ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে করোনায় ঝরলো ২০ হাজার প্রাণ, শনাক্ত ছাড়াল ১২ লাখ

  • আপডেট সময় : ০২:২৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দশ দিনে আরও এক লাখ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেল। আর মাত্র চার দিনে আরও এক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল এ ভাইরাস, তাতে কোভিডে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ২০ হাজার। এমন এক দিনে বাংলাদেশ এই দুই দুঃখজনক মাইলফলকে পৌঁছালো, যেদিন সারা দেশে প্রায় ৫৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক দিনে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৩৭ জনের। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট ২০ হাজার ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৩ হাজার ৪৭০ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ জন। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে দেশে জুনের শুরুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর গ্রাফে যে ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছিল, দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে তা নিয়ে গেছে মহামারীর সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে।
জুলাইয়ের শুরু থেকে ১৪ দিন সারা দেশে কঠোর লকডাউনের পর কোরবানির ঈদের বিরতি দেওয়া হয়েছিল নয় দিন। বিশেষজ্ঞরা তাতে বড় ধরনের ঝুঁকি দেখার কথা বলেছিলেন। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার সারা দেশে বিধিনিষেধ চললেও সেই শঙ্কা সত্যি করে নিত্যনতুন রেকর্ড হচ্ছে প্রতিদিন।
গত সোমবার দেশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৯২ জন নতুন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি ২৪৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত মঙ্গলবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমলেও এক দিনে ২৫৮ জনের মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়। গতকাল বুধবার মৃত্যুর সংখ্যা আড়াইশর সামান্য নিচে নামলেও ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড বাংলাদেশকে দেখতে হল।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৮ হাজার ২৭১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আর এই সময়ে যে ২৩৭ জন মারা গেছেন, তাদের ৭০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৫৪ লাখের বেশি রোগী।
শনাক্ত-মৃত্যুর পথরেখা : বাংলাদেশ গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায় গত বছরের ১৮ জুন। এক মাসের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মোট শনাক্ত দুই লাখ ছাড়ায় গত বছরের ১৮ জুলাই।
এরপর ২৬ আগস্ট তিন লাখ, ২৬ অক্টোবর ৪ লাখ, ২০ ডিসেম্বর ৫ লাখ, ২৯ মার্চ ৬ লাখের ঘর ছাড়ায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। এরপর সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৫ এপ্রিল ৭ লাখ, ৩১ মে ৮ লাখ, ২৯ জুন ৯ লাখ, ৯ জুলাই ১০ লাখ এবং ১৮ জুলাই ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায় মোট শনাক্ত। এরপর দশ দিনে আরও এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম রোগী শনাক্তের দশ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু নিশ্চিত করে আইইডিসিআর। দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায় গত বছরের ১০ জুন।

এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৬ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার, ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজার ছাড়ায় মোট মৃতের সংখ্যা। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি তা ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ ৯ হাজার পেরিয়ে যায়।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ানোর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিপ্তর। এরপর গত ২৫ এপ্রিল ১১ হাজার, ১১ মে ১২ হাজার, ১১ জুন ১৩ হাজার, ২৬ জুন ১৪ হাজার, ৪ জুলাই ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা। ৯ জুলাই তা ১৬ হাজার, ১৪ জুলাই ১৭ হাজার এবং ১৯ জুলাই ১৮ হাজার এবং ২৪ জুলাই ১৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সেখান থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে সময় লাগল মাত্র চারদিন। এত কম সময়ে হাজার মৃত্যু বাংলাদেশকে আর দেখতে হয়নি। মহামারীর মধ্যে প্রথম ১০ হাজার মৃত্যুতে সময় লেগেছিল তের মাসের মত। কিন্তু তার পরের দশ হাজার মৃত্যু ঘটাতে সাড়ে তিন মাসেরও কম সময় নিল করোনাভাইরাস। এ বছরের প্রায় আট মাসেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের।
