ঢাকা ১২:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

দেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে

  • আপডেট সময় : ০১:৫০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২১
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক: এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২১’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়নে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, ২০২১’ এ বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৭২। গতবছর এই স্কোর ছিল ৬৮। কোভিড-১৯ মহামারিতে কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী কার্যক্রমে হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, টিভি টুডে’র এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে এবং আর্টিক্যাল ৫.৩ এর নির্দেশনাবলি বাস্তবায়নে কোনও অগ্রগতি হয়নি। কূটনৈতিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার বিষয়টি উঠে এসেছে। জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) কোম্পানির পক্ষে অর্থমন্ত্রীকে লেখা জাপানি রাষ্ট্রদূতের চিঠিতে বলা হয়, জেটিআই’র ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়— এমন কোনও তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ নেওয়া হলে, তা বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ জাপানি বিনিয়োগের (এফডিআই) পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।
অপরদিকে প্রতিবেদনে উঠে আসা জনস্বাস্থ্যবিরোধী আরেকটি ঘটনার সূচনা করোনা মহামারির শুরুর দিকে। ২০২০ সালের এপ্রিলে লকডাউন চলাকালীন সরকারি আদেশের মাধ্যমে দু’টি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) এবং জেটিআই’কে লকডাউনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি প্রদান করে শিল্প মন্ত্রণালয়। কোম্পানিগুলো যাতে নির্বিঘেœ সিগারেট উৎপাদন, বিপণন ও তামাক পাতা ক্রয় করতে পারে, সেজন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রদান করা হয়। তামাক কোম্পানিকে দেওয়া এই বিশেষ অনুমতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তুলে নেওয়ার অনুরোধ করা হলে শিল্প মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়। এশিয়ান টোব্যাকো লিমিটেড নামে একটি তামাক কোম্পানিকে ঈশ্বরদী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। ফলে কর অবকাশসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করবে তামাক কোম্পানিটি। এছাড়া বিড়ির ওপর কর কমানোর দাবি সমর্থন করে ১০ জন সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী বরাবর আধা-সরকারি চিঠি পাঠিয়েছেন।
গবেষণায় ২০২০ সালে করোনা মহামারি চলাকালে তামাক কোম্পানিগুলোকে যেভাবে বিভিন্ন কথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে, ইতোপূর্বে সেভাবে কখনও দেখা যায়নি। মহামারির সুযোগ নিয়ে দাতব্য কাজের নামে যেমন আগ্রাসিভাবে ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি করেছে, অপরদিকে সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাবশালী সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সান্নিধ্যে এসে ভবিষ্যৎ হস্তক্ষেপের পথ সুগম করেছে তামাক কোম্পানিগুলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকেও তামাক কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করতে দেখা গেছে।
গবেষণার সুপারিশে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে এফসিটিসি’র সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সিগারেটকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দিতে ১৯৫৬ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন, একটি সহজ তামাককর ও মূল্য নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার/বিনিয়োগ প্রত্যাহার, তামাক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ বা আলোচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ এর আলোকে আচরণবিধি চূড়ান্তকরণ এবং তামাক কোম্পানিকে সব ধরনের পুরস্কার প্রদান বন্ধসহ প্রদত্ত সকল সুবিধা প্রত্যাহার ও তামাক ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে

আপডেট সময় : ০১:৫০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক: এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২১’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়নে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, ২০২১’ এ বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৭২। গতবছর এই স্কোর ছিল ৬৮। কোভিড-১৯ মহামারিতে কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী কার্যক্রমে হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, টিভি টুডে’র এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে এবং আর্টিক্যাল ৫.৩ এর নির্দেশনাবলি বাস্তবায়নে কোনও অগ্রগতি হয়নি। কূটনৈতিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার বিষয়টি উঠে এসেছে। জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) কোম্পানির পক্ষে অর্থমন্ত্রীকে লেখা জাপানি রাষ্ট্রদূতের চিঠিতে বলা হয়, জেটিআই’র ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়— এমন কোনও তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ নেওয়া হলে, তা বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ জাপানি বিনিয়োগের (এফডিআই) পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।
অপরদিকে প্রতিবেদনে উঠে আসা জনস্বাস্থ্যবিরোধী আরেকটি ঘটনার সূচনা করোনা মহামারির শুরুর দিকে। ২০২০ সালের এপ্রিলে লকডাউন চলাকালীন সরকারি আদেশের মাধ্যমে দু’টি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) এবং জেটিআই’কে লকডাউনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি প্রদান করে শিল্প মন্ত্রণালয়। কোম্পানিগুলো যাতে নির্বিঘেœ সিগারেট উৎপাদন, বিপণন ও তামাক পাতা ক্রয় করতে পারে, সেজন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রদান করা হয়। তামাক কোম্পানিকে দেওয়া এই বিশেষ অনুমতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তুলে নেওয়ার অনুরোধ করা হলে শিল্প মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়। এশিয়ান টোব্যাকো লিমিটেড নামে একটি তামাক কোম্পানিকে ঈশ্বরদী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। ফলে কর অবকাশসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করবে তামাক কোম্পানিটি। এছাড়া বিড়ির ওপর কর কমানোর দাবি সমর্থন করে ১০ জন সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী বরাবর আধা-সরকারি চিঠি পাঠিয়েছেন।
গবেষণায় ২০২০ সালে করোনা মহামারি চলাকালে তামাক কোম্পানিগুলোকে যেভাবে বিভিন্ন কথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে, ইতোপূর্বে সেভাবে কখনও দেখা যায়নি। মহামারির সুযোগ নিয়ে দাতব্য কাজের নামে যেমন আগ্রাসিভাবে ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি করেছে, অপরদিকে সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাবশালী সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সান্নিধ্যে এসে ভবিষ্যৎ হস্তক্ষেপের পথ সুগম করেছে তামাক কোম্পানিগুলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকেও তামাক কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করতে দেখা গেছে।
গবেষণার সুপারিশে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে এফসিটিসি’র সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সিগারেটকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দিতে ১৯৫৬ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন, একটি সহজ তামাককর ও মূল্য নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার/বিনিয়োগ প্রত্যাহার, তামাক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ বা আলোচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ এর আলোকে আচরণবিধি চূড়ান্তকরণ এবং তামাক কোম্পানিকে সব ধরনের পুরস্কার প্রদান বন্ধসহ প্রদত্ত সকল সুবিধা প্রত্যাহার ও তামাক ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।