থেকে? ওহ্ গড!
: আপনার আবার কী হলো!
: ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, আমার চোয়াল ব্যথা করছে। ব্যাপারটা তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছি আপা, হঠাৎ কেন আমার চোয়াল ব্যথা করছিল!

চোয়াল ব্যথার ঘটনা সত্য নয়। হাম্বর আলীকে অফিসের বাইরে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস না করলে বসের দন্তশূল জাতীয় শারীরিক অসুবিধার কথা জানতেই পারতেন না নীলাম্বর শাহ। উপরওয়ালার দাঁত ব্যথা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে যদি অধস্তনের চোয়ালে ব্যথা শুরু হয়ে যায়- তাহলে উপরওয়ালার খুশি হওয়ারই কথা। শরবতি বেগম খুশি হলেন। তিনি নীলাম্বর শাহকে চা অফার করলেন। চা পানরত অবস্থায় যতটা সম্ভব মুখটাকে মলিন করে নীলাম্বর শাহ বললেন-
: আপা, আপনার সঙ্গে চা পান করার সুযোগ পেয়েছি- এটা যে আমার কতবড় একটা সৌভাগ্য, তা বলে বুঝাতে পারব না। কিনতু এত খুশির মধ্যেও মনটা বিষাদগ্রস্ত হয়ে আছে।
: কেন, কেন?
: না-না। কার কথা বলব- কে আবার বেজার হবে? দরকার কী আপা! তারচেয়ে মচকে যাওয়া হৃদয় নিয়ে কষ্ট যা ভোগ করার, আমিই করতে থাকি…
: আহা, বলুন না!
: কিছু মনে করবেন না আপা; আপনি এত পরিশ্রম করেন, এত খাটাখাটনি করেন, বলতে গেলে এই অফিসের উন্নতির জন্য আপনি নিজের শরীরের রক্ত পানি করে ফেলছেন- এটা দেখার পরও এই অফিসের কিছু বদলোক আপনার দুর্নাম করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। ওদের এই হারামিপনা দেখে আমি এতটাই মর্মাহত হই যে, কী বলব আপা!
: কারা দুর্নাম করে?
: কয়জনের নাম বলব?
: ঠিক আছে, মুখে বলার দরকার নেই। আপনি আমাকে একটা লিস্ট দেন। লিস্ট অনুযায়ী অ্যাকশন হবে।
আধাঘন্টার মধ্যে লিস্ট তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শরবতি বেগমের কক্ষ থেকে বের হয়েই হাম্বর আলীকে ডাকলেন তিনি। তারপর পকেট থেকে নতুন একটা একশ টাকার নোট বের করে তার হাতে দিয়ে খোশমেজাজে বললেন,
: নেও। এইটা হইল তথ্য গোপন না করার বখশিশ। তথ্য প্রবাহ যদি অবাধ রাখতে সক্ষম হও, তাহলে বখশিশও ননস্টপভাবে পাইতেই থাকবা…
এ ঘটনার কয়েকদিন পর হাম্বর আলী নিউমার্কেট যাওয়ার আগে কারণটা নীলাম্বর শাহকে বলে গেল। নীলাম্বর শাহ তক্কেতক্কেই ছিলেন। হাম্বর আলী নিউমাকের্ট থেকে ফেরার কিছুক্ষণ বাদে তিনি শরবতি বেগমের কক্ষে প্রবেশ করে বললেন-
: আপনার নতুন ফ্রেম আপা! ওফ, একেই বলে মনি-কাঞ্চন যোগ। যেমন আপনার মুখের গড়ন, তেমনি হয়েছে চশমার ফ্রেম; অপরূপ সমন্বয়।
: কিনতু…
: আমি জানি আপা, আপনি কী বলবেন! আপনি বলবেন, একথা বলে কেন আপনাকে লজ্জা দিচ্ছি- এই তো?
: নীলাম্বর সাহেব!
: জি আপা।
: লজ্জা আমি সত্যি সত্যি পাচ্ছি। তবে এই লজ্জাটা আসলে পাওয়া উচিত আপনার।
: আমার!
: হ্যাঁ, আপনার।
: কেন আপা!
: এই জন্য যে, আমার চশমার এই ফ্রেমটা নতুন নয়। প্রায় তিন বছর ধরে এটি পরছি আমি।
: কিনতু আপা, হাম্বর আলী তো নিউমার্কেট থেকে আপনার জন্য নতুন ফ্রেম নিয়ে এলো!
: হাম্বর আলী নিউমার্কেট থেকে নতুন ফ্রেম এনেছে ঠিকই; কিনতু সেটি এখনও আমি চোখে পরিনি, ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি; দেখবেন?
: না আপা, তার আর দরকার নেই। পুরাতনটা দেখেই মন ভরে গেছে আমার। তবে আপা, আপনার কাছে আমার একটা হাম্বল রিকোয়েস্ট আছে।
:কী রিকোয়েস্ট?
: এই ফ্রেমটা ডাস্টবিনে ফেলে না দিয়ে আমাকে দেবেন। আমি এটাকে এন্টিক হিসেবে সংরক্ষণ করব।

নীলাম্বর শাহের কথা শুনে শরবতি বেগম কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
: শাহ সাহেব!এইসব তুচ্ছ জিনিসপত্র নিয়ে সময় নষ্ট না করে আপনি এক কাজ করেন। : কী কাজ আপা?
: আপনি বাজারে চলে যান।
: বাজারে কীজন্য আপা!
: দেশে এখন সয়াবিন তেলের ভয়াবহ সংকট চলছে। লোকজন এক বাজার থেকে আরেক বাজারে ধর্না দিয়েও তেল পাচ্ছে না। আপনি তাদের আশ্বস্ত করে বলবেন-জনগণ, আপনারা হতাশ হবেন না; দেশে তেলের কোনো অভাব নাই। কী, পারবেন না?
লেখক: সাংবাদিক, রম্যলেখক।