দিনের হিসাব : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৫৮৮টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ১২ শতাংশে, যা আগেরদিন ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল। গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৬৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৬১ জন, গাজীপুরে ৩০৩ জন,কিশোরগঞ্জে ১২২ জন, মানিকগঞ্জে ১৯২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৩২ জন, নরসিংদীতে ১৮১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০০ জন, রাজবাড়ীতে ১২৪ জন, শরীয়তপুরে ২০২ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৯৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯১৫ জন, কক্সবাজারে ৩২৬ জন, ফেনীতে ১৯৪ জন, নোয়াখালীতে ২৫১ জন, চাঁদপুরে ২২৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০২ জন এবং কুমিল্লায় ৮৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২১৮ জন, পাবনায় ২০৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৯৮ জন এবং বগুড়ায় ১০৬ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে। খুলনা বিভাগের মধ্যে বাগেরহাটে খুলনা জেলায় ১৭৬ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২২৭ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৪০ জন, বরিশালে ২৮৮ জন, পটুয়াখালীতে ১৬৮ জন, ভোলায় ১৭৬ জন, সিলেটে ৩৪১ জন, সুনামগঞ্জে ১১৬ জন, মৌলভীবাজারে ২২৫ জন এবং রংপুরে ১৮৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৭ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬২ জন জনের মধ্যে ১৭ জন চট্টগ্রামের এবং ১৮ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, খুলনা বিভাগে ৩৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে। মৃত ২৩৭ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৪৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৮৮ জন ছিলেন নারী। ১৬৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ৫৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নারী মৃত্যু বেড়েছে: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ও সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে নারী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গতকাল বুধবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের নজরে আছে এবং সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। তথ্য-উপাত্তগুলো এক জায়গায় হওয়ার পরে আমরা নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবো।’
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে, তারপর খুলনায়। সবচেয়ে কম সংখ্যক রোগী মারা গেছেন সিলেট বিভাগে। জেলার তথ্যে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন, চার লাখ ১৯ হাজার ১২৮ জন। এরপরই বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অবস্থান। সেখানে ৭৪ হাজার ১৯৩ জন রোগী এবং সবচেয়ে কম রোগী ১৮ হাজার ৮৩৮ জন শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী জেলায়।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে করোনায় ঝরলো ২০ হাজার প্রাণ, শনাক্ত ছাড়াল ১২ লাখ

আপডেট সময় : ০২:২৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দশ দিনে আরও এক লাখ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেল। আর মাত্র চার দিনে আরও এক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল এ ভাইরাস, তাতে কোভিডে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ২০ হাজার। এমন এক দিনে বাংলাদেশ এই দুই দুঃখজনক মাইলফলকে পৌঁছালো, যেদিন সারা দেশে প্রায় ৫৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক দিনে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৩৭ জনের। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট ২০ হাজার ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৩ হাজার ৪৭০ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ জন। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে দেশে জুনের শুরুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর গ্রাফে যে ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছিল, দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে তা নিয়ে গেছে মহামারীর সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে।
জুলাইয়ের শুরু থেকে ১৪ দিন সারা দেশে কঠোর লকডাউনের পর কোরবানির ঈদের বিরতি দেওয়া হয়েছিল নয় দিন। বিশেষজ্ঞরা তাতে বড় ধরনের ঝুঁকি দেখার কথা বলেছিলেন। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার সারা দেশে বিধিনিষেধ চললেও সেই শঙ্কা সত্যি করে নিত্যনতুন রেকর্ড হচ্ছে প্রতিদিন।
গত সোমবার দেশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৯২ জন নতুন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি ২৪৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত মঙ্গলবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমলেও এক দিনে ২৫৮ জনের মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়। গতকাল বুধবার মৃত্যুর সংখ্যা আড়াইশর সামান্য নিচে নামলেও ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড বাংলাদেশকে দেখতে হল।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৮ হাজার ২৭১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আর এই সময়ে যে ২৩৭ জন মারা গেছেন, তাদের ৭০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৫৪ লাখের বেশি রোগী।
