ঢাকা ০৬:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

দেশে এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত ১১৫% বেড়েছে, হার সাতের কাছে

  • আপডেট সময় : ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা শনাক্ত বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম। গতকাল রোববার বেলা দুইটায় এই ব্রিফিং হয়। নাজমুল ইসলাম জানান, গত শনিবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে দেশে ৬ হাজার ৩০০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩ হাজার ৩৭৬ জন বেশি। অর্থাৎ এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১৫।
বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকারিভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আজ অথবা কালের মধ্যেই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৯। চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে করোনায় ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এটি এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। দেশে গত কয়েক দিনে শনাক্তের সংখ্যা , হার উভয়ই বাড়ছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকেও শনাক্তের হার ২ শতাংশের নিচে ছিল। গতকাল এটি প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, গত ৩০ দিনের চিত্রের দিকে তাকালে একটি ঊর্ধ্বমুখী চিত্র চোখে পড়ে। সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপে অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে ব্যাপকভাবে। বাংলাদেশে অমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা ও সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য না জানিয়ে বলতে চাই, অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই একেবারেই সুস্থ আছেন। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। তাহলে যেকোনো রোগ দ্রুত সারানো সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, দেশের ১১৮টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকায় সামগ্রিকভাবে কোভিড হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৪ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে খালি আছে ৪ হাজার ১৭৯টি। করোনার বাড়তে থাকা সংক্রমণ হার কমাতে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরেন অধ্যাপক নাজমুল। তিনি বলেন, মাস্ক আমার, সুরক্ষা সবার-এ কথাটি আমাদের স্মরণে রাখতে হবে সব সময়।
দেশে শনাক্তের হার বেড়ে সাতের কাছে, মৃত্যু ৩ : দেশে করোনাভাইরাসের দৈনিক শনাক্তের হার বেড়ে সাতের কাছে পৌঁছেছে। গত এক দিনে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯১ জন, যাতে শনাক্তের হার ৬.৭৮ শতাংশ। শনিবার এ হার ছিল ৫.৭৯ শতাংশ। শুক্রবার ছিল ৫.৬৭ শতাংশ। এতে টানা তিন দিন শনাক্তের হার পাঁচের ওপরেই রইল। এছাড়া গত এক দিনে মারা গেছেন তিনজন। সুস্থ হয়েছেন ২১৭ জন।
গতকাল রোববার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক দিনে ২১ হাজার ৯৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ১ হাজার ৪৯১ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৬.৭৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ জন, যাতে মোট শনাক্তের হার ১৩.৬৫ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ২১৭ জন। এনিয়ে মোট সুস্থ ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৯০৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত এক দিনে করোনা মারা গেছেন তিনজন। এদের একজন পুরুষ ও দুজন নারী। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১০২ জনের। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। এরপর থেকে মাঝখানে দুই দিন কেটেছে মৃত্যুহীন। এছাড়া বাকি সব দিনই মৃত্যু দেখেছে বাংলাদেশ। গত জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত চরম আকার ধারণ করলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে বাড়ছে সংক্রমণ। ইতিমধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দেশেও শনাক্ত হয়েছে। ১০ জনের শরীরে নতুন এই ভেরিয়েন্টটি ধরা পড়েছে। অতি দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে পড়া ভেরিয়েন্টটি নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে গেলে আবার দেশে বিধিনিষেধ জারি হতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে দ্রুতই প্রজ্ঞাপন : গণজমায়েত করতে নিষেধ করা হলেও নাগরিকরা তা অমান্য করায় সার্স কোভ-২ বা কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একইসঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। দেশের বিভাগীয় ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। জাহিদ মালেক বলেন, ‘বলেছিলাম গণজমায়েত কমাতে হবে, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী করতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, কোনো একটা লোকও এসব বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। যার ফলে দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’
দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। আমি আগেই বলেছিলাম, টিকা সংক্রমণ কমায় না, মৃত্যুর হার কমায়। টিকার অভাব হচ্ছে না। কিন্তু মানুষের টিকা নেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আপনারা জানেন দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত এক সপ্তাহ আগেও দেশে দৈনিক দুই থেকে আড়াইশো মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকালও দেশের সংক্রমণের হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। যখন থেকে সংক্রমণ বাড়া শুরু হয়েছে, তখন থেকেই আমরা সতর্কতা নিয়ে প্রচার করে যাচ্ছি।’ দেশে এখন পর্যন্ত আট কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা কার্যক্রম দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এবং চলমান আছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকার অভাব হচ্ছে না। কিন্তু মানুষের টিকা নেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। সে কারণে আমার বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করছি। টিকা দেওয়ার জন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত গিয়েছিলাম। ইউনিয়নে তিনটি ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হতো, এখন সেটাকে ৯টি ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছি, যাতে বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসে। আজ মৃত্যুর হার এত কম কেন? কারণ এ পর্যন্ত পৌনে আট কোটি মানুষ টিকা নিয়েছে। তাই মৃত্যুর হার এত কম।’
বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারিভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আজ অথবা কালের মধ্যেই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর মাধ্যমে পূর্বে যে নির্দেশনাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সারাদেশে বার্তা চলে যাবে। আমরা কেবিনেট থেকে জানতে পেরেছি এর কার্যকারিতাও খুব শিগগিরই শুরু হয়ে যাবে। সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। আর এই মুহূর্তে সংক্রমণের লক্ষণ আমরা দেখছি, সংক্রমণ অতিমাত্রায়, অতি দ্রুত বাড়ছে।’
ক্যান্সারে বছরে মারা যাচ্ছে লাখো মানুষ : দেশে আশঙ্কাজনকভাবে ক্যান্সার বাড়ছে। এই রোগে বছরে এক লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্যান্সারে প্রতি বছরে এক লাখ মানুষ মারা যায়। এখন চিকিৎসাধীন ২০ লাখ।’ জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধীনে ৪৬০ শয্যা বিশিষ্ট সমন্বিত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে মানুষ সব বিভাগীয় শহরেই বিশেষায়িত এসব সেবা পাবেন।’ ভেজাল খাদ্য, মাদক, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনসহ বেশকিছু কারণে এসব মৃত্যু হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক মো. ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেলেন সৌরভ গাঙ্গুলী

দেশে এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত ১১৫% বেড়েছে, হার সাতের কাছে

আপডেট সময় : ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা শনাক্ত বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম। গতকাল রোববার বেলা দুইটায় এই ব্রিফিং হয়। নাজমুল ইসলাম জানান, গত শনিবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে দেশে ৬ হাজার ৩০০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩ হাজার ৩৭৬ জন বেশি। অর্থাৎ এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১৫।
বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকারিভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আজ অথবা কালের মধ্যেই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৯। চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে করোনায় ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এটি এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। দেশে গত কয়েক দিনে শনাক্তের সংখ্যা , হার উভয়ই বাড়ছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকেও শনাক্তের হার ২ শতাংশের নিচে ছিল। গতকাল এটি প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, গত ৩০ দিনের চিত্রের দিকে তাকালে একটি ঊর্ধ্বমুখী চিত্র চোখে পড়ে। সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপে অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে ব্যাপকভাবে। বাংলাদেশে অমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা ও সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য না জানিয়ে বলতে চাই, অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই একেবারেই সুস্থ আছেন। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। তাহলে যেকোনো রোগ দ্রুত সারানো সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, দেশের ১১৮টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকায় সামগ্রিকভাবে কোভিড হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৪ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে খালি আছে ৪ হাজার ১৭৯টি। করোনার বাড়তে থাকা সংক্রমণ হার কমাতে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরেন অধ্যাপক নাজমুল। তিনি বলেন, মাস্ক আমার, সুরক্ষা সবার-এ কথাটি আমাদের স্মরণে রাখতে হবে সব সময়।
