নিজস্ব প্রতিবেদক : এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে এসে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হওয়া চার চীনা নাগরিকের মধ্যে একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন বিএফ.৭ শনাক্ত হয়েছে।
গতকাল রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানান, ওই ব্যক্তির শরীরে পাওয়া ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স রিপোর্টে এ উপধরনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত ২৬ ডিসেম্বর বিকালে চার চীনা নাগরিক কুনমিং থেকে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। ফ্লাইটে মোট ১০৫ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ওই চার পুরুষ যাত্রীর সবাই চীন থেকে আরটিপিসিআর যন্ত্রে পরীক্ষা করানো ‘কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট’ নিয়ে যাত্রা করছিলেন। কিন্তু তাদের মুখম-ল লাল থাকায় বিমানবন্দরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয় এবং ফলাফল কোভিড পজিটিভ আসে। সেসময় তাদের মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারে নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই রয়েছে।
চীনে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ডিসেম্বর দেশের সব বন্দরে সতর্কতা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি চীন ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপধরন পাওয়া গেছে। ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ.৭ এর কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন এ উপধরন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিমান, স্থল ও সমুদ্রবন্দরে ‘স্ক্রিনিং’ জোরদার করার নির্দেশ দিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়, সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হবে।
এক দিনে শনাক্ত ১৭ রোগী: দেশে গত এক দিনে ১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; এই সময়ে মৃত্যু হয়নি কারো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। তাতে দিনে শনাক্তের হার বেড়ে ১ দশমিক ০৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের দিন ০ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ১৪২ জন হয়েছে। মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতই ২৯ হাজার ৪৪০ জন রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ জন কোভিড রোগীর সেরে ওঠার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৮২১ জন। গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১৬ জনই ঢাকার বাসিন্দা। এছাড়া রাজশাহীতে একজন নতুন রোগী মিলেছে। দেশের বাকি ৬২ জেলায় আর কারও দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা। বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬৬ লাখ ৯০ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লাখ।
দেশে ওমিক্রনের উপধরন বিএফ.৭ শনাক্ত
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