শনাক্ত-মৃত্যুর পথরেখা : বাংলাদেশ গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায় গত বছরের ১৮ জুন। এক মাসের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মোট শনাক্ত দুই লাখ ছাড়ায় গত বছরের ১৮ জুলাই।
এরপর ২৬ আগস্ট তিন লাখ, ২৬ অক্টোবর ৪ লাখ, ২০ ডিসেম্বর ৫ লাখ, ২৯ মার্চ ৬ লাখের ঘর ছাড়ায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। এরপর সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৫ এপ্রিল ৭ লাখ, ৩১ মে ৮ লাখ, ২৯ জুন ৯ লাখ, ৯ জুলাই ১০ লাখ এবং ১৮ জুলাই ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায় মোট শনাক্ত। এরপর দশ দিনে আরও এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম রোগী শনাক্তের দশ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু নিশ্চিত করে আইইডিসিআর। দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায় গত বছরের ১০ জুন।

এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৬ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার, ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজার ছাড়ায় মোট মৃতের সংখ্যা। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি তা ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ ৯ হাজার পেরিয়ে যায়।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ানোর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিপ্তর। এরপর গত ২৫ এপ্রিল ১১ হাজার, ১১ মে ১২ হাজার, ১১ জুন ১৩ হাজার, ২৬ জুন ১৪ হাজার, ৪ জুলাই ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা। ৯ জুলাই তা ১৬ হাজার, ১৪ জুলাই ১৭ হাজার এবং ১৯ জুলাই ১৮ হাজার এবং ২৪ জুলাই ১৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সেখান থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে সময় লাগল মাত্র চারদিন। এত কম সময়ে হাজার মৃত্যু বাংলাদেশকে আর দেখতে হয়নি। মহামারীর মধ্যে প্রথম ১০ হাজার মৃত্যুতে সময় লেগেছিল তের মাসের মত। কিন্তু তার পরের দশ হাজার মৃত্যু ঘটাতে সাড়ে তিন মাসেরও কম সময় নিল করোনাভাইরাস। এ বছরের প্রায় আট মাসেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের।
দিনের হিসাব : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৫৮৮টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ১২ শতাংশে, যা আগেরদিন ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল। গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৬৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৬১ জন, গাজীপুরে ৩০৩ জন,কিশোরগঞ্জে ১২২ জন, মানিকগঞ্জে ১৯২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৩২ জন, নরসিংদীতে ১৮১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০০ জন, রাজবাড়ীতে ১২৪ জন, শরীয়তপুরে ২০২ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৯৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯১৫ জন, কক্সবাজারে ৩২৬ জন, ফেনীতে ১৯৪ জন, নোয়াখালীতে ২৫১ জন, চাঁদপুরে ২২৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০২ জন এবং কুমিল্লায় ৮৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২১৮ জন, পাবনায় ২০৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৯৮ জন এবং বগুড়ায় ১০৬ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে। খুলনা বিভাগের মধ্যে বাগেরহাটে খুলনা জেলায় ১৭৬ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২২৭ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৪০ জন, বরিশালে ২৮৮ জন, পটুয়াখালীতে ১৬৮ জন, ভোলায় ১৭৬ জন, সিলেটে ৩৪১ জন, সুনামগঞ্জে ১১৬ জন, মৌলভীবাজারে ২২৫ জন এবং রংপুরে ১৮৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৭ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬২ জন জনের মধ্যে ১৭ জন চট্টগ্রামের এবং ১৮ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, খুলনা বিভাগে ৩৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে। মৃত ২৩৭ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৪৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৮৮ জন ছিলেন নারী। ১৬৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ৫৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নারী মৃত্যু বেড়েছে: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ও সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে নারী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গতকাল বুধবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের নজরে আছে এবং সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। তথ্য-উপাত্তগুলো এক জায়গায় হওয়ার পরে আমরা নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবো।’
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে, তারপর খুলনায়। সবচেয়ে কম সংখ্যক রোগী মারা গেছেন সিলেট বিভাগে। জেলার তথ্যে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন, চার লাখ ১৯ হাজার ১২৮ জন। এরপরই বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অবস্থান। সেখানে ৭৪ হাজার ১৯৩ জন রোগী এবং সবচেয়ে কম রোগী ১৮ হাজার ৮৩৮ জন শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী জেলায়।’