দেশে শনাক্তের হার বেড়ে সাতের কাছে, মৃত্যু ৩ : দেশে করোনাভাইরাসের দৈনিক শনাক্তের হার বেড়ে সাতের কাছে পৌঁছেছে। গত এক দিনে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯১ জন, যাতে শনাক্তের হার ৬.৭৮ শতাংশ। শনিবার এ হার ছিল ৫.৭৯ শতাংশ। শুক্রবার ছিল ৫.৬৭ শতাংশ। এতে টানা তিন দিন শনাক্তের হার পাঁচের ওপরেই রইল। এছাড়া গত এক দিনে মারা গেছেন তিনজন। সুস্থ হয়েছেন ২১৭ জন।
গতকাল রোববার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক দিনে ২১ হাজার ৯৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ১ হাজার ৪৯১ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৬.৭৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ জন, যাতে মোট শনাক্তের হার ১৩.৬৫ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ২১৭ জন। এনিয়ে মোট সুস্থ ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৯০৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত এক দিনে করোনা মারা গেছেন তিনজন। এদের একজন পুরুষ ও দুজন নারী। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১০২ জনের। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। এরপর থেকে মাঝখানে দুই দিন কেটেছে মৃত্যুহীন। এছাড়া বাকি সব দিনই মৃত্যু দেখেছে বাংলাদেশ। গত জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত চরম আকার ধারণ করলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে বাড়ছে সংক্রমণ। ইতিমধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দেশেও শনাক্ত হয়েছে। ১০ জনের শরীরে নতুন এই ভেরিয়েন্টটি ধরা পড়েছে। অতি দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে পড়া ভেরিয়েন্টটি নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে গেলে আবার দেশে বিধিনিষেধ জারি হতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে দ্রুতই প্রজ্ঞাপন : গণজমায়েত করতে নিষেধ করা হলেও নাগরিকরা তা অমান্য করায় সার্স কোভ-২ বা কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একইসঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। দেশের বিভাগীয় ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। জাহিদ মালেক বলেন, ‘বলেছিলাম গণজমায়েত কমাতে হবে, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী করতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, কোনো একটা লোকও এসব বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। যার ফলে দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’
দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। আমি আগেই বলেছিলাম, টিকা সংক্রমণ কমায় না, মৃত্যুর হার কমায়। টিকার অভাব হচ্ছে না। কিন্তু মানুষের টিকা নেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আপনারা জানেন দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত এক সপ্তাহ আগেও দেশে দৈনিক দুই থেকে আড়াইশো মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকালও দেশের সংক্রমণের হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। যখন থেকে সংক্রমণ বাড়া শুরু হয়েছে, তখন থেকেই আমরা সতর্কতা নিয়ে প্রচার করে যাচ্ছি।’ দেশে এখন পর্যন্ত আট কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা কার্যক্রম দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এবং চলমান আছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকার অভাব হচ্ছে না। কিন্তু মানুষের টিকা নেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। সে কারণে আমার বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করছি। টিকা দেওয়ার জন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত গিয়েছিলাম। ইউনিয়নে তিনটি ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হতো, এখন সেটাকে ৯টি ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছি, যাতে বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসে। আজ মৃত্যুর হার এত কম কেন? কারণ এ পর্যন্ত পৌনে আট কোটি মানুষ টিকা নিয়েছে। তাই মৃত্যুর হার এত কম।’
বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারিভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আজ অথবা কালের মধ্যেই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর মাধ্যমে পূর্বে যে নির্দেশনাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সারাদেশে বার্তা চলে যাবে। আমরা কেবিনেট থেকে জানতে পেরেছি এর কার্যকারিতাও খুব শিগগিরই শুরু হয়ে যাবে। সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। আর এই মুহূর্তে সংক্রমণের লক্ষণ আমরা দেখছি, সংক্রমণ অতিমাত্রায়, অতি দ্রুত বাড়ছে।’
ক্যান্সারে বছরে মারা যাচ্ছে লাখো মানুষ : দেশে আশঙ্কাজনকভাবে ক্যান্সার বাড়ছে। এই রোগে বছরে এক লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্যান্সারে প্রতি বছরে এক লাখ মানুষ মারা যায়। এখন চিকিৎসাধীন ২০ লাখ।’ জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধীনে ৪৬০ শয্যা বিশিষ্ট সমন্বিত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে মানুষ সব বিভাগীয় শহরেই বিশেষায়িত এসব সেবা পাবেন।’ ভেজাল খাদ্য, মাদক, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনসহ বেশকিছু কারণে এসব মৃত্যু হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক মো. ